কনফেডারেশন্স কাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মেক্সিকোকে ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত করে ফাইনালের টিকিট কেটেছে জার্মানি। গতি, স্কিল এবং দলীয় বোঝাপড়ার পতাকা উড়িয়ে কনক্যাকাফ চ্যাম্পিয়নদের দাঁড়াতেই দেয়নি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
আগামী রোববারের ফাইনালে চিলির মুখোমুখি হবে জোয়াকিম লোর তরুণ যোদ্ধারা। রোনালদোর পর্তুগালকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে টানা দুই কোপা আমেরিকা শিরোপাজয়ী চিলি।
কাপের লড়াই শুরুর আগে অদ্ভুত এক বাজি খেলেছিলেন জার্মানির কোচ জোয়াকিম লো। অনভিজ্ঞ ও তরুণদের নিয়ে সাজিয়েছিলেন দল। কিন্তু পুরো আসরজুড়ে সেই অনভিজ্ঞ যোদ্ধারাই বহন করে চলছেন চিরাচরিত জার্মান পাওয়ার ফুটবলের মশাল। সেমিতে তাই পাত্তাই পেল না মেক্সিকো।
বৃহস্পতিবার সোচিতে অদ্ভুত ফর্মেশনে সেজে মাঠে নেমেছিল দুদলই। জার্মানিকে ৩-৬-১ ফর্মেশনে খেলিয়েছেন লো, আর মেক্সিকোর দলটা ছিল ৪-৫-১ ফর্মেশনে সাজানো।
রেফারি ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজাতে না বাজাতেই আক্রমণে গেছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ঠিক যেন ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিতে ব্রাজিলের বিপক্ষে ৭-১ গোলে জয়ের ম্যাচের মতই আক্রমণাত্মক শুরু। যাতে ভর করে দ্রুতই দুবার প্রতিপক্ষের জাল খুঁজে নেন জার্মানরা।
ম্যাচ শুরুর ৬ মিনিটেই প্রথম গোল আদায় করে জার্মানি। মেক্সিকান ফুটবলাররা ম্যাচের গতি বুঝে ওঠার আগেই হতভম্ব হয়ে পড়েন। আক্রমণ ভাগের ডান দিক দিয়ে বিপজ্জনক গতিতে উপরে উঠে যান বেঞ্জামিন হেনরিক্স। প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের একটু বাইরে আনমার্কিং অবস্থায় থাকা লিও গোরেৎজেকে বাড়িয়ে দেন বল। দুর্দান্ত সেই ক্রস থেকে মেক্সিকান গোলরক্ষক গিলের্মো ওচোয়াকে মাটি ঘেঁষা শটে পরাস্ত করেন গোরেৎজে।
প্রথম গোলের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই আবার মেক্সিকানদের জালে বল। আট মিনিটে এবারও গোলদাতা সেই গোরেৎজে। প্রথম গোলের মতই আক্রমণ ভাগের ডানপ্রান্ত থেকে বলের যোগান পেয়েছেন জার্মান যুব দল থেকে উঠে আসা এই উদীয়মান মিডফিল্ডার। এবারের পাসটি পেয়েছেন টিমো ওয়ের্নারের থেকে। আর প্রথম গোলের মতই ওচোয়াকে সহজেই পরাজিত করেছেন শালকেতে খেলা তরুণ।
ম্যাচের ১৬ মিনিটে ব্যবধানটা আরও বাড়াতে পারতো জার্মানি। কনক্যাকাফ অঞ্চলের চ্যাম্পিয়নদের নড়বড়ে ডানপ্রান্ত ব্যবহার করে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন টিমো ওয়ের্নার। প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে ফাঁকায় পেয়েও জালমুখ খুলতে ব্যর্থ হন এই ফরোয়ার্ড।
দুই গোল হজম করে গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে মেক্সিকো। চেষ্টার ফল হিসেবে একাধিক সহজ সুযোগ পেয়েছে ১৯৯৯ সালের শিরোপাজয়ীরা। ম্যাচের ৩৬ মিনিটে হাভিয়ের হার্নান্দেজের বাড়ানো দুর্দান্ত পাস জিওভান্নি দস সান্তোস ফ্লিক করে জার্মান গোলরক্ষক টের স্টেগেনের মাথার ওপর দিয়ে মাঠের বাইরে পাঠান। ৩৯ মিনিটে হেক্টর হের্রেরার বুদ্ধিদীপ্ত ফ্রি-কিক কোন রকমে ঠেকিয়ে দিয়েছেন সেই স্টেগেন।
প্রথমার্ধে নিজেদের ভুলের মাশুল গুনে ২-০ তে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায় মেক্সিকো।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আবারও দারুণ আক্রমণ শানিয়েছে জার্মানি। ম্যাচের ৫২ মিনিটে টিমো ওয়ের্নার একক প্রচেষ্টায় চেষ্টা করেছিলেন গোল আদায় করার। শেষ পর্যন্ত তার দুর্বল শট পোস্টের বাম ঘেঁষে বেরিয়ে গেলে ব্যবধানটা তখন বাড়েনি।
তবে ৫৭ মিনিটে আর ব্যর্থ হননি ওয়ের্নার। বামপ্রান্ত থেকে জোনাস হেক্টরের পাসে মেক্সিকোর ডি-বক্সের জটলার ভেতর বল পেয়ে সহজেই প্রতিপক্ষের জালে জড়িয়ে দেন ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা ওয়ের্নার।
পরে পিছিয়ে থেকেও মেক্সিকো বারবার চেষ্টা করেছে গোল ব্যবধান কমানোর। কিন্তু তাদের সামনে বাধার দেয়াল হয়ে দাঁড়ান টের স্টেগেন। ম্যাচের ৭১ মিনিটে লাইয়ুনের একটি জোরাল শট দারুণ দক্ষতায় প্রতিহত করেন বার্সা গোলরক্ষক।
ম্যাচের ৮৯ মিনিটে সান্ত্বনার গোলটি পায় মেক্সিকো। মার্কো ফ্যাবিয়ানের ফ্রি-কিক দলের ব্যবধানটাই শুধু কমিয়েছে। অবশ্য ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে বদলি ফরোয়ার্ড আমিন ইয়োনেস জার্মানির ব্যবধান আরেকদফা বাড়ালে অসহায় আত্নসমর্পন করা ছাড়া আর উপায় ছিল না মেক্সিকোর।