পরোয়ানা ছাড়া গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ সংক্রান্ত হাইকোর্টের
রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল নাকচ করেছেন সর্বোচ্চ আদালত। সেই রায়ের বিষয়ে কথা বলেছেন আইনজীবীরা। রায়ের নানান দিক এবং সেই বিষয়ে আদালতের নির্দেশনার বিষয়ে জানান তারা।
বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন রায় প্রসঙ্গে বলেন, যে বিষয়ে সরকার আপিল করেছিলো; ১৩ বছর আগে আমরা সে রায় পেয়েছিলাম। ওই রায়ে ৫৪ ধারাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছিলো এবং যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিলো, সেই ব্যাপারে আজকে চূড়ান্ত রায় হলো। তখনকার সরকার যে আবেদন ফাইল করেছিলো, আজকে তা আদালত ডিসমিস করেছেন। হাইকোর্টের নির্দেশনা বহাল রেখেছেন। তবে আগের নির্দেশনার সঙ্গে কিছু সংযোজন হয়েছে। রিমান্ডের নির্দেশনাও বহাল রয়েছে।
আরেক সিনিয়র আইনজীবী আমিরুল ইসলাম বলেন, এই রায় বহাল থাকায় বলা যায়, যারা রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করেন তাদের এই নির্দেশনাগুলো পালন করা রাষ্ট্রীয় কর্তব্য। আইনের শাসন রক্ষা করার জন্য নির্দেশনাগুলো পালন করা আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর প্রথম দায়িত্ব। একজনকে আটক করার পরপরই তাকে জানাতে হবে তাকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে, পুলিশের আইডি কার্ড দেখাতে হবে, তিনি কোথায় আছেন, কিভাবে আছেন তা তার আত্নীয়-স্বজনকে জানাতে হবে, তার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দিতে হবে। এই রায়ের পরে ৫৪ ধারায় কাউকে গ্রেফতার করা যাবে তবে সেক্ষেত্রে এসব নির্দেশনা পালন করতে হবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, এ মামলাটির সূত্রপাত হয়েছিল ১৮ বছর আগে। তখন তিনটি সংগঠনের পক্ষে ও কিছু ব্যক্তির পক্ষে মামলাটি করা হয়েছিলো। মামলার কারণ ছিলো, রুবেল নামের মেধাবী ছাত্র ডিবির হেফাজতে মারা গিয়েছিলো। তখন বিচারপতি হাবিবুর রহমান খান কিছু নির্দেশনা দিলেন। কিন্তু সেসব নির্দেশনা মানা হয়নি।
‘সেই পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি হাইকোর্টে আসে। ৭২ এর সংবিধানে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতারের সময় কিছু রক্ষাকবচ দেওয়া হয়েছিলো। যেমন; গ্রেফতারের পরই আইনজীবী পাওয়ার অধিকার, গ্রেফতারের সময় পুলিশকে পরিচয় দিতে, কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে তা জানাতে, তাকে কোথায় নেওয়া হচ্ছে সেসব আত্নীয়-স্বজনকে জানাতে এবং প্রয়োজনে রিমান্ডের আগে মেডিকেল পরীক্ষা করা। এই ধরণের ১৫ টি নির্দেশনা দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, আপিল বিভাগের রায়ের পর এখন আরো কড়াকড়িভাবে ওইসব নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। বিভিন্ন সময়ে যেসব সুপারিশ দেওয়া হয়েছে সেসব পালন করা হয়নি। কিন্তু নানানভাবে নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। তাছাড়া ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সাংঘর্ষিক বলেও উল্লেখ করেন অনেকে। এখন থেকে সেসব কিভাবে পালন করতে হবে সেই বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।