জেরুজালেমকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দান মধ্যপ্রাচ্যকে সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলায় নিমজ্জিত হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে বলে আশঙ্কা করছে আরব লিগ।
জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী বলে স্বীকার করে নেয়ার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রধান স্পর্শকাতর ইস্যু ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বে যুক্তরাষ্ট্রের নিরপেক্ষ অবস্থানের সমাপ্তি ঘটিয়েছে। আরব লিগের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেছেন, এই সিদ্ধান্তের অর্থ হলো, যুক্তরাষ্ট্রকে এখন আর মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভরসা করা যায় না।
রাজধানী ঘোষণার ঘটনায় পশ্চিম তীর ও গাজা উপকূল জুড়ে চলা বিক্ষোভ ও সহিংসতার তৃতীয় দিনে আরব দেশগুলোর এই জোটের ২২ সদস্য রাষ্ট্র এক বিবৃতিতে এ বিষয়ে একমত হয়।
মিশরের কায়রোতে অবস্থিত সদর দপ্তরে টানা কয়েক ঘণ্টার আলোচনা শেষে বাংলাদেশ সময় রোববার সকাল ৭টায় আরব লিগের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ওই সিদ্ধান্তে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব এবং জর্ডানসহ যুক্তরাষ্ট্রের কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাষ্ট্রও ছিল।
ওই লিখিত সিদ্ধান্ত অনুসারে:
- যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে যে কোনো সম্ভাব্য ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি শান্তি প্রক্রিয়া থেকে অর্থদাতা এবং মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে
- ট্রাম্পের পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়িয়েছে, ক্ষোভ উস্কে দিয়েছে এবং পুরো অঞ্চলকে আরও বেশি সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে
- এ পদক্ষেপের প্রতি নিন্দা জানানোর জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বরাবর অনুরোধ জানানো হবে।
এর আগে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ডাকা জরুরি বৈঠকে ট্রাম্প প্রশাসনের নেয়া পদক্ষেপের কারণে তোপের মুখে পড়ে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হেইলি দাবি করেন, পৃথিবীতে ইসরায়েলের সবচেয়ে বেশি বিরুদ্ধে থাকা পক্ষগুলোর একটি হলো জাতিসংঘ। আত্মপক্ষ সমর্থন করে হেইলি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শুধু অবশ্যম্ভাবী বাস্তবতাটাকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়া বিনষ্ট করার দায় এই আন্তর্জাতিক সংস্থার বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, জাতিসংঘ ইসরায়েল ফিলিস্তিন ইস্যুতে বরাবরই পক্ষপাতিত্ব করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র এখনো ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মাঝে একটি দীর্ঘস্থায়ী শান্তিচুক্তি অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও জানান হেইলি।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের পত্তনের পর বিশ্বের প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কয়েক দশকের আমেরিকান নীতিকে বদলে দিয়েছে বলে বিশ্লেষকরা বলছেন।
তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন: মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে এই পদক্ষেপ ছিল ‘বহুল প্রতীক্ষিত।’
জেরুজালেম শহরটি একই সঙ্গে ইহুদি ও মুসলিমদের জন্য একটি পবিত্র ধর্মীয় নগরী। এ কারণে এর দখল এবং প্রবেশাধিকার নিয়ে বহু বছর ধরেই তীব্র দ্বন্দ্ব চলছে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মাঝে।
ইসরায়েল সবসময়ই জেরুজালেমকে তার রাজধানী হিসেবে বলে এসেছে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিদের দাবি, পূর্ব জেরুজালেম ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী।