মেয়াদ শেষ হওয়ার পাঁচ মাস আগে কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছাত্রলীগ। ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট বর্তমান কমিটির আকার না বাড়িয়ে নিষ্ক্রিয়দের বাদ দিয়ে মাঠে থাকা সক্রিয়দের কমিটিতে স্থান দিয়ে ‘শিগগিরই’ কমিটি পুনর্গঠনের কথা জানিয়েছে সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্ব।
যোগাযোগ করা হলে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘আমাদের কমিটির আকার বাড়বে না, বরং কমতে পারে। পদধারীদের মধ্যে যারা চাকরি পেয়েছেন, বিবাহিত বা রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন তাদের বাদ দিয়ে যারা মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় তাদের স্থান দেওয়া হবে।’
চ্যানেল আই অনলাইনকে একইরকম কথা জানিয়েছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন।
‘যারা চাকরি পেয়েছেন তাদের পোস্ট এমনিতেই ফাঁকা হয়ে গেছে। এছাড়া রাজনৈতিকভাবে যারা নিষ্ক্রিয় রয়েছেন তাদের বাদ দিয়ে নতুনদের কমিটিতে জায়গা দিয়ে কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। আকার বাড়বে না,’ বলে জানান জাকির।
ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহজাদার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বর্তমান কমিটির পাঁচজন সদস্য সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছেন, একজন মারা গেছেন। চাকরিতে যোগ দেওয়াদের মধ্যে একজন সহ-সভাপতি এবং দুইজন করে সম্পাদক এবং উপ-সম্পাদক রয়েছেন। গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় তার পদটিও ফাঁকা রয়েছে। তাই বর্তমান কমিটিতে ‘শূন্য’ পদ রয়েছে ৬টি।
তবে, কতোজন বিবাহিত বা কাদেরকে রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় বিবেচনা করা হচ্ছে সে সম্পর্কে সঠিক কোন তথ্য দিতে পারেননি সংগঠনটির দায়িত্বশীল কেউ।
২০১৫ সালের ২৬-২৭ জুলাই সম্মেলনের মাধ্যমে দুই বছরের জন্য নেতৃত্বে আসেন সাইফুর রহমান সোহাগ ও এসএম জাকির হোসাইন। এর প্রায় সাত মাস পর ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গঠন করা হয় ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট পুর্ণাঙ্গ কমিটি। গঠনতন্ত্রে অবশ্য ২৫১ সদস্য বিশিষ্ট পুর্ণাঙ্গ কমিটির কথা উল্লেখ আছে।
ঢাবি হল কমিটিতে ‘পদবঞ্চিত’দের জন্য সুখবর নেই
ছাত্রলীগের সবচেয়ে সক্রিয় শাখা ধরা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল শাখাগুলোকে। মাঠের রাজনীতি এবং জনবলের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী শাখা হচ্ছে হল কমিটি।
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর একযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের আংশিক কমিটি ঘোষণার আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও পদবঞ্চিতদের ব্যাপারে এখনো কোন সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় বা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এর আগের কমিটিগুলোর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, হল কমিটি ঘোষণার এক সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্র এবং বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি সম্প্রসারণ করে ‘বঞ্চিত’দের জায়গা দেওয়া হয়।
ছাত্রলীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, যারা মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় থেকেও বিভিন্ন সমীকরণের কারণে হল কমিটির নেতৃত্বে আসতে পারেননি তাদের ব্যাপারে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতারা ‘তাগাদা দেওয়ার পরও’ খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
তবে এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেছেন সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের (পদবঞ্চিতদের) ব্যাপারে শতভাগ সিরিয়াস। তাদের ব্যাপারটা ভাবা হচ্ছে।’
সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন জানান, খুব শিগগিরই তাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিয়ে কমিটি পুনর্গঠন করা হবে।
‘খুব শিগগিরই’ বলতে ঠিক কবে নাগাদ তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসবে সে ব্যাপারে সরাসরি কিছু বলেননি সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবিদ আল হাসান এবং সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেছেন, যোগ্যতা থাকার পরেও যারা হল কমিটির নেতৃত্বে আসতে পারেননি তাদের ব্যাপারে কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছেন। তাদের আশা খুব দ্রুতই একটা সিদ্ধান্তে আসা যাবে।
এত নেতার জায়গা কোথায়?
কেন্দ্র এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটি গঠনের পর সবগুলো হলেই তৈরি হয় শীর্ষ চার নেতার একাধিক অনুসারী যারা হল শাখার নেতৃত্বে আসার চেষ্টা চালায়।
সূত্র জানায়, প্রতিটি হলে অন্তত দশজন করে হল শাখার প্রার্থী ছিলেন যারা নতুন কমিটি হওয়ার পর নিজস্ব কর্মী পরিচালনা ছাড়াও মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। এমন নেতার সংখ্যা প্রায় দেড় শ’। চার নেতার ৩৬ জন অনুসারী নেতৃত্বে আসায় স্বাভাবিকভাবেই বাকিরা নিজেদের বঞ্চিত ভাবছেন।
এই ‘পদবঞ্চিত’ নেতার সংখ্যা শতাধিক। এই বিপুল সংখ্যক নেতাকে কীভাবে ‘পুনর্বাসন’ করা হবে সে ব্যাপারে এখনও কোন সিদ্ধান্ত না আসায় তাদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। কেউ কেউ এখনও রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও অনেকেই পড়াশুনায় মন দিয়েছেন, কেউ বা অভিমান থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এড়িয়ে চলছেন।
কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির আকার না বাড়ায় শূন্য পদের সংখ্যা মাত্র ছয়টি। বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি বর্ধিত করার কথা বলেছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি ১৫১ সদস্যের হওয়ার কথা থাকলেও গত বছরের ২১ মে ঘোষণা করা হয় ২০১ সদস্যের কমিটি। ওই কমিটিতে এরইমধ্যে ৫০ জন সদস্য বেশি রয়েছেন।