পাহাড় ধসে দেড় শতাধিক মানুষ নিহত এবং অনেক মানুষ আহত হওয়ার পর যোগাযোগ ও জ্বালানিসহ খাদ্যসংকটে পার্বত্য এলাকায় যখন ভয়াবহ বিপর্যয় চলছে তখন আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি পর্যায়ে পবিত্র রমজানে ত্যাগের বদলে ইফতার পার্টির নামে বাহারি আয়োজনে অপচয়ের সংস্কৃতিতে মেতে উঠেছি। পাহাড়ের মানুষের এমন মানবিক সংকটে সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অনেক কম বলেই স্থানীয়রা দাবি করছেন। সেখানে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সরকারি কিছু ত্রাণ সহায়তার খবর পাওয়া গেলেও বেসরকারি উদ্যোগ তেমন একটা নেই বললেই চলে। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের দেয়া একটি স্ট্যাটাস আমরা লক্ষ্য করেছি। নিজের ফেসবুক ওয়ালে দেয়া স্ট্যাটাসে তিনি বলেছেন, ‘ইফতার পার্টির কিছু টাকা বাঁচিয়ে অথবা না করে এবং যাকাত থেকে হলেও সকলে মিলে এই রমজানে পার্বত্য অঞ্চলের বিপর্যস্ত মানুষদের জন্য কিছু সহায়তা পাঠান।’ মানবিক সংকটের সময় তার এই আহ্বানকে আমরা স্বাগত জানাই। একজন প্রতিমন্ত্রী যখন সাধারণ মানুষকে সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তখন এটাও প্রমাণ হয়, শুধু সরকারের পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয় অথবা সরকারের পুরোপুরি সেই সামর্থ্য নেই। তবে, তার আহ্বান আমাদের বিবেককে কিছুটা হলেও নাড়া দেয়া উচিত। হাজার হাজার মানুষ যখন অর্ধাহারে আছে তখন ইফতার পার্টির নামে অপচয় এবং প্রদর্শনী বন্ধ করে আমরা অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে পারি। এক্ষেত্রে সবার আগে বিভিন্ন সরকারি দফতরের অপ্রয়োজনীয় ভুরিভোজের আয়োজন বন্ধ করে তা দুর্গত এলাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া গণমানুষের জন্য রাজনীতি করে বলে যেসব রাজনৈতিক দল দাবি করে, সেসব রাজনৈতিক দলকেও আমরা পাহাড়ের মানুষের বিপদে তাদের পাশে খুব একটা দেখছি না, তাদের ইফতার পার্টি ঠিকই চলছে। প্রায় প্রতিদিন এসব রাজনৈতিক দলকে রাজধানীর বিভিন্ন বিলাসবহুল জায়গায় বিলাসবহুল ইফতার পার্টির আয়োজন করতে দেখা যাচ্ছে। এই সংস্কৃতি থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই বের হয়ে আসতে হবে। তাই সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ সমাজের বিত্তবান সকল মানুষকে মানুষের দরকারের এ সময়ে বিলাসিতা বন্ধ করে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী দুর্গত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াতে আমরা উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।