আসন্ন রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মধ্যেই রাজনীতির ময়দানে যোগ হয়েছে নতুন এক আলোচনা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর এখন নানা প্রশ্ন। কবে হবে উত্তর সিটির মেয়র নির্বাচন? সরকারের মেয়াদপূর্তির শেষ বছরে এসে আদৌ সেই নির্বাচন হবে কি না? আর নির্বাচন যদি হয়ও, তাহলে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন কে পাচ্ছেন? ইত্যাদি সব প্রশ্নই এখন ঘুরছে রাজনৈতিক মহলে।
২০১৫ সালের ৬ মে মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার ৭৮০ দিনের মাথায় মস্তিষ্কের প্রদাহজনিত রোগ ‘সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিস’ এ আক্রান্ত হয়ে গত বৃহস্পতিবার লন্ডনে মারা যান আনিসুল হক।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুযায়ী, বরখাস্ত হলে, মৃত্যু হলে বা কোনো কারণে মেয়র দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে কাউন্সিলরদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতা অনুসারে মেয়র প্যানেলের কোনো সদস্য মেয়রের সব দায়িত্ব পালন করবেন।
আইনে দায়িত্বরত মেয়র মারা যাওয়ার দিন থেকে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে নতুন মেয়র নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শনিবার রাতে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘দায়িত্বরত মেয়র মারা গেলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে উল্লেখ করে এবং মেয়রের পদ শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হয়।
“একই সঙ্গে সেখানে নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনেকে অনুরোধও জানাতে হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশন বৈঠক করে নতুন নির্বাচন নিয়ে তাদের করণীয় ঠিক করে।”
ইসি সচিব আরো জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার পর থেকে নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হলেও ৯০ দিন গননা শুরু হবে মেয়র মারা যাওয়ার দিন থেকেই।
লন্ডনে মেয়র আনিসুল হক অসুস্থ হওয়ার পর গত ৪ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তিনজনের মেয়র প্যানেল মনোনীত করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।
সেখানে জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. ওসমান গণি, ৪ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. জামাল মোস্তফা এবং ৩১, ৩২ ও ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর আলেয়া সারোয়ার ডেইজীকে মনোনীত করা হয়।
রাজধানী ঢাকাকে উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিভক্ত করা পর উত্তর সিটির প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন আনিসুল হক। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিলের ওই নির্বাচনে মাঝপথে বিএনপি বর্জন করলেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত এ প্রার্থী ঘড়ি প্রতীকে ব্যাপক ভোটে নির্বাচিত হন।
টেলিভিশনের এক সময়ের জনপ্রিয় উপস্থাপক এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আনিসুল হক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে শপথ নেওয়ার পর কিছুদিনের মধ্যেই কয়েকটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে নিজেকে নগরবাসীর কাছে প্রিয় মেয়র করে তোলেন।
তার বিভিন্ন সাহসী পদক্ষেপ তাকে আলোচনায় নিয়ে আসে। সরাসরি রাজনৈতিক দলের সদস্য না হয়েও মেয়র নির্বাচিত হওয়া আনিসুল হক সাহসী এক পদক্ষেপের মাধ্যমে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা থেকে ফার্মগেট সংলগ্ন রেলগেট পর্যন্ত সড়কের অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদে করেন। পরবর্তীতে সড়কটির আধুনিকায়ন করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেন তিনি।
শুধুই সড়ক নয় নগরবাসীকে মুক্ত আকাশ দেখার সুযোগ করে দিতে ডিএনসিসি এলাকা থেকে ২২ হাজার বিলবোর্ড অপসারণ করা হয় তারই উদ্যোগে। যানজটের আখড়া হয়ে থাকা শ্যামলী থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত রাস্তাকে পার্কিংমুক্ত ঘোষণা করে যানজটমুক্ত রাস্তায় রূপ দেন মেয়র আনিসুল।
কেবল সড়কেই নয়, নগরপিতার নজর পড়ে নগরীর ফুট ওভারব্রিজে। দৃষ্টিনন্দন সবুজ গাছগাছালিতে সাজিয়ে তোলেন অধিকাংশ ফুট ওভারব্রিজ। তার উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে নির্মিত হয় আধুনিক ঝকঝকে শৌচাগার।
মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের দ্বিতীয় বছরের মধ্যেই নগরের প্রায় সবখানে ডাস্টবিন ও সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন নির্মাণকাজ শেষ করেন এই মেয়র। জেট অ্যান্ড সাকার মেশিনের মত সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নগরের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় উন্নতি ঘটানো হয়।
গত ২৯ জুলাই লন্ডনে যান আনিসুল হক। সেখানে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে মারা যান ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।
১৯৫২ সালের ২৭ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করা আনিসুল হক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর। আশি ও নব্বইয়ের দশকে টিভি উপস্থাপক হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিজিএমইএ ও এফবিসিসিআইর সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন আনিসুল হক।