ভোট হচ্ছে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের একটি সামাজিক পদ্ধতি। এ প্রসঙ্গে গ্রীক দার্শনিক প্লেটো বলেন, “রাজনীতিতে অংশগ্রহণ” তথা ভোটে না যাওয়া বা ভোট দিতে “অস্বীকার করার একটি শাস্তি হল যে আপনি আপনার নিকৃষ্ট লোকদের দ্বারা শাসিত হবেন।” বিভিন্ন রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের মতে, গণতান্ত্রিক সমাজে নির্বাচনে ভোট দেয়া একটি মৌলিক অধিকার এবং নাগরিক কর্তব্য।
অস্ট্রেলিয়াতে নির্বাচনে সকলের ভোটে দেয়া বাধ্যতামূলক। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করে ইউ.এস. ট্রেজারিতে দায়িত্বপালনকারী সহকারী সচিব পাবলিক অ্যাফেয়ার্স মনিকা ক্রাউলি বলেন, ভোট দেয়া যতটা একটি মানসিক কাজ, ততটাই এটি একটি বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ। অন্যদিকে, মিনেসোটার অ্যাটর্নি জেনারেল কিথ এলিসন বলেন “ভোট না দেয়া একটি প্রতিবাদ নয়, এটি একটি আত্মসমর্পণ।” ভোটের বিষয়ে সাবেক যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, “দ্যায়ার ইস নো সাচ থিং অ্যাজ এ ভোট দ্যাট ডাজেন্ট মেটার। ”
ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ বলেন, “ভোট দেয়ার মাধ্যমে, আমরা আমাদের কণ্ঠকে কোরাসে যুক্ত করি যা মতামত এবং কর্মের ভিত্তি তৈরি করে।” আব্রাহাম লিঙ্কন বলেছেন, “ব্যালট বুলেটের চেয়ে শক্তিশালী।” বিশিষ্ট ব্যক্তিদের এসব অভিমত পর্যালোচনা করে আমরা কেন ভোট দিতে যাবো তার যুক্তি যুক্ত কারণ প্রদর্শন করতে পারি।
প্রথমত ভোট নাগরিক দায়িত্বের বহিঃপ্রকাশ। ভোট গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ব্যক্তির সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের একটি উপায়। এটি একটি নাগরিক কর্তব্য যা সমাজ , অঞ্চল বা দেশের ভবিষ্যত নির্মাণে সহায়তা করে। নীতি এবং শাসনের উপর প্রভাব বিস্তারে ভোট একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভোট দেওয়ার মাধ্যমে, ব্যক্তিরা নেতা এবং প্রতিনিধিদের নির্বাচন করতে অবদান রাখে যারা সমাজকে প্রভাবিত করে । ভোট জনগণকে তাদের সরকারের দিকনির্দেশনা এবং অগ্রাধিকার সম্পর্কে বলার সুযোগ দেয়।
দ্বিতীয়ত ভোট জনগণের মতামতকে প্রতিনিধিত্ব করে। ভোট দান নিশ্চিত করে যে, সরকার জনগণের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এবং স্বার্থ প্রতিফলিত করে। এটি কর্মকর্তাদের নির্বাচনে সাহায্য করে যারা বিভিন্ন সম্প্রদায় এবং জনসংখ্যার উদ্বেগ এবং মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করবে।
তৃতীয়ত ভোট জবাবদিহিতার দ্বার উন্মুক্ত করে। ভোটে নির্বাচিত কর্মকর্তাদের তাদের কর্মের জন্য জবাবদিহি করা হয়। নাগরিকরা তাদের প্রতিনিধিদের কর্মক্ষমতা নিয়ে অসন্তুষ্ট হলে, তারা আগামী নির্বাচনের সময় ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে।
অধিকার সুরক্ষা করবার জন্য আমাদের উচিত ভোট দেয়া। যেহেতু, ভোট ব্যক্তি অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার একটি উপায়। নির্বাচিত কর্মকর্তারা সংবিধান সমুন্নত রাখা এবং নাগরিকদের অধিকার রক্ষার জন্য দায়ী এবং ভোটদান এই প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার একটি মাধ্যম।
সামাজিক পরিবর্তন আনার জন্য ভোট হতে পারে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। প্রার্থীদের সমর্থন করে এবং নিজের মূল্যবোধের সাথে সংযুক্ত নীতিগুলিকে সমর্থন করে, ব্যক্তিরা সামাজিক ন্যায়বিচার, সমতা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলির অগ্রগতিতে অবদান রাখতে পারে।
গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা: নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যত বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করবে, গণতন্ত্র তত শক্তিশালী ও প্রতিনিধিত্বশীল হবে। ভোট গণতান্ত্রিক শাসনের একটি ভিত্তিপ্রস্তর, এবং সক্রিয় নাগরিকের অংশগ্রহণ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের অখণ্ডতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ভোটার একটি প্রতীকী মূল্য আছে। ভোটদান সমতা এবং অংশগ্রহণের গণতান্ত্রিক নীতির প্রতীক। এটি ব্যক্তিদের জন্য একটি সম্মিলিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় অবদান রাখার একটি উপায় যা তারা যে সমাজে বাস করে তা গঠন করে।
রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমাদের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি কি তার প্রতিফলন ঘটে ভোটের মাধ্যমে। কিছু ক্ষেত্রে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি দেশের গণতন্ত্রের স্বাস্থ্য এবং প্রাণবন্ততার সূচক হিসাবে ভোটারদের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারে। উচ্চ স্তরের নাগরিক সম্পৃক্ততা বিশ্ব মঞ্চে একটি জাতির অবস্থানকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
আমরা যদি বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই তবে আমাদের উচিত ভোট দিতে কেন্দ্রে যাওয়া। তাতে করে সরকাররের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আস্থা খুঁজে পাবে। তারা আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব সম্পর্ক বিস্তারে সুযোগ সৃষ্ট করবে। আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরা তাদের জনগণকে বোঝাতে পারবে কেন তারা বাংলাদেশ থেকে পণ্য কিনবে কিংবা জনশক্তি আমদানি করবে। কেন তারা আমাদের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে তার একটি শক্ত যুক্তি খুঁজে পাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ। আমাদের উন্নয়ন ধারাকে অব্যাহত রাখতে ভোট দিতে যাওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
নির্বাচনের ফলাফল অর্থনৈতিক নীতি, সামাজিক কর্মসূচি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা সহ সমাজের বিভিন্ন দিকের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। ভোটদান ব্যক্তিদের তাদের সম্প্রদায় এবং দেশের ভবিষ্যত দিকনির্দেশনা সম্পর্কে বলার অনুমতি দেয়। আমার জানি বিভিন্ন দলের বিভিন্ন কর্মসূচি থাকে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে। আমাদের সেগুলো জানা এবং সেগুলোর আলোকে ভোট দেয়া হলে আমাদের আগামী প্রজন্ম দেশকে একটি শান্তির রাজ্য হিসেবে বসবাসের সুযোগ পাবে। যেমন আমরা শুনছি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তরুণদের স্বপ্ন দেখাতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।
আমার জানি বিভিন্ন দলের বিভিন্ন কর্মসূচি থাকে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে। আমাদের সেগুলো জানা এবং সেগুলোর আলোকে ভোট দেয়া হলে আমাদের আগামী প্রজন্ম দেশকে একটি শান্তির রাজ্য হিসেবে বসবাসের সুযোগ পাবে। যেমন আমরা শুনছি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তরুণদের স্বপ্ন দেখাতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। ভোটে অংশ গ্রহণ না করলে যারা নির্বাচিত হবেন তারা শক্তিহীন অনুভব করে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে ব্যর্থ হতে পারেন এবং আগামী প্রজন্মকে হতাশায় নিমগ্ন করতে পারে। এবং তাতে করে দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে।
নির্বাচন সম্পর্কে আব্রাহাম লিঙ্কন আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন, “নির্বাচন জনগণের। এটা তাদের সিদ্ধান্ত। যদি তারা আগুনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে তাদের পিঠ জ্বালিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তাদের কেবল তাদের ফোস্কা ধরে বসে থাকতে হবে।” অর্থাৎ ভোট বর্জন হবে পিঠ জ্বালিয়ে ফোসকা ধরে বসে থাকা। সুতরাং, সিদ্ধান্ত আপনার।
আমরা যদি মর্যাদার জীবন যাপন করতে চাই তবে, আমাদের উচিত নাশকতা ও নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত ত্যাগ করে ভোট দিতে যাওয়া। যারা নির্বাচন বর্জন করবার মারাত্মক ভুলটি করেছেন তারাও ব্যালটে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারেন। তারা কোনো মার্কায় ভোট না দিয়ে সেই কাজটি করতে পারেন। তাতে করে কেউই জাল ভোট দিয়ে নির্বাচনকে নস্যাৎ করতে পারবেন না।আমার এই অভিমতটি হয়তো অর্থহীন মনে হতে পারে। নির্বাচনে ভোট না দিতে আসলে সেই সিদ্ধান্তটি আরও অর্থহীন ও ক্ষতিকারক সেটা উপলব্ধি করা উচিত।
সামগ্রিকভাবে, ভোট হচ্ছে নাগরিক ক্ষমতায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অবদান রাখার একটি উপায়। নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে, ব্যক্তিরা যে সমাজে তারা বাস করতে চায় তা গঠনে ভূমিকা পালন করে। ভোট বর্জনকারীদের উচিত তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ভোট দেয়া।
২৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়েছে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানের রাজনৈতিক ইশতেহার। জাতির পিতার কন্যা এক অসাধারণ নেতৃত্ব দিয়ে কেবল বাঙালির কলঙ্ককে মুক্ত করেননি, বরং তার নেতৃত্বে আমরা ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে সমর্থ হয়েছি। গর্বিত বাঙালি তার নেতৃত্বে বিশ্ব রাজনৈতিক কূটকৌশলকে পরাস্থ করে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন নিজস্ব অর্থায়নে। ঢাকা শহরের এক প্রান্ত থেকে ওপর প্রান্তে ছুটছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মেট্রো রেল। আর সেই মোহনীয় দৃশ সারা বিশ্ব দেখছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে।
আজ কোটি কোটি মানুষের মনে প্রশান্তি ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবাদে। সেই সদুর আরব কিংবা যুক্তরাষ্ট্রর আকাশ অতিক্রম করে যখন প্রিয়জনের মুখটি আমরা দেখতে পাই , নাম মাত্র মূল্যে আমরা প্রিয়জনের কণ্ঠস্বর শুনতে পাই তখন আমাদের মানসপটে ভেসে উঠে একটি সদা হাস্যোজ্বল মুখ ঐতো আমাদের আপা শেখ হাসিনা যিনি কেবল নিজে হাসেন না সকলের মুখে হাসি ফোটাতে দিন রাত পরিশ্রম করছেন।
সেই অসাধারণ মহিয়সী আমাদের আপা আজ সকল ষড়যন্ত্র নাশকতাকে পরাস্থ করে জাতির সামনে স্মার্ট বাংলাদেশে গড়বার স্বপ্ন রূপকল্প নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। তিনি আশা ব্যক্ত করেছেন আগামী দিন গুলোতে তরুণদের জন্য প্রায় দেড় কোটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন। ২০০৯ সালে তিনি ক্ষমতায় এসে বলেছিলেন প্রতিটি ঘরে ঘরে একটি চাকরি দেবেন। সেই প্রতিশ্রুতি অতীতের মত অন্তসার শুন্য মিথ্যা ভাওতাতে পরিণত হয়নি। বাংলার জনগণ আজ জেনে গেছে, মিথ্যা আশা দেখিয়ে ভোট নিয়ে লুটপাটের রাজনীতি করেন না আমাদের আপা। তিনি স্বপ্ন পূরণের দূত। তার প্রতিভাময় নেতৃত্বে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে ৭ তারিখ ভোট দিতে যাবো।
ভোট নিয়ে যে ষড়যন্ত্রের কালো মেঘ বাংলার আকাশে জমে ছিল তা ইশতেহার ঘোষণার মধ্য দিয়ে কেটে গেছে।খবর জানতে শিবচর, ফরিদপুর, পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, এবং ঢাকা -৮, ঢাকা -৪ আসনের নির্বাচনী প্রচারণা সভাতে অংশ নিয়েছিলাম। জনগণের মাঝে ভোটের আমেজ ও উৎসব সৃষ্টি হয়েছে। জনগণ নাশকতা,অবরোধ,হরতাল এবং অসহযোগিতার ডাক প্ৰত্যাখান করেছে। এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের দিকে। মিডিয়া অপ্রচার ভীতিকে পরাস্থ করে নির্বাচিত হবে আগামী -২০২৪ থেকে ২০২৯ সরকার। মানুষ হাসি মুখে স্বাগত জানাচ্ছে তাদের নেতাদেরকে। জনগণের মুখে কেবল একটি শ্লোগান শেখ হাসিনার সরকার, বার বার দরকার।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)