আমি ইজাজ খান স্বপন। এবারের ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার্ড বাই সেভেন আপ’ এর পরিকল্পনা ও পরিচালনার দায়িত্বে আছি। এটি বাংলাদেশে মিউজিকের উপর দেওয়া একমাত্র অ্যাওয়ার্ড। প্রথমবারের মতো এই দায়িত্ব চ্যানেল আইয়ের পক্ষ থেকে আমাকে দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠান। অতিথিদের দাওয়াতপত্র পাঠানো হয়েছে। আমি অতিথিদের ফোন করে দাওয়াতপত্র পেয়েছেন কি না খোঁজ নিচ্ছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় দুপুরে অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্ঠা গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানকে ফোন দেই। উনি আমার খুবই কাছের মানুষ। গানের নানান বিষয়ে আমি তার দ্বারস্থ হই। বানান নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি তৈরি হলে তাকে স্মরণ করি।
সালাম দিয়ে জানতে চাইলাম ‘কেমন আছেন?’ উনি বললেন, ‘ভালো নেই স্বপন।’ আমি বললাম, ‘কেন ভালো নেই?’ উনি বললেন, ‘তোমাদের কারণেই ভালো নেই।’ আমি শুনে চমকে উঠলাম। জানতে চাইলাম আমাদের কী কারণে ভালো নেই? উনি তখন জানালেন পুরো বিষয়টা। চ্যানেল আই থেকে তাকে যে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে সেখানে তার নামের বানান ভুল। লেখা হয়েছে মোঃ: রফিকুজ্জামান। এবং নামের আগে ‘জনাব’ বা এ জাতীয় কোনো সম্বোধন নেই। তিনি বললেন, ‘আমার নামের বানান কেউ ভুল লিখলে আমি খুবই অপছন্দ করি। আমি মনে করেছি পাশের বাসার রফিকুজ্জামানকে পাঠানো হয়েছে। তাই আমি প্যাকেটটা তাকে দিয়ে দিয়েছি।’
আমি বললাম- ‘ভাই, এমন ভুল তো হওয়ার কথা না।’তিনি বললেন- ‘এমন ভুল এর আগে হয়নি। এখন কেন হলো?’ উনি কিছু কথা বললেন। কথা বলে নিশ্চিত হলাম, আসলে যার কারণে এমনটা হয়েছে বলে মনে করছেন, তিনি আমাদের চ্যানেল আইয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ নন। সর্বসাধারণের আস্থাভাজন মিডিয়া হাউজ চ্যানেল আইতে এমন ঘটনা হয়ও না। এটা আমি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানকে বললাম। আরও বললাম, ‘আমি ফোন করেছি আমন্ত্রণপত্র পেলেন কি না সেটা জানার জন্য।’
এরপর নানা বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা হলো। এর কিছুক্ষণ পর আমার হাতে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের লেখা একটা ফেসবুক স্ট্যাটাসের প্রিন্ট কপি আসল। আমি এটা দেখে একটু হতভম্ব হলাম। পুরোটা পড়ে তাকে আবার ফোন দিলাম। বললাম- ‘ভাই, স্ট্যাটাসটা কি আমার সঙ্গে কথা বলার আগে দিয়েছেন না পরে দিয়েছেন?’ তিনি বললেন, ‘তোমার সঙ্গে কথা বলার একটু আগে দিয়েছি।’আমি সব স্বীকার করে নিয়ে বললাম, ‘আমাকে আরেকটু সময় দেন, আমার টিমের সঙ্গে একটু কথা বলে জানাচ্ছি।’ আমার টিমকে ডেকে বললাম, ‘একজনের নামের বানান ভুল যাবে কেন? কেন ভুল গেল?’ তখন তারা একটা অ্যালবাম নিয়ে আসলো। আব্দুল্লাহ আল মামুনের ‘তোমার জন্য’অ্যালবামের তিন ও ছয় নম্বর গান মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের লেখা। অ্যালবামটিতে তার নামের বানান ‘মোঃ রফিকুজ্জামান’লেখা হয়েছে। আমাদের টিমের ছেলেরা সেটাকেই রেফারেন্স হিসেবে নিয়েছে বলে আমাকে জানালো। আমি পরিস্কার হলাম বিষয়টা।
কী কারণে আমাদের এই অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল হয়েছে তা আমি আবারও ফোন দিয়ে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানকে জানালাম। আমি এও বললাম, ‘আমি কিভাবে আপনার কাছে ক্ষমা চাইতে পারি।’ তিনি আমাকে বললেন- ‘স্বপন, তোমাকে আমি ভালো জানি। ক্ষমা চাইতে হবে না। আমি শুধু মাত্র আমার ক্ষোভের কথা জানালাম।’ এটা হয়তো গুণী মানুষের বিনয়। তাই আমি পুরো বিষয়টির জন্য ক্ষমা চাইলাম।
এরপর পুরো বিষয়টি নিয়ে আমরা কিছুক্ষণ কথা বললাম। এবং আমি উনাকে মিউজিক অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে আসার অনুরোধ জানালাম। তিনি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন।
আমি মনে করি বিষয়টা সম্পূর্ণ পরিষ্কার। এ নিয়ে আমাদের কোনো ভুল বোঝাবুঝি নেই। আমি আশা করছি গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান আমাদের অনুষ্ঠানে আসবেন। চ্যানেল আইয়ের সাথে উনার যে সুসম্পর্ক তা বজায় থাকবে।