
বহু আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়া দেশের প্রাচীনতম ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলনকে কেন্দ্র করে যেন ঘুম নেই পদপ্রত্যাশী নেতাদের চোখে। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের শীর্ষ পদসহ গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে নানা রকম ‘যোগাযোগ’ চলছে বিভিন্ন মহলে।
আগামী ৩১ মার্চ ও পহেলা এপ্রিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী এ ছাত্রসংগঠনের ২৯তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
দুই বছর ৭ মাস আগে ২০১৫ সালের ২৬ ও ২৭ জুলাই সর্বশেষ সম্মেলনে প্রত্যক্ষ ভোটে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসেন সাইফুর রহমান সোহাগ ও জাকির হোসাইন।
ভারত-পাকিস্তান ভাগের পর ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে ছাত্রলীগ। আত্মপ্রকাশের পর বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয় সংগঠনটি।
সংগঠনের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীর চাপের মুখে গত মাসে নতুন কাউন্সিলের ঘোষণা দেয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ বর্তমান কমিটি। তারপর থেকেই ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণকারী কথিত সিন্ডিকেটের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ শুরু করে পদপ্রত্যাশী নেতারা। বিশেষ করে যাদের বয়স এখনো আছে, তাদের দৌড়ঝাঁপ লক্ষ্য করার মতো।
তবে ছাত্রলীগের কাউন্সিলের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বলছে, পরিশ্রমী ও মেধাবী এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে জনপ্রিয়, পরিচ্ছন্ন ইমেজ, সাংগঠনিকভাবে দক্ষ নেতারা এগিয়ে থাকবেন। বিশেষ করে বিগত দিনগুলোতে যারা সরাসরি মাঠে থেকে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে; তারাই এগিয়ে থাকবে পদ পাওয়ার দৌড়ে।
টেন্ডারবাজ ও নানা অপকর্মে জড়িতদের নেতৃত্বে আসার সুযোগ নেই স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে ওই নেতারা জানান, যেহেতু সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন; তাই এমন নেতা নির্বাচন করা হবে যাতে নির্বাচনকালীন সময়ের গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করতে পারে।
তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনারও নির্দেশনা রয়েছে; বিতর্কিতরা যেন ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে না অাসতে পারে।
জানা গেছে, ১/১১ এর সময় দলীয় প্রধানের মুক্তি আন্দোলনে ভূমিকার বিষয়টিও বিবেচনায় আনা হবে। নানা চমকের পাশাপাশি কমিটিতে নারীদেরও গুরুত্বপূর্ণ পদে আসার সম্ভাবনা দেখছেন কাউন্সিল সংশ্লিষ্টরা।
সিলেকশনে নেতৃত্ব নির্বাচন?
একটি সূত্র বলছে, ছাত্রলীগের এবারের সম্মেলনে সরাসরি ভোটের পরিবর্তে সিলেকশন পদ্ধতিতে নেতৃত্ব নির্বাচন হতে পারে। তবে প্রক্রিয়া যা-ই হোক না কেন, দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনাতেই তা চূড়ান্ত হবে।
এবাবের নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে তথাকথিত সিন্ডিকেটের প্রভাবমুক্ত দেখতে চান ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীরা। সাধারণত কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলন। সেই সম্মেলন হওয়ার পরপরই অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যাবে কারা আসছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত যোগ্য ও দলের প্রতি নিবেদিতরাই আসবে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে। যারা দুঃসময়ে মাঠে থেকেছে ও সামনে নির্বাচনকে ঘিরে যারা সারাদেশে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে। তারাই আসবে নেতৃত্বে।’
সর্বোপরি নেত্রীর (শেখ হাসিনা) ইচ্ছাই সবার উপরে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে চাইবেন তিনিই আসবেন নেতৃত্বে।’
আড়ালে পদ প্রত্যাশীরা:
পদের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু হলেও সে বিষয়ে প্রকাশ্যে আসতে চাচ্ছে না কোনো নেতাই। আপাতত আড়ালে থাকার কৌশল নিয়েছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পদপ্রত্যাশী নেতা বলেন, নির্বাচনের আগে সাহসী, বিচক্ষণ, দক্ষ নেতা তৈরি করতে কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।
‘অনেক সময় সিনিয়র-জুনিয়র না মেনেই নেতা নির্বাচন করা হয়। ঊর্ধ্বতন নেতাদের কাছে যাকে যোগ্য বলে মনে হয় তাকেই নির্বাচন করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘বিগত কমিটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে অনেক সিনিয়রদের কেউ কেউ এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতে। আবার জুনিয়রদের অনেকে সুযোগ পেয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে।’
সম্মেলনের দায়িত্বে যারা:
এবারের সম্মেলন সাফলভাবে শেষ করতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ মোট ৬ জনকে দেয়া হয়েছে দায়িত্ব। অন্যরা হলেন: দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন এবং কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপি।
এবারের সম্মেলন সাফলভাবে শেষ করতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ মোট ৬ জনকে দেয়া হয়েছে দায়িত্ব। অন্যরা হলেন: দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন এবং কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপি।
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে অসন্তোষ:
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১১(খ) ধারা অনুযায়ী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের মেয়াদ দুই বছর। সে হিসেবে ছাত্রলীগের চলমান কমিটির মেয়াদ ছয় মাস আগেই শেষ হয়েছে। এই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সংগঠনের একটা বড় অংশ।
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১১(খ) ধারা অনুযায়ী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের মেয়াদ দুই বছর। সে হিসেবে ছাত্রলীগের চলমান কমিটির মেয়াদ ছয় মাস আগেই শেষ হয়েছে। এই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সংগঠনের একটা বড় অংশ।
নির্বাচনে অঞ্চলভিত্তিক গুরুত্ব:
জানা গেছে, ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে প্রতিবারের মতো এবারও অঞ্চলভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে। সেই দিক থেকে এখন পর্যন্ত আলোচনায় থাকা প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন; ফরিদপুর অঞ্চল থেকে আরেফিন সিদ্দিক সুজন (সহ-সভাপতি), গোলাম রাব্বানী (শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক), রাকিব হোসাইন (কর্মসূচী ও পরিকল্পনা সম্পাদক), হাফিজুর রহমান (সভাপতি, স্যার এ এফ রহমান হল, ঢাবি) ও আমিনুল ইসলাম বুলবুল (সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, জহিরুল হক হল, ঢাবি)।
জানা গেছে, ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে প্রতিবারের মতো এবারও অঞ্চলভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে। সেই দিক থেকে এখন পর্যন্ত আলোচনায় থাকা প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন; ফরিদপুর অঞ্চল থেকে আরেফিন সিদ্দিক সুজন (সহ-সভাপতি), গোলাম রাব্বানী (শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক), রাকিব হোসাইন (কর্মসূচী ও পরিকল্পনা সম্পাদক), হাফিজুর রহমান (সভাপতি, স্যার এ এফ রহমান হল, ঢাবি) ও আমিনুল ইসলাম বুলবুল (সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, জহিরুল হক হল, ঢাবি)।
বরিশাল অঞ্চল থেকে রয়েছেন; আল-নাহিয়ান খান জয় (আইন সম্পাদক), বরকত হোসেন হাওলাদার (কৃষি শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক) ইয়াজ আল রিয়াদ (ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক), মো: আরিফুল ইসলাম সোহাগ (সহ-সম্পাদক) খাদেমুল বাসার জয় (সহ-সম্পাদক) ও জহিরুল কবির জহির (সহ-সম্পাদক)।
খুলনা অঞ্চল থেকে আলোচনায় রয়েছেন: শেখ মোঃ শওকতুজ্জামান সৈকত (সাংগঠনিক সম্পাদক) , মোতাহের হোসেন প্রিন্স (সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ও ইমদাদ হোসেন সোহাগ (আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-সম্পাদক)।
চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে আলোচনায় আছেন; মাজহারুল ইসলাম শামীম (প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক), সৈয়দ আরাফাত (স্কুলছাত্র বিষয়ক উপ সম্পাদক), খাজা খায়ের সুজন (স্কুলছাত্র বিষয়ক উপ-সম্পাদক) ও সরকার রায়হান জহির (সভাপতি, মুহসীন হল, ঢাবি)।
উত্তরবঙ্গ থেকে রয়েছেন; কামরুজ্জামান বিশ্বাস জিপু (নাট্য ও বিতর্ক বিষয়ক উপ-সম্পাদক), হোসাইন সাদ্দাম (আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক), মেহেদী হাসান সানী (সাধারণ সম্পাদক, মুহসীন হল) ও মোঃ আল মামুন ( মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপ-সম্পাদক)।
সিলেট থেকে আছেন; ইউসুফ উদ্দিন খান (সভাপতি, জিয়া হল, ঢাবি) ও আনিসুল ইসলাম জুয়েল (গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক)।
ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে আলোচনায় রয়েছেন; এ বি এম হাবিবুল্লা বিপ্লব (পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক) ও সোহান খান (সহ-সভাপতি)।
আলোচনায় আসা নারী নেত্রীর মধ্যে রয়েছেন বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি চৈতালী হালদার চৈতী। তার গ্রামের বাড়ি খুলনা অঞ্চলে।
তবে নির্ধারিত বয়স শিথিল করা সাপেক্ষে হলে আলোচনায় রয়েছেন; মেহেদি হাসান রনি (সহ-সভাপতি), সায়েম খান (যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক), নিজামুল ইসলাম (যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক) প্রমুখ।