বাণিজ্যের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বিধিনিষেধের কোনো সম্পর্ক নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কোনো বিশেষ সুবিধা দেয়নি। সাড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ঢুকতে হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), কানাডা ও যুক্তরাজ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে, যেটা যুক্তরাষ্ট্র দেয়নি।
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। তৃতীয় আন্তর্জাতিক নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা সম্মেলনের উদ্বোধন শেষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা দেওয়ার পর ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস এ তথ্য জানায়।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা বিধিনিষেধ সরকার কীভাবে দেখছে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করে খুব ভালো করেছে। তারা বলেছে, যারা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করবে, তাদের বিধিনিষেধ দেবে। সরকার বলেছে, আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। বাধা দিতে চাই না।’
সালমান এফ রহমান আরও বলেন, প্রধান বিরোধী দল বলছে, তারা নির্বাচন হতে দেবে না। তার মানে কীভাবে হতে দেবে না? একটাই পথ—ভায়োলেন্স (সহিংসতা)। ভিসা বিধিনিষেধ জারি হয়েছে যারা নির্বাচনে বাধা দেবে তাদের জন্য। বিধিনিষেধের তালিকায় তো অপজিশনের (বিরোধী দল) নামও আছে।
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এ বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বলেন, ‘পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না, সেটা তাদের ব্যাপার। আমরা সংবিধান মেনে নির্বাচন করব। আমাদের নির্বাচন কমিশন শতভাগ স্বাধীন। তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, আমরাও সেটাই চাই।’
এরআগে তৃতীয় আন্তর্জাতিক নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন: দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও শিল্পকারখানা এবং নগরায়ন হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অপরিকল্পিতভাবে কৃষিজমি ভরাট করে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সুষ্ঠু ও পরিকল্পিত নগরায়ন অত্যন্ত জরুরি। এখনও দেশের উপজেলা পর্যায়ে কীভাবে নগরায়ন হবে, সে বিষয়ে পরিকল্পনা হয়নি। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে এবং ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। এতে দেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়েও নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে, যা মোকাবিলায় সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে নিজের তরুণ বয়সে দেখা রাজধানীর চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন: আমি তরুণ বয়সে যখন বোতলের পানি কিনে খাওয়ার কথা বলতাম, তখন মানুষ অবাক হতো আর মানুষ হাসত। অথচ এখন জেলা-উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও যেকোনো অনুষ্ঠানে বোতলজাত পানি থাকাটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এর ফলে প্রচুর বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। এই সমস্যাগুলোর ব্যাপারে সুষ্ঠু পরিকল্পনার প্রয়োজন। এ পর্যায়ে সঠিকভাবে নগরায়নকে বিস্তৃতকরণে বিআইপির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান বা ড্যাপ নামে অভিহিত রাজধানীর নগর উন্নয়ন পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা পক্ষ রয়েছে। তারা সবাই নিজেদের স্বার্থরক্ষা করতে চায়। তারপরও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রস্তাব আমলে নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য ড্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছে।
শনিবার সকালে ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য স্থানিক পরিকল্পনা’ স্লোগানকে মূল প্রতিপাদ্য ধরে তিন দিনব্যাপী শুরু হয় তৃতীয় আন্তর্জাতিক নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা সম্মেলন।
এবারের আইসিইউআরপি’র লক্ষ্য দেশের বিভিন্ন খাতে নিয়োজিত পরিকল্পনাবিদ, পেশাজীবী, শিক্ষক, গবেষক এবং নগর ও পল্লী উন্নয়নে জড়িতদের একত্রিত করা, যাতে একে অপরের সঙ্গে নানামূখী ধারণা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করার মাধ্যমে দেশের নগরায়ণ সম্প্রসাণে কার্যকরী ভ‚মিকা রাখতে সক্ষম হয়।
সম্মেলনে বিআইপির প্রেসিডেন্ট পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন, উপদেষ্টা পরিষদের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. আকতার মাহমুদ ও বিশেষ অতিথি জার্মান দূতাবাসের হেড অব ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফ্লোরিয়ান হলেন উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রতিপাদ্য উপস্থাপন করেন বিআইপির জেনারেল সেক্রেটারি পরিকল্পনাবিদ ও আইসিইউআরপি’ ২০২৩-এর আহ্বায়ক শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান।
সম্মেলেনে বিআইপির অংশীদার বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং দেশী-বিদেশী উন্নয়ন অংশীদার।