বিজ্ঞানসহ সবক্ষেত্রে নতুন কিছু করার জন্য কৌতুহল থাকতে হবে এবং প্রশ্ন করার মাধ্যমে জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে হবে। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে গবেষক সবার মনে প্রশ্নের উদ্রেক হলেই নতুন কিছু হওয়ার পথ খুলে যাবে। তবে গবেষণার জন্য প্রয়োজন তহবিল। গবেষণায় তহবিল বিনিয়োগ করাদের সব সময় লাভের আশা করলে হবে না। কারণ গবেষণা অনেক সময় রাতারাতি কোন সমস্যা দূর করার উপায় বের করবে এমন নয়। কিন্তু গবেষণায় জানার পরিমাণটা বৃদ্ধি পায়। লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়াদের সামনে ব্যর্থতা আসবে, প্রতিবন্ধকতা আসবে। হতে পারে এসবই বাধা-বিঘ্নতাই একদিন সফলতার পথটায় নিয়ে যাবে। অন্যের পরামর্শ না শুনে বই পড়তে হবে, বইয়ের সুড়ঙ্গ দিয়ে সমস্যা আসবে, সমাধান আসবে।
আজ সোমবার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা এবং সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কথাগুলো বলেছেন ২০০৮ সালে রসায়নে নোবেল জয়ী মার্কিন অধ্যাপক মার্টিন শালফি।
নিজের পরিবার এবং ব্যক্তিগত জীবনের উত্থান-পতন এমনকি ঘুম থেকে উঠে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোয়ন পেয়েছেন শোনা দিনটির কথাও বলেন অকপটে। তিনি তো বটেই তার স্ত্রীও ভাবতে পারেননি তিনি নোবেল পাবেন!
বিজ্ঞানীরা গুরুগম্ভীর, এমন প্রচলিত ধারণাকে বদলে রসিকতায় ভরা কথপোকথনে ক্যান্সার চিকিৎসায় বায়োলজিক্যাল মার্কার হিসেবে গ্রিন ফ্লুরোসেন্ট প্রোটিনের (জিএফপি) সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া মার্টিন শালফি নোবেল পুরস্কারকে ‘মজার একটি পুরস্কার’ বলে মন্তব্য করেন।
দেশের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির ২১ তম সমাবর্তনে বক্তব্য দেয়ার একদিন পর সাংবাদিকদের সঙ্গে বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা দেশ থেকে মেধা পাচার, গবেষণা প্রতিবন্ধকতা, জলবায়ু ঝুঁকি নিয়ে খোলাখুলি আলাপ করেন তিনি।
‘ব্রেন ড্রেন’ বা মেধা পাচার প্রসঙ্গে এই বিজ্ঞানী বলেন: বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা দেশ থেকে মেধাবীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোতে যেতে চায়। কারণ সেসব দেশে তাদের জন্য সুযোগ বেশি। এখন অবশ্য সব দেশ থেকে মেধাবীদের উন্নত দেশের দিকে যাওয়ার প্রবণতা কমছে কারণ দেশগুলোও এখন মেধাবীদের জন্য কাঙ্ক্ষিত সুযোগ দিতে শুরু করেছে। দেশগুলোর শিক্ষা ব্যবস্থাতেও গুণগত পরিবর্তন আসছে। আসলে এখানে শিক্ষার চেয়েও বড় হচ্ছে শিক্ষিতদের জন্য সুযোগ নিশ্চিত করা।
গবেষণার সুযোগ প্রতিকূলতা নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন: শিক্ষার্থী-গবেষকদের মনে প্রশ্নের উদ্রেক হতে হবে, প্রশ্ন করতে হবে। আমাদের শরীরের একমাত্র স্বচ্ছ অঙ্গটি কী, এটা নিয়ে কেউ প্রশ্ন করেছে? এই অঙ্গটি হচ্ছে আমাদের চোখ,কর্নিয়া। চোখ তো স্বচ্ছ হবেই, এমন না ভেবে কেউ প্রশ্ন করতে পারে কেন স্বচ্ছ, তাহলেই নতুন একটি বিষয়ে জানার সুযোগ আসবে।
তিনি আরও বলেন: গবেষণার জন্য অবশ্যই তহবিল প্রয়োজন। সেটা সরকারি কিংবা বেসরকারি হতে পারে। অনেক সময় গবেষণা মানেই রাতারাতি কিছু প্রাপ্তি ঘটবে এমন নয়। গবেষণাও ব্যর্থ হয়। তবে প্রত্যেক গবেষণা থেকেই জানার পরিমাণ বৃদ্ধি হয়। গবেষকদের মনে, শিক্ষার্থীদের মনে প্রশ্নের উদ্রেক হতে হবে। গবেষণায় আগ্রহীদের জন্য সুযোগ-অবকাঠামো নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য বর্তমানে এবং অদূর ভবিষ্যতে সবচেয়ে বড় উদ্বেগ জলবায়ু পরিবর্তন।
অথচ জলবায়ু ঝুঁকিকে অনেক উন্নত দেশ স্বীকার করতে চাইছে না জানিয়ে এব্যাপারে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন: আমি জলবায়ু বিজ্ঞানী নই। তবে জলবায়ু ঝুঁকি আদৌ আছে কিনা এটা নিয়ে কোন প্রশ্নের সুযোগ নেই, এটা বাস্তবতা।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক বেলাল আহমেদের উপস্থাপনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম, উপ-উপাচার্য জি ইউ আহসান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক প্রমুখ।
সংক্ষেপে মার্টিন শালফি
১৯৪৭ সালের ১৫ জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর ইলিনয়ে জন্ম গ্রহণ করেন মার্টিন শালফি। যথেষ্টা টাকা-পয়সা না থাকায় তার বাবা স্কুলের গণ্ডি পার হতে পারেননি, মা পারেননি কলেজের গণ্ডি পার হতে। তবে তাদের ছেলে ‘মার্টি’ গণিতকে ভালোবাসা শুরু করেছিলেন একজন উৎসাহিত করা শিক্ষকের অনুপ্রেরণায়।
গবেষণায় শুরু থেকেই আগ্রহ নিয়ে মার্টিন পিএইচডি করেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। গবেষণায় কয়েকবার ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়েননি তিনি। অবশেষে গবেষণায় অধ্যাবসায়ের স্বীকৃতি এবং ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন পদ্ধতির পরিচয় দিয়ে ২০০৮ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।
বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করছেন। অবসর সময়ে ভালোবাসেন গিটার বাজাতে। কারণ তার বাবা ছিলেন সুপরিচিত গিটারিস্ট এলি শালফি।
ছবি: সাকিব রায়হান