ডাম্বুলায় আজ আর উৎসব হলো না। বাড়তি উদযাপনেরও কোন দৃশ্য চোখে পড়েনি। রানের দিক থেকে দেশের বাইরে সপ্তম বৃহৎ জয় বলেও এতটুকু আড়ম্বর চোখে পড়ল না। ৯০ রানের জয়ের পর শেষ ব্যাটসম্যানের সঙ্গে মাশরাফি এগিয়ে এসে হাত মেলালেন। অধিনায়কের পথ ধরে অন্যরাও শেষ দুই ব্যাটসম্যানের সঙ্গে হাত মেলালেন। বড় সাদামাটা একটি দৃশ্য। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য অনেক গৌরবের। যে গৌরবের পথ ধরে স্বাধীনতা দিবসের উৎসবে আগাম রং লাগল।
জয়ের পর বাংলাদেশ এখন আর মাতামাতি করে না। জয়ের পর বাংলাদেশ এখন আর ‘সোনার হরিণ’ ধরতে পারার মতো উচ্ছ্বাসে ভাসে না। এখন সবই স্বাভাবিক। বড়দলের আচরণে এই ‘স্বাভাবিক’ হাবভাবই তো ফুটে ওঠা জরুরি। ফুটছেও তাই। বড় সাদামাটা দৃশ্য। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য অনেক গৌরবের।
ওয়ানডে বরাবর বাংলাদেশের আসল শক্তির জায়গা। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে পরতে পরতে সেই শক্তি দেখিয়েছে টাইগাররা। তামিমরা ব্যাট করার সময় ধারাভাষ্যকাররা বারবার বলছিলেন উইকেটে কিছু নেই। অনায়াসে বল ব্যাটে আসছে। অথচ বাংলাদেশ বল করতে নেমে লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের কাঁপিয়ে দিল!
মাশরাফির করা প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে উইকেট হারানোর ধাক্কাই আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি স্বাগতিকরা।
মাশরাফি প্রথম ওভার করার পর দ্বিতীয় ওভারেই মেহেদী হাসান মিরাজকে আক্রমণে আনেন। অভিষিক্ত স্পিনার নিজের প্রথম ওভারে কিছুটা নড়বড়ে থাকলেও সময়ের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেন। বাংলাদেশের রিজাভ-বেঞ্চ কতটা শক্তিশালী এই মিরাজই তার প্রমাণ। টেস্ট শেষ করে খুলনায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। ওয়ানডেতে খেলারই কথা নয়। হঠাৎ কোচ আর অধিনায়কের মনে হলো ছেলেকে দরকার। ব্যস, দলের সঙ্গে যোগ দিলেন তিনি।
ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেট পান। কুশল মেন্ডিস (৪) ধরা পড়েন পরিবর্তিত ফিল্ডার শুভাগত হোমের হাতে। মিরাজের নেয়া দ্বিতীয় উইকেটটা আরো গুরুত্বপূর্ণ। ধুঁকতে থাকা দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করছিলেন দিনেশ চান্দিমাল এবং মিলিন্ডা শ্রীবর্ধনে। দুজনে ৩৪ রানের জুটিও গড়েন। ঠিক এই সময় আঘাত হানেন মিরাজ। অর্ধশতক তুলে নেওয়া চান্দিমালকে (৫৯) সৌম্য সরকারের ক্যাচ বানান। মাঝখানে তাসকিন, মোস্তাফিজ থেকে থেকে আওয়াজ দিয়ে লঙ্কানদের বেসামাল করেন।
মোস্তাফিজ ৮.১ ওভার বল করে ৩ উইকেট নিয়েছেন। রান দিয়েছেন ৫৬। তাসকিন ১ উইকেট নিতে খরচ করেছেন ৪১ রান। অধিনায়ক মাশরাফি ৪০তম ওভারে দুই চার এক ছয় হজম করার আগ পর্যন্ত অপ্রতিরোধ্য ছিলেন। ওই সময় তার বোলিং ফিগার ছিল ৬-২-১৯-২।
এর আগে গল্পটা সাব্বির, তামিম আর সাকিবের। তামিমের সঙ্গে ৯০ রানের জুটি গড়ার পর বিদায় নেন সাব্বির রহমান (৫৬)। অর্ধশতকের পথে শুরুতে সাব্বির স্বাচ্ছন্দ্যে থাকলেও ৪০ পার হওয়ার পর এদিক-ওদিক করতে থাকেন। বারবার সুইপ খেলতে চেষ্টা করেন।
২২তম ওভারের তৃতীয় বলে গুনারত্নের ফুল লেন্থের বলে কাভার ড্রাইভ করতে যেয়ে উপুল থারাঙ্গার হাতে ধরা পড়েন। শর্ট কাভার থেকে দেখার মতো ক্যাচ নেন থারাঙ্গা।
পরের ওভারের প্রথম বলে বিদায় নেন মুশফিকুর রহিম (১)। সান্দাকানের বলে কট এন্ড বোল্ড হয়ে ফিরে যান সাদা পোশাকের অধিনায়ক।
চার বলের ব্যবধানে সাব্বির-মুশফিককে হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়েছিল বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল শতক হাঁকিয়ে সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন। ১২৭ বলে শতকে পৌঁছান তিনি। এটি তার ক্যারিয়ারের অষ্টম শতক। এর আগে ২০১৬ সালের অক্টোবরে সেঞ্চুরি করেছিলেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওই ম্যাচে ১১৮ রান করেন। তামিম এদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব ফরম্যাটে দশহাজার রানের মাইলফলকে পা দেন। শেষ পর্যন্ত ১২৭ করে আউট হন।
এরপর ইনিংস বড় করার কাজ সারেন সাকিব আল হাসান। ৬১ বলে ৫০ করার পর ৭২ রানে সাজঘরে ফেরেন। শেষদিকে সাকিব ফিরে যাওয়ার পর রিয়াদ-মোসাদ্দেক দলকে ৩২৪ রানের বড় সংগ্রহ এনে দেন। মোসাদ্দেক ৯ বলে ২৪ রানে অপরাজিত থাকেন। ৭ বলে রিয়াদের ব্যাট থেকে আসে ১৩।
বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগে কখনো এতো রান করেনি। সব মিলিয়ে এটি টাইগারদের তৃতীয় সর্বোচ্চ। শ্রীলঙ্কায় এত রান করে কোনো দলের হারার নজির নেই। বাংলাদেশও হারেনি। দিন শেষে ক্রিকেটের পাতায় জয়টা সাদামাটা।
কিন্তু বাংলাদেশের জন্য গৌরবের!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৩২৪/৫ ( তামিম ১২৭, সৌম্য ১০, সাব্বির ৫৪, মুশফিক ১, সাকিব ৭২, মোসাদ্দেক ২৪*, মাহমুদউল্লাহ ১৩*; লাকমল ২/৪৫, কুমারা ১/৭৪, সান্দাকান ১/৪৩, গুনারাত্নে ১/৪০)
শ্রীলঙ্কা: ২৩৪ (চান্দিমাল ৫৯, পেরেরা ৫৫; মাশরাফি ২/৩৫, মিরাজ ২/৪৩, তাসকিন ১/৪১, সাকিব ১/৩৩, মোস্তাফিজ ৩/৫৬)