তৃণমূল পর্যায়ে স্বাধীন সংস্থাকে দিয়ে জরিপ পরিচালনা করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দুই বছর আগে থেকেই নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে। স্বাধীনভাবে পরিচালিত জরিপে দলটি জানতে পেরেছে, বেগম খালেদা জিয়ার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় দ্বিগুণ জনপ্রিয় আর দল হিসেবে বিএনপির চেয়ে প্রায় তিনগুণ জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সূত্রে জানা গেছে, এ জনপ্রিয়তা ধরে রেখেই আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে যেতে চায়। এজন্য সম্ভাব্য সবকিছুই করতে চায় তারা।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরের উদাহরণ টেনে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে ক্ষমতার ধারাবাহিকতার উপর জোর দেবে। সেভাবেই ঠিক হবে নির্বাচনী মূল স্লোগান। নির্বাচনী ইশতেহারও সেভাবে ঠিক করা হচ্ছে। পাশাপাশি চলছে সাংগঠনিক সব প্রস্তুতি।
২০১৮ সালের শেষদিকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনকে সামনে রেখে এরইমধ্যে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী মহল থেকে তৃণমূলসহ সহযোগী সংগঠনগুলোকে নির্বাচনী প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলটির দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে শুরু করে ১৪ দলীয় জোটের শরীক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও পাওয়া গেছে তেমন ইঙ্গিত।
নির্বাচনের আগে দুই বছর সময় থাকার পরও এখনই কেন এতো তোড়জোর?
এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: আওয়ামী লীগের কাছে জনগণের ক্ষমতায়নটাই বড় কথা। আমাদের দলের সাংগঠনিক ভিত এতোটাই গভীর যে নির্বাচন বা আন্দোলনের জন্য আওয়ামী লীগের নতুন কোন প্রস্তুতির প্রয়োজন পড়ে না।
‘তারপরও দুই বছর খুব বেশি সময় নয়,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, জেলা-উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত আমাদের সংগঠনিক কার্যক্রম আরো বিস্তৃত করতে হবে।
‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনের দল। তাই আমরা সব সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকি। দলের সকল ইউনিটকে তাই প্রস্তুতি শুরু করে দেয়ার করার জন্য বলে দেওয়া হয়েছে ।”
নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পর্কে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেণ শিকদার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনের দল। প্রত্যেক রাজনৈতিক দল যারা গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে, তারা অবশ্যই নির্বাচনকে ঘিরেই সব কিছু চিন্তা-ভাবনা করে। দুই বছর কোন কথা নয়। একটি নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরই আরেকটি নির্বাচন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা দরকার।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন: নির্বাচনের মাঝ দিয়েই আমাদের কর্মসূচি বাস্তবায়নের সুযোগ থাকে। দল হিসেবে আমাদের যে উদ্দেশ্য-আমাদের যে আদর্শ সেটাকে বাস্তবায়ন করার জন্য নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুতরাং, নির্বাচন সম্পর্কে দুই বছর নয়– সব সময় আমাদের প্রস্তুতি থাকা উচিত।
‘আর আমরা সে অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণ করছি।’
তবে দুই বছরকে খুব একটা বেশি সময় বলে মনে করছেন না ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন: সামনের বছর নির্বাচনী বছর। ৫ জানুয়ারি (২০১৪) নির্বাচনে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসে। সেই হিসেবে পার্লামেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগেই নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাতে, ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে শুরু করে ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারির আগে যে কোন দিন নির্বাচন হতে পারে।
‘সে হিসেবে কিন্তু দুই বছরও হাতে নেই। তাই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে চাইলে এখনই শুরু করতে হবে,’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবারো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। ওই নির্বাচনে অংশ নেয়নি তার আগের সংসদের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি এবং তাদের জোট। তৎকালীন মহাজোট থেকে বের হয়ে এসে পার্লামেন্টে বিরোধী দলের জায়গা নেয় এরশাদের জাতীয় পার্টি (জাপা)। জাতীয় পার্টিও এরইমধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে।