বিষাক্ত সীসার ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাস করতে এবং এর পরিমাণ কেমন তা জানতে বাংলাদেশে জরিপ পরিচালনা করবে যুক্তরাষ্ট্র।
বুধবার ২৪ জানুয়ারি ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সুইজারল্যান্ডে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম চলাকালে ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) এর অ্যাডমিনিস্ট্রেটর সামান্থা পাওয়ার ইউনিসেফের ২০২৪ মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভের মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের রক্তে সীসার মাত্রা জরিপ করার জন্য ১১ লাখ ডলার ঘোষণা করেছেন।
সীসার বিষক্রিয়ায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে শিশুরা। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে প্রতি দু’শিশুর একজন আক্রান্ত হয় এই বিষক্রিয়ায়। ব্যাপকভাবে অবহেলিত অথচ সমাধানযোগ্য এই সংকট মোকাবেলায় আরও সহায়তা ও পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পাওয়ার।
বাংলাদেশে ইউএসএআইডি এর মিশন ডিরেক্টর রিড এশলিম্যান বলেন, সীসার সংস্পর্শ বাংলাদেশের শিশুদের কতটা আক্রান্ত করে তা পরিমাপ করা এবং সারাদেশে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের এই বিষাক্ত পদার্থ থেকে রক্ষার পদক্ষেপ নিতে উদ্যোগটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বব্যাপী সীসার বিষক্রিয়ায় প্রতি বছর কমপক্ষে ১.৬ মিলিয়ন মানুষ মারা যায়, যা এইচআইভি এবং ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর চেয়েও বেশি। এসব মৃত্যুর বেশিরভাগই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ঘটে। সীসা একটি শক্তিশালী নিউরোটক্সিন, কোনও মাত্রাতেই এর সংস্পর্শে আসা নিরাপদ নয়।
সীসার বিষক্রিয়া মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে, শিক্ষা অর্জনকে ব্যাহত করতে পারে এবং ভবিষ্যতের উৎপাদনশীলতা হ্রাস করতে পারে। ধনী এবং দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে শিক্ষাগত ব্যবধান এক পঞ্চমাংশ বাড়াতে ও বিশ্ব অর্থনীতি কমপক্ষে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে সীসার সংস্পর্শে আসার কারণে। তা সত্ত্বেও, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে সীসা প্রশমনের প্রচেষ্টায় দাতাদের অর্থায়নের পরিমাণ প্রতি বছর প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডলার।
নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলো যাতে রঙ, মশলা এবং প্রসাধনীর মতো ভোগ্যপণ্যে সীসার ব্যবহার কমাতে বাধ্যতামূলক নীতি প্রণয়ন ও প্রয়োগ করতে পারে, তার সমর্থনে একটি বিশ্বব্যাপী উদ্যোগের পরামর্শ দেন অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পাওয়ার। শুধু এই পদক্ষেপগুলোই প্রতি বছর বাঁচাতে পারে কয়েক হাজার জীবন, প্রতিরোধ করতে পারে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধকতা এবং লক্ষ লক্ষ শিশুর শিক্ষাগত ফলাফল উন্নত করতে পারে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ভোগ্যপণ্য থেকে সীসা অপসারণের ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টা ব্যয়সাশ্রয়ী ও সীমিত তহবিল দিয়ে অনেক জীবন বাঁচানোর একটি বড় সুযোগকে প্রতিফলিত করে।
এই লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে, অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পাওয়ার আরও ঘোষণা করে, ইউএসএআইডি সীসাযুক্ত রঙ নির্মূল করার জন্য বৈশ্বিক জোটে যোগ দেবে। এই জোটের অংশীদারিত্ব প্রায় ৪০টি দেশে সীসাযুক্ত রঙের উপর আইনত বাধ্যতামূলক নিয়ন্ত্রণকে সমর্থন করছে। ইউএসএআইডি এই জোটে যোগদানকারী প্রথম দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন সংস্থা, যেখানে এটি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য সরকারি সংস্থার সদস্য যেমন ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) এবং এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সি (ইপিএ) এর অংশীদার হবে।
ইউএসএআইডি-এর প্রচেষ্টাগুলো সীসামুক্ত ভবিষ্যতের জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং ভাইস-প্রেসিডেন্ট হ্যারিসের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। যুক্তরাষ্ট্রে এবং সারাবিশ্বের সব মানুষকে সীসার সংস্পর্শ থেকে রক্ষা করা বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনের অগ্রাধিকার।