শিক্ষক সমিতির আন্দোলন, শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন এবং নানাবিধ চাপের মুখে অবশেষে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক ও ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান মাহবুবুল হক ভুঁইয়া তারেককে দেওয়া বাধ্যতামূলক ছুটি প্রত্যাহার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোঃ মুজিবুর রহমান রহমান মজুমদার সই করা এক অফিস আদেশে এ ছুটি প্রত্যাহারের কথা জানানো হয়।
তবে শিক্ষক সমিতির দাবি, কেবল ছুটি প্রত্যাহার করলেই হবে না, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে হওয়া তদন্ত কমিটিও বাতিল করতে হবে। একইসঙ্গে শ্রেণিকক্ষে ওই শিক্ষককে নাজেহাল এবং ফেসবুকে তাকে হুমকি দেওয়ার ঘটনার বিচার করতে হবে। তা না হলে আন্দোলন থেকে তারা সরে আসবেন না।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আবু তাহের চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: আমরা শুনেছি যে ছুটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে কেবল ছুটি প্রত্যাহার করলেই হবে না, তদন্ত কমিটিও বাতিল করতে হবে।
‘তারা যেহেতু ছুটি প্রত্যাহার করেছেন তার মানে তাদের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। তাহলে সেই একই ঘটনায় তদন্ত কমিটি থাকে কী করে?’
তদন্ত কমিটি বহাল থাকলে পরবর্তীতে আক্রোশ থেকে শিক্ষক তারেকের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে এ শিক্ষক নেতা বলেন: তদন্ত কমিটি হয়েছে ভিসির লোক দিয়ে। সিন্ডিকেটেও তার লোক। সুতরাং এই কমিটি বহাল থাকলে শিক্ষক তারেকের বিরুদ্ধে যে কোন ব্যবস্থা নিতে পারে।
‘তাই তদন্ত কমিটি বাতিলসহ শ্রেণিকক্ষে ওই শিক্ষককে নাজেহাল করা এবং ফেসবুকে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ারও বিচার করতে হবে। তা না হলে আমরা আমাদের আন্দোলন থেকে সরে আসবো না।
জাতীয় শোক দিবসে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহবুবুল হক ভুঁইয়া তারেকের বিরুদ্ধে ‘ক্লাস নেওয়ার’ অভিযোগকে কেন্দ্র করে একের পর এক ঘটনা ঘটে প্রতিষ্ঠানটিতে। তদন্ত করার আগে ওই শিক্ষকের কোন ধরনের বক্তব্য ছাড়াই গত ১৭ আগস্ট তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একটি ছাত্র সংগঠনের এক কর্মী তাকে ফেসবুকে প্রকাশ্য হুমকিও দেয়।
শুরু থেকেই ওই শিক্ষকের দাবি তিনি জাতীয় শোক দিবসে কোন ক্লাস নেননি, কয়েকজন শিক্ষার্থী এসে তার কাছে একটি বিষয় বুঝতে চাইলে তিনি তাদের একটি কক্ষে নিয়ে তাদের বোঝাচ্ছিলেন।
ওই শিক্ষকের পক্ষে বিবৃতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদ, উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেয় শিক্ষার্থীরাও। তাকে তদন্ত ছাড়া বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর প্রতিবাদে শিক্ষকদের দ্বারা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করার ঘটনাও ঘটে একাধিক বার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী তারেকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে দাবি করে তার পক্ষে মানববন্ধন করে তার সহপাঠী-শুভাকাঙ্ক্ষীরা্। এমন অভিযোগকে ‘অতিউৎসাহীদের কাণ্ড’ আখ্যায়িত করে সামাজিক মাধ্যমেও লেখালেখি হয়। তারেকের ঘনিষ্ঠজনদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে উপাচার্যের দুর্নীতির বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে লেখালেখি করার কারণেই তাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফাঁসানো হয়েছে।
সবশেষ নিজের নিরাপত্তা শঙ্কায় ওই শিক্ষক থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন শিক্ষক মাহবুবুল হক ভুইয়া তারেক।
নানাবিধ চাপের মুখে অবশেষে অনেকটা বাধ্য হয়েই তারেকদে দেওয়া বাধ্যতামূলক ছুটি প্রত্যাহারের আদেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।