মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের উপর হত্যা-ধর্ষণসহ অমানবিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের (ইউএনএসসি) উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি লিখেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১২ জন নোবেল জয়ী।
এসব নোবেল জয়ী ছাড়াও ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন আরও ১৫ জন প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। চিঠিতে তারা রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদের দ্রুত হস্তক্ষেপ দাবি করেন বলে জানিয়েছে সিএনএন।
মুসলিম ধর্মাবলম্বী সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের উপর মিয়ানমারের সরকারের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযানে হাজারো রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এই হত্যার সংঘটনের পাশাপাশি জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী ৩ লাখ ৭০ হাজার বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান জাইদ রাদ আল হুসেইন মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর এই অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে অভিহিত করেছেন।
বাংলাদেশের নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের সঙ্গে এই আহ্বানে যুক্ত হয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু, শিরিন এবাদী, মালালা ইউসুফজাই, মেইরিড মাগুইর, বেটি উইলিয়াম্স, অসকার আরিয়াস সানচেজ, জোডি উইলিয়াম্স, লেইমাহ বোয়ি, তাওয়াক্কল কারমান।
১৯৯৩ সাল চিকিৎসায় নোবেলজয়ী স্যার রিচার্ড জে রবার্টস এবং ২০০৯ সালে চিকিৎসায় নোবেলজয়ী এলিজাবেথ ব্ল্যাকবার্নও একই আহ্বান জানিয়েছেন।
পাকিস্তানের মানবাধিকার নেত্রী আসমা জাহাঙ্গীর, ভারতের কবি জাভেদ আখতার ও অভিনেত্রী শাবানা আজমীও এই চিঠিতে যুক্ত হয়েছেন।অন্যদের মধ্যে রয়েছেন মালয়েশিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়েদ হামিদ আলবার, ইতালির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমা বোনিনো, নরওয়ের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গ্রো হারলেম ব্রান্ডটল্যান্ড, থাইল্যান্ডের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাসিত পিরোমিয়া, আসিয়ানের সাবেক মহাসচিব সুরিন পিটসুয়ান।
এই মাসে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের আগে রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টি বিশ্বজুড়ে আলোচিত। আলোচনার জন্য সুইডেন ও যুক্তরাজ্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছে।
যে যুক্তিতে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের অস্বীকার করছে, তা ‘আজগুবি’ বলে উড়িয়ে দেন নোবেলজয়ী এই ব্যক্তিরা।
সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমার সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারা সঙ্কট অবসানে কফি আনান নেতৃত্বাধীন ‘রাখাইন অ্যাডভাইজরি কমিশন’ এর সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫শ মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।