এক কোটি মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) বিতরণের মাইলফলক অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের পাসপোর্ট র্যাংকিংয়ে ৬৭তম স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। আগাম ভিসা ছাড়া ৫০টি দেশে ভ্রমণ সুবিধার কথা বিবেচনায় ‘পাসপোর্ট পাওয়ার র্যাংকিং’-এর মাঝামাঝি জায়গায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের পাসপোর্ট।
যে দেশের পাসপোর্টে আগাম ভিসা ছাড়া যতো বেশি দেশ ভ্রমণ করা, সেই হিসাবে তালিকাটি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আর্থিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আর্টন ক্যাপিটাল।
তালিকার সবার উপরে থাকা যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা আগে থেকেই পাসপোর্টে ভিসা না লাগিয়ে ১৪৭ টি দেশ ভ্রমণ করতে পারেন। এর চেয়ে দুটি দেশ কম হিসাবে ১৪৫ দেশে অবাধ ভ্রমণের সুযোগ আছে ফ্রান্স, সাউথ কোরিয়া এবং জার্মানির নাগরিকদের। তারা সম্মিলিত ভাবে তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। তৃতীয় অবস্থানে ইতালি ও সুইডেন, চতুর্থ ডেনমার্ক, সিঙ্গাপুর, ফিনল্যান্ড, জাপান, লুক্সেমবার্গ এবং পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে সুইজারল্যান্ডের পাসপোর্ট।
প্রভাবশালী অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে হংকং তালিকার উপরের দিকেই আছে। তাদের মূল দেশ চীন ৪৫তম স্থানে থাকলেও হংকং-এর বিশেষ পাসপোর্ট আছে ১১তম স্থানে। চীনের পাসপোর্ট ৭৪টি দেশে অন অ্যারাইভাল ভিসা পেলেও হংকং এর পাসপোর্টে ১৩৬টি দেশে যেতে অগ্রিম ভিসা লাগে না।
তালিকার ৫৯তম অবস্থানে থাকা ভারতীয় পাসপোর্টে ঠিক ৫৯টি দেশে পোর্ট এন্ট্রি ভিসা পাওয়া যায়, অর্থাৎ তাদের আগে থেকে ভিসা লাগে না। র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ভারত এগিয়ে থাকলেও পিছিয়ে আছে পাকিস্তান। পাসপোর্ট পাওয়ার র্যাংকিংয়ে তাদের অবস্থান ৭১তম। পাকিস্তানীরা আগাম ভিসা ছাড়া ৪৬টি দেশ ভ্রমণের সুযোগ পায়।
এক কোটি এমআরপির মাইলফলক
‘পাসপোর্ট পাওয়ার র্যাংকিং’-এর ৬৭তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের পাসপোর্টে ৫০টি দেশে আগাম ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করা যায়। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের এক কোটি আট লাখ নাগরিকের এমআরপি আছে। এর বাইরে অপেক্ষমান আছে ২০ লাখ এমআরপি।
পুরনো পাসপোর্টে এমআরপি নেওয়ার তারিখ শেষ হয়েছে ১৫ এপ্রিল। এই সময়ের মধ্যে যারা পুরনো পাসপোর্টের জায়গায় এমআরপি নেন নি তাদের নতুন করে পাসপোর্ট করতে হবে। অপেক্ষমান তালিকায় থাকারা অবশ্য ১৫ এপ্রিলের মধ্যে এমআরপি নিয়েছেন বলে বিবেচিত হবেন।
পাসপোর্টের ইতিহাস
বিশ শতকের প্রথমদিকে পাসপোর্ট বিশ্বব্যাপি স্বীকৃতি লাভ করলেও এর ইতিহাস বেশ পুরনো।
বিশ্বে প্রথম পাসপোর্ট ইস্যু করা হয় ফ্রান্সে, ১৬৪১ সালের ১৮ জুন। তবে এর আগে ব্রিটেনের পার্লামেন্টে ১৪১৪ সালেই পাসপোর্ট সংক্রান্ত আইন পাস হয়েছিলো। আর খ্রিস্ট পূর্ব ৪৫০ সালে পারস্য সভ্যতার রাজারা অন্য দেশে যাওয়ার জন্য ‘রাজকীয় সনদ’ দেওয়ার যে ধারণা গড়ে তুলেছিলেন, সেখান থেকেই পরে পাসপোর্টের ধারণা গড়ে উঠে।
পাসপোর্ট বৃত্তান্ত
বর্তমান সময়ে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়ার কথা পাসপোর্ট না থাকলে কল্পনা করাই যায় না। ভিনদেশী কোনো নাগরিক অন্যদেশে যেতে চাইলে পাসপোর্ট থাকতেই হবে। অন অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা না থাকলে আগে থেকেই পাসপোর্টে থাকতে হবে যে দেশে কেউ যাচ্ছেন ওই দেশের ভিসা।
তবে এমন অনেক দেশ আছে যাদের নাগরিকদের আগে থেকে ভিসা নেওয়ার দরকার পড়ে না। বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিক দেওয়া হয় ভিসা। সেটা অবশ্য প্রভাবশালী দেশ দেখেই দেওয়া হয়। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই প্রভাবশালী দেশের নাগরিকদের প্রবেশাধিকার রয়েছে। এমন সব বিষয় দেখেই যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আর্টন ক্যাপিটাল প্রকাশ করেছে পাসপোর্ট পাওয়ার র্যাংকিং। এই র্যাঙ্কিংয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কোন দেশের পাসপোর্টে আগে থেকেই ভিসা না লাগিয়ে কতো বেশি দেশ ভ্রমণ করা যায়, এবং বিশ্বের কতো দেশে সেই দেশের নাগরিকদের অবাধে যাতায়াতের সুযোগ আছে তার উপর।
(দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট অবলম্বনে)