ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণের নাম টেস্ট। নিউজিল্যান্ড সফরে ইনজুরির কারণে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে খেলছেন না বাংলাদেশের নিয়মিত অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। সেক্ষেত্রে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন তামিম ইকবাল। এর মধ্য দিয়ে তামিম টেস্টে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের নবম অধিনায়ক হিসেবে আওতাভুক্ত হলেন।
টেস্টে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়কদের নামের তালিকা: ১.নাইমুর রহমান দুর্জয়, ২.খালেদ মাসুদ পাইলট, ৩.খালেদ মাহমুদ সুজন, ৪.হাবিবুল বাশার সুমন,
৫.মোহাম্মদ আশরাফুল, ৬.মাশরাফি বিন মুর্তজা, ৭.সাকিব আল হাসান, ৮.মুশফিকুর রহিম, ৯. তামিম ইকবাল।
বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে এখন পর্যন্ত বেশি টেস্টে অধিনায়কত্ব করেছেন মুশফিকুর রহিম। তাইতো এখন পর্যন্ত টেস্ট জয়ের রেকর্ডও তার অধীনেই। মুশফিকের নেতৃত্বে এখন পর্যন্ত ২৭টি টেস্টের অংশ নেয় বাংলাদেশ। যার মধ্যে পাঁচটিতে জয়, ১৩টিতে পরাজয় ও নয়টি ম্যাচে ড্র করে বাংলাদেশ।তবে কম ম্যাচ খেলে সবথেকে সফল অথিনায়ক বর্তমান বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে দলপতি মাশরাফি মুর্তজা। তিনি মাত্র ১টি টেস্ট নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের মুখ দেখিয়েছিলেন ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের প্রথম টেস্টে।
বাংলাদেশে টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম দলপতি হিসেবে ম্যাচ সেরা ও সিরিজ সেরা হয়েছেন সাকিব আল হাসান। এছাড়াও প্রথম টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে ব্যক্তিগত অনবদ্য ৯৬ রানের ইনিংসটি এখনও সর্বোচ্চ রান।
২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পায় বাংলাদেশ। চলুন দেখে নেই প্রথম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে কার কেমন পারফরম্যান্স।
১. নাঈমুর রহমান দুর্জয়: ২০০০ সালের নভেম্বরে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ দলের অভিষেক টেস্টে নাঈমুর রহমান দুর্জয় অধিনায়ক ছিলেন। ভারতের বিপক্ষে টেস্টের প্রথম ও তৃতীয় ইনিংসে তিনি যথাক্রমে ১৫ ও ৩ রান করেছিলেন।তবে ভারতের প্রথম ইনিংসে তিনি বল হাতে ঘূর্ণি জাদু প্রদর্শন করে ছয় উইকেট নিয়েছিলেন দুর্জয়। তবে ভারতের কাছে নয় উইকেটে ম্যাচটি হেরেছিল বাংলাদেশ।দুর্জয় বাংলাদেশকে সাতটি টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যার মধ্যে ছয়টিতে হার ও একটিতে ড্র রয়েছে।
২. খালেদ মাসুদ পাইলট: ২০০১ সালের ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফরে টেস্ট অধিনায়কত্বের সুযোগ পান খালেদ মাসুদ পাইলট। অধিনায়ক হিসেবে টেস্ট অভিষেক টেস্টে দুই ইনিংসেই ৬ রান করেন পাইলট। তবে উইকেটের পেছনে দু’টি ক্যাচ নিয়েছিলেন তিনি। টেস্টটি নিউজিল্যান্ডের কাছে বাংলাদেশ ইনিংস ও ৫২ রানের ব্যবধানে হেরেছিল।পাইলট বাংলাদেশকে ১২ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যার মধ্যে সবকটিতেই হেরেছে বাংলাদেশ।
৩. খালেদ মাহমুদ সুজন: ২০০৩ সালের এপ্রিলে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে প্রথম অধিনায়কত্ব করেন খালেদ মাহমুদ সুজন।টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে অভিষিক্ত সুজন প্রথম ইনিংসে করেন ৬ রান এবং তৃতীয় ইনিংসে করেন ১ রান।১৭ ওভার বল করেও কোনো উইকেটের দেখা পায়নি খালেদ মাহমুদ সুজন। টেস্টটি সাউথ আফ্রিকা ইনিংস ও ৬০ রানের ব্যবধানে জিতে নেয়।সুজন বাংলাদেশকে নয়টি টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যার মধ্যে সবকটিতেই হেরেছে বাংলাদেশ।
৪. হাবিবুল বাশার: ২০০৪ সালে জিম্বাবুয়ে সিরিজে টেস্ট অধিনায়কত্ব পান হাবিবুল বাশার সুমন। হারারে স্পোর্টস গ্রাউন্ডে দুই ইনিংসেই গোল্ডেন ডাক ‘শূণ্য’ রানে আউট হয়েছিলেন সুমন। তবে প্রথম ও তৃতীয় ইনিংসে দুটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। টেস্টটি জিম্বাবুয়ে ১৮৩ রানে জিতে নেয়। সুমন বাংলাদেশকে ১৮টি টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যার মধ্যে একটি জয়, ১৩টি হার ও ৪টি ড্র রয়েছে।
৫. মোহাম্মদ আশরাফুল: ২০০৭ সালের জুনে শ্রীলঙ্কা সফরে প্রথম টেস্ট অধিনায়কত্ব করার সুযোগ পান আশরাফুল।কলম্বোতে প্রথম ইনিংসে তিনি ৭ ও তৃতীয় ইনিংসে তিনি ৩৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। আর দ্বিতীয় ইনিংসে আশরাফুল ১৩ ওভার বল করে কোনো উইকেট পাননি। টেস্টটি শ্রীলঙ্কা ইনিংস ও ২৩৪ রানের ব্যবধানে জিতেছিল। আশরাফুলের অধীনে বাংলাদেশ ১৩টি টেস্ট ম্যাচ এ অংশ নেয়, যার মধ্যে ১২টি হার ও একটি ড্র।
৬. মাশরাফি মুর্তজা: বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের অভিষিক্ত অধিনায়কদের মধ্যে সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। মাত্র একটি টেস্টের নেতৃত্ব দিয়ে একটিতেই জয় পায় মাশরাফির বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথম টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পায় মাশরাফি। প্রথম ইনিংসে ৩৯ রান করলেও তৃতীয় ইনিংসে ‘শূণ্য’ রানে আউট হতে হয় ক্যাপ্টেন ম্যাশকে।তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ দশমিক ৩ ওভারের বেশি বল করতে পারেননি ম্যাশ। ফিল্ডিংয়ের সময় আঘাত প্রাপ্ত হয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয় মাশরাফি।
৭. সাকিব আল হাসান: ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে মাশরাফির ইনজুরির জন্য দ্বিতীয় টেস্টেই অধিনায়ক করা হয় সাকিব আল হাসানকে।টেস্ট দলপতি নির্বাচিত হয়েই প্রথম টেস্টে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন সাকিব।শুধু কি তাই অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স দিয়ে ম্যাচ সেরা ও সিরিজ সেরার পুরস্কার নিজের করে নেয় সাকিব। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে ১৬ আর চতুর্থ ইনিংস ম্যাচ জেতানো অনবদ্য ৯৬ রানের ইনিংস খেলেন সাকিব।বল হাতে প্রথম ইনিংসে তিন উইকেট ও তৃতীয় ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়ে ক্যারিবীয়দের নিজেদের মাঠে নাস্তানাবুদ করেন সাকিব। সাকিবের নেতৃত্বে নয়টি টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। যার মধ্যে আটটি হার ও একটি জয়।
৮. মুশফিকুর রহিম: ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোম সিরিজে প্রথম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে ডেব্যু হয় মুশফিকুর রহিমের। এই উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যানের নেতৃত্বে প্রথম টেস্টটি ড্র করে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ৬৮ রানের ইনিংসের পর তৃতীয় ইনিংসে ২ রানে অপরাজিত থাকেন মুশি।এছাড়া দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেটের পেছনে একটি ক্যাচও লুফে নেয় তিনি। মুশফিকের নেতৃত্বে এখন পর্যন্ত ২৭টি টেস্টের অংশ নেয় বাংলাদেশ। যার মধ্যে পাঁচটিতে জয়, ১৩টিতে পরাজয় ও নয়টি ম্যাচে ড্র করে বাংলাদেশ।
৯. তামিম ইকবাল: ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজে মুশফিকের ইনজুরির জন্য দ্বিতীয় টেস্টে অধিনায়কত্বের সুযোগ পান পান ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল। চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ম্যাচে ওপেনিংয়ে ব্যাট করতে নেমে পাঁচ রানেই সাজঘরে ফিরে গেছেন তামিম ইকবাল। এখন পর্যন্ত অভিষেক টেস্ট অধিনায়কের মধ্যে বাংলাদেশের কেউ সেঞ্চুরি করতে পারেনি। তাইতো তৃতীয় ইনিংসে তামিমের জন্য একটি সুযোগ থাকছেই ডেব্যু অধিনায়ক হিসেবে রেকর্ড বইয়ে নিজের নাম তোলার।