মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে খুলনার বটিয়াঘাটা থানার সাতজনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে জমা দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হেলালউদ্দিন সাত ভলিউমের ১ হাজার ২৭ পাতার এই প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে জমা দেন।
প্রাথমিকভাবে মামলায় মোট ৮ জন আসামী থাকলেও একজন মারা যাওয়ায় তাকে বাদ দিয়ে বাকি সাতজনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
মামলার আসামীরা হলেন: আমজাদ হোসেন হাওলাদার (৭৫), মো. মোজাহার আলী শেখ (৬৫), সহর আলী সরদার (৬৫), মো. আতিয়ার রহমান শেখ (৭০), মো. মোতাসিন বিল্লাহ (৮০), মো. কামাল উদ্দিন গোলদার (৬৬), মো. নজরুল ইসলাম (৬০)। এদের মধ্যে নজরুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নির্যাতন, হত্যা, অপহরণ, লুণ্ঠন এবং অগ্নিসংযোগের মোট ৪ টি অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তাদের বিরুদ্ধে ৩ মুক্তিযোদ্ধাসহ ৮ জনকে হত্যা, ৪ থেকে ৫টি বাড়ির মালামাল লুণ্ঠন এবং অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার ধানমণ্ডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তদন্তের সারমর্ম তুলে ধরেন সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক।
তিনি বলেন,‘আমজাদ হোসেন হাওলাদার তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখিত চারটি অপরাধেই অভিযুক্ত হয়েছেন। তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কনভেনশন মুসলিম লীগ এবং পরবর্তীতে জামায়াতের সমর্থক ছিলেন। অন্য ৬ আসামীও মুক্তিযুদ্ধকালে কনভেনশন মুসলিম লীগ এবং জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক ছিলো।’
অভিযুক্তরা খুলনার বটিয়াঘাটা এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর চালানো অমানবিক আক্রোশের চিত্র উঠে এসেছে ট্রাইব্যুনালের ৫৩ তম এই প্রতিবেদনে।
ট্রাইব্যুনালের সমন্বয়ক বলেন,‘খুলনা-বাগেরহাট অঞ্চলে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সরাসরি অংশগ্রহণ ছাড়াও এমনিতেই রাজাকাররা স্বপ্রণোদিতভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বর্বর আক্রমণ চালিয়েছে।’
আসামীদের বিরুদ্ধে আনা চারটি অভিযোগেও এই নিষ্ঠুরতা ফুটে উঠেছে।
১ নম্বর অভিযোগ
১৯৭১ সালের ১০ অগাস্ট আমজাদ হোসেন হাওলাদার সহ ৪-৫জন রাজাকার বটিয়াঘাটার মাছালিয়া গ্রামের শান্তি লতা মন্ডলের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বিনোদ মন্ডলকে অবৈধভাবে আটক, নির্যাতন, অপহরণ ও গুলি করে হত্যা করে।
২ নম্বর অভিযোগ
৭১ এর ১৫ অক্টোবর আসামীরা বটিয়াঘাটার পূর্বহালিয়া গ্রামের চাপরাশী বাড়িতে হামলা চালিয়ে নিরস্ত্র হরিদাস মজুমদারকে অবৈধভাবে আটক, নির্যাতন ও গুলি করে হত্যা করে।
৩ নম্বর অভিযোগ
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ২১ অক্টোবর আসামীরা হিন্দু সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করতে বটিয়াঘাটার সুখদাড়া গ্রামে হামলা চালিয়ে নিরীহ নিরস্ত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের ৪ জনকে হত্যা, ৪-৬টি বাড়ির মালামাল লুণ্ঠন এবং অগ্নিসংযোগ করে।
৪ নম্বর অভিযোগ
৭১ এর ২৯ নভেম্বরে এই আসামীরা বটিয়াঘাটার বারোআড়িয়া গ্রামে হামলা চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধা জ্যোতিষ মন্ডল এবং আব্দুল আজিজকে গুলি করে হত্যা করে।
খুলনার রাজাকার তালিকা, ট্রেনিং তথ্যাদি এবং সংবাদপত্রের তথ্যের ভিত্তিতে আসামীদের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর এই মামলার তদন্ত শুরু হয়। মামলায় সাক্ষীর সংখ্যা ৪১ জন।