সারাদেশে বন্যা কবলিত জেলাগুলোর পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে লালমনিরহাটে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। দিনাজপুরে দুই ও কুড়িগ্রামে মৃত্যু হয়েছে একজনের। গাইবান্ধায় বন্ধ হয়ে গেছে দেড়শ’ স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম। ভেঙ্গে পড়েছে সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা।
লালমনিরহাটে গত ৩’দিনে বন্যার পানিতে ডুবে ৯জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলার ৩৫টি ইউনিয়নে প্রায় ৯৫ হাজার পরিবারের অন্তত ৪লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট।
কুড়িগ্রামে সকল নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৯ উপজেলার ৬০ ইউনিয়নের ৭শ’ ৬৩ গ্রামের প্রায় ৪ লাখেরও বেশী মানুষ। ঘর-বাড়ী ছেড়ে বানভাসীরা আশ্রয় নিয়েছে পাকা সড়ক উচু বাঁধ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। মঙ্গলবার আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে পানিতে ডুবে। এই নিয়ে কুড়িগ্রামে দুই দিনে বন্যার পানিতে ডুবে ও সাপের কামড়ে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
টগরাইহাট এলাকায় পানির তোড়ে রেল সেতুর গার্ডার দেবে যাওয়ায় সারা দেশের সাথে রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
বন্যার্তদের জন্য ১৭ লাখ ৫ হাজার টাকা, ৬শ’ ৫১ মেট্রিক টন চাল ও ২ হাজার শুকনো খাবার প্যাকেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা, গোবিন্দগঞ্জ ও সদর উপজেলার ৩৯টি ইউনিয়নের ৫২ হাজার ৭শ’ ৬৬ পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। যে কোন মুহুর্তে ভেঙে যেতে পারে শহর রক্ষা বাঁধ।
জামলপুরেও বাড়ছে বন্যার পানি। জেলার ৫টি উপজেলার ৩২টি ইউনিয়নের প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানি উঠে পড়ায় জামালপুরের সাথে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে জেলার ২৫৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
তিস্তার পানি কিছুটা কমলেও রংপুরের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। যমুনেশ্বরী ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভাঙ্গনে নদী তীরবর্তী মানুষের দুর্ভোগ চরমে।
সিরাজগঞ্জে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। দ্বিতীয় দফায় গত ৪ দিনে পানি বৃদ্ধিতে জেলার ৬টি উপজেলার ৪০টি ইউনিয়নের কয়েকশ’ গ্রামের ৫ লাখেরও বেশী মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।
নীলফামারীতে পানি কমলেও ৪৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছে বানভাসি মানুষ। সোমবার পর্যন্ত ৪ দিনে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে পানিতে ডুবে।
দিনাজপুরে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পানিবন্দী হয়ে আছে প্রায় ৬ লাখ মানুষ। জেলার সাথে গত ৪ দিন ধরে বিভিন্ন স্থানের সড়ক ও রেল যোগাযোগ বিছিন্ন রয়েছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের তীব্র সংকট। বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সেনাবাহিনী রাতভর বন্যা দুর্গত মানুষের সাহায্যে কাজ করে যাচ্ছে। মঙ্গলবারও এ জেলায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে বন্যায় গত তিন দিনে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে গোপালপুরের নলিন পয়েন্টে বিপদ সীমার ১২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে যমুনা নদী রক্ষা বাঁধের টাঙ্গাইল-তারাকান্দী সড়কটির অন্তত ১০ টি স্থানে বাঁধে ছিদ্র দেখা যাওয়ায় বাঁধটি যে কোন সময় ধসে যাওয়ার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
অব্যাহত ভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানি বন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে ৫ উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।
এদিকে অপরিবর্তিত রয়েছে সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি।