দেশে একের পর এক ঘটনায় বারবার হামলার শিকার হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এবং সবচেয়ে বেশি হামলার শিকার হচ্ছেন তারাই।
এর আগে জামায়াতের টার্গেটের মুখে ছিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জঙ্গিবাদের আক্রমণের ধরন বদলেছে, কিন্তু এখনও জঙ্গিদের প্রধান টার্গেট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই।
সর্বশেষ গতকাল শনিবারও সিলেটের জঙ্গি আস্তানার অভিযান পরিচালনার সময় জঙ্গিদের বোমার আঘাতে নিহত হন জালালাবাদ থানার ওসি মনিরুল ইসলাম। সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়িতে শনিবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় জঙ্গিদের বোমা হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এর আগে ওই একই জায়গায় নিহত হন পুলিশের পরিদর্শক চৌধুরী মো. কয়সার।
এর আগেও বার বার আঘাত এসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর।
গত বছরের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি ও রেস্তোরায় হামলা চালায় জঙ্গিরা। সেদিন রাতের জঙ্গি হামলায় ১৭ জন বিদেশিসহ নিহত হন মোট ২২ জন। তাদের মধ্যে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা। জঙ্গিদের গুলি ও বোমায় আহত হন পুলিশের অনেকে।
গুলশান হামলার রেশ না কাটতেই ঈদুল ফিতরের দিন সকালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের ওপর বোমা হামলা এবং গুলি চালায় জঙ্গিরা। গুলশান হামলার পাঁচ দিন পর ২০১৬ সালের ৭ জুলাই সকালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদুল ফিতরের নামাজের নিরাপত্তার দায়িত্বরত অবস্থায় জঙ্গি হামলায় মারা যান কনস্টেবল আনছারুল হক ও জহিরুল ইসলাম। আট পুলিশ সদস্যসহ আহত হন আরো ১৫ জন।
এরপর গত বছরেরই ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরের ৩৩ নম্বর সড়কের ৩৪ নম্বর বাড়িতে পুলিশের অভিযানে জাহাঙ্গীর ওরফে মেজর মুরাদ নামে এক জঙ্গি নিহত হন। এ সময় তার ছোড়া গুলিতে রূপনগর থানার ওসি শহিদ আলমসহ তিন পুলিশ সদস্য আহত হন।
গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর আশকোনার হজ ক্যাম্পের কাছে তিনতলা বাড়ি সূর্যভিলার ‘জঙ্গি আস্তানায়’ প্রায় ১৬ ঘণ্টার পুলিশি অভিযানে দুজন নিহত হয়। নিহত দুই ব্যক্তির মধ্যে একজন পলাতক জঙ্গি সুমনের স্ত্রী তিশা। আরেকজন আজিমপুরের নিহত জঙ্গি তানভীর কাদেরীর ছেলে। এসময় আহত হয় ৩ পুলিশসহ মোট ৪ জন।
২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিএনপি জামায়াতের চালানো ককটেল হামলায় নিহত হন পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ চন্দ্র সরকার।
সেই বছরেরই ১৩ই জানুয়ারি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল বাজারে জামায়াত-শিবির কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে ১০ পুলিশসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হন।
সেই ১৩ই জানুয়ারিতে ভোটবাক্স নিয়ে যাওয়ার সময় কুমিল্লার সদর দক্ষিণ বিজয়পুর ইউপি উপ-নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র থেকে ভোটবাক্স নিয়ে যাওয়ার সময় অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা পুলিশ ও আনসারের উপর হামলা চালিয়ে ৫ পুলিশ ও ৪ জন আনসারকে আহত করে।
২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ময়মনসিংহের নান্দাইল পৌর এলাকার চারআনী পাড়া এলাকার মাদক ব্যবসায়ী ও একাধিক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি শাহাব উদ্দিন ফকিরকে বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে হাতকড়া পরিয়ে থানায় নিয়ে আসার সময় বাড়ির লোকজনসহ এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে আসামিকে ছিনিয়ে নেয়। এ সময় ৪ পুলিশ আহত হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৩ জনকে আটক করে।
গত ১৭ই মার্চ আশকোনা র্যাকব ক্যাম্পেও হামলা চালায় এক জঙ্গি।র্যােব ক্যাম্পে হামলাকারী ঘটনাস্থলেই মারা যায় এবং এ ঘটনায় দুজন র্যাকব সদস্য সামান্য আহত হন। এভাবেই বারবার পুলিশের হামলার শিকার হযেছে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বারবার তারাই কেন টার্গেট হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বলেন, হ্যা তারাই তো বার বার আক্রমণের শিকার হবেন। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ পুলিশরাই এসব সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের পথে প্রথম প্রতিরোধক, সুতরাং তাদের উপরে আঘাত তো আসবেই। জঙ্গিদের আঘাতের ধরনকে আমরা দুইভাগে ভাগ করতে পারি। একভাগ হলো হার্ডওয়্যার এবং অন্যভাগ সফটওয়্যার। শক্তভাবে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে তারা পুলিশের উপর আক্রমণ করে। আর সফটলি যদি শুধুমাত্র ভয় দেখানোর চিন্তা করে থাকে তাহলে হয়তো কোনো এক বিদেশী বা শিক্ষক বা এমন কারও উপর আক্রমণ করে বসে। প্রাথমিকভাবে বলা যায় আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্যই তারা এসব করে। আর সেটাই বারবার হয়ে আসছে।