প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের কারণে অনেক বেশি সমাদৃত। তবে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেই ঐতিহ্যের জায়গায় আঘাত করে যেন নতুন যুগের সূচনা করেছে। সম্প্রতি নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে রাত আটটার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ভিত্তিক সকল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে তাদের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে রাত আটটার মধ্যে সকল সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে নিজেদের অফিস কার্যক্রম শেষ করার আদেশ দেয়ার পর এই ‘সান্ধ্য আইন’ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষার্থীসহ সবার মাঝেই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে নিজের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যটাস দিয়েছেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্রাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম হেড শরিফুল হাসান।
ঢাবির সাবেক ছাত্র ও টিএসসির একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরিফুল হাসান ওই স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কী নতুন যুগ সূচনা হলো? এই বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান নিয়ে অামি যতোটা গর্ব করতাম তার চেয়েও বেশি করতাম এখানকার সংস্কৃতি, মুক্ত পরিবেশ, অাড্ডা এসব নিয়ে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন দেখি সেই জায়গায় হাত দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সংগঠনকে টিএসসসির পরিচালক চিঠি দিয়েছেন, রাত আটটার পর টিএসসিতে থাকা যাবে না। চিঠির ভাষা দেখলে মনে হয় টিএসসি অার তার সংগঠনগুলোকে কোন করপোরেট অফিস বানাতে চায় বর্তমান প্রশাসন। অাসলে বোধহয় অামাদের প্রশাসন জানে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে নিয়ন্ত্রনে অানা গেলে সব নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এ তো সেই পাকিস্তানি ভাবনা। নিরাপত্তাজনিত সমস্যা থাকলে সেটা দূর করুন। কেউ অপরাধ করলে সেটা বন্ধ করুন। তাই বলে টিএসসসি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা কেন?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র এবং টিএসসির একটি কালচারাল সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। টিএসসকে নিয়ন্ত্রণের যে কোন চেষ্টার বিরুদ্ধে বর্তমান শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হবে বলে অামি বিশ্বাস করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচাতেই সেটা করতে হবে। অামি চাই টিএসসিতে সারারাত অাড্ডা হবে, গান হবে। মানুষ তৈরি হওয়ার কারখানা হবে টিএসসি। সব শুভ শক্তির জয় হোক।’’