চট্টগ্রামে স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কলকারখানা ও কন্টেইনার ডিপো নিয়ে নতুন করে চিন্তা করার সময় এসেছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে লোভী মুনাফার বলি হচ্ছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। উন্নয়নের মহাসড়কে সাধারণ শ্রমিকের জীবন যেন মধ্যযুগীয় বলিপ্রথার কথা মনে করিয়ে দেয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজ আসাদুজ্জামান খান বলেছেন: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কার গাফিলতি আছে, সেটি বের করতে উচ্চ পর্যায়ের দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মামলাও হয়েছে। তদন্ত কমিটির তদন্তে যারা দোষী সাব্যস্ত হবে, যাদের গাফিলতি পাব, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তারা যদি ইচ্ছাকৃত কিছু করে থাকে, অবশ্যই তারা সেই অনুযায়ী শাস্তি পাবে। তবে তদন্তের আগে কে দোষী, কে নির্দোষ আমরা বলছি না। আমরা মনে করি: এটা তদন্তের পরই সবকিছু পাব। আজ শুক্রবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। মন্ত্রী আরও বলেন: আগে ফায়ার সার্ভিস ঘণ্টা বাজিয়ে বাজিয়ে আগুন নেভার পর ঘটনাস্থলে যেত। পরবর্তী সময় বর্তমান সরকার প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ফায়ার স্টেশন করেছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের প্রশিক্ষণ, দক্ষতা ও সময়োপযোগী যন্ত্রপাতি এনে দিয়েছে। বসুন্ধরায় আগুন লেগেছিল, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দৃশ্য দেখা ছাড়া উপায় ছিল না। তখন ছয়তলার ওপর মই ছিল না, কিন্তু এখন সেটা ২২ তলায় পৌঁছায়।
গত ৪ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত হোন ৪১ জন। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ডিপোর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পরিবহন শ্রমিকেরা। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের সদস্যসহ দুই শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী। তাদের মধ্যে পুলিশের এক সদস্যের পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। শনিবার রাত ১০টার দিকে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়িতে কাশেম জুটমিল সংলগ্ন বি এম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়বহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। সেই আগুনে ক্যামিকেল কন্টেইনারে বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে উঠে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা। ভেঙ্গে পড়ে আশপাশের ঘরবাড়ির দেয়াল এবং জানালা।
এ ঘটনায় সীতাকুণ্ড থানায় একটি মামলা ও তিনটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। আমাদের আশা পূর্বেকার তদন্ত কমিটিগুলোর মত এই কমিটিও যেন হাস্যকর রিপোর্ট না দেয়। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে সরকার যেন উদাহরণ সৃষ্টি করে। নতুবা এইসব কলকারখানার নামে মৃত্যুকূপ বানানো বন্ধ হবে না। দেশ যত ডিজিটাল বা উন্নত প্রযুক্তির কথা বলে দেশের কলকারখানাগুলোতে আমরা তার ছিঁটেফোটাও দেখতে পাই না। যুগের পর যুগ অনিয়ম অবহেলা আর লোভের বলি হচ্ছে সাধারণ শ্রমিক। এই মৃত্যুর বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রের এখানে গুরুতর দায়িত্ব রয়েছে।