মানবজীবনের পরম শান্তিময় জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে সামাজিক সুশৃঙ্খলা অপরিহার্য। কেননা মানুষের সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের মাধ্যমেই সামাজিক বন্ধন ও সম্পর্কগুলো টেকসই হয়। সমাজে বসবাসকারী ব্যক্তির উন্মাদ জীবনযাপন সমাজের চিত্র নষ্ট করে ফেলতে পারে। একটি সুন্দর বাগানকে উজাড় করে দিতে পারে। আল্লাহ তায়ালার দেয়া বারোটি মাসের মধ্যে এমন একটি মাস রয়েছে, যার বদৌলতে সামাজিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। সেই মাসে চোর চুরি ছেড়ে দিতে পারে, খুনি খুন-খারাবি বন্ধ করতে পারে, মারাত্মক পাপী ব্যক্তি তাওবা করে অসৎ পথ থেকে আল্লাহর রাস্তায় ফিরে আসতে পারে। এসকল পরিবর্তন যে মাসে ঘটে, রমজান মাস তার নাম।
মাহে রমজান আমাদের যা কিছু দিয়েছে, তার প্রতিটি ক্ষেত্রেই খোদায়ী নিগুঢ় রহস্য বিদ্যমান। মানবকল্যাণের জন্যই যে আল্লাহ তায়ালার বিধান, তা আরও ভালভাবে পরিস্কার হয় রমজান মাস দেখলে। রোযা রাখার স্বাস্থ্যগত ফায়েদার কথা আমরা প্রায়সকলেই জানি৷ আরও একটি বিষয় সবার জানা থাকা দরকার। সেটি হলো, রোযা-রমজানের মাধ্যমে সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়।
হাদিস শরীফে বলা আছে: ‘যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে রোযাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে; রোযাদারের সওয়াব থেকে একটুও কমানো হবে না’ (সুনানে তিরমিযি, সুনানে ইবনে মাজাহ, সহীহ ইবনে হিব্বান)।
এই হাদিসের আলোকে সালফে সালেহীন রোযাদার ব্যক্তিকে ইফতার করানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করতেন। যা এখনো রেওয়াজ হিসেবে সারাবিশ্বের মুসলিম দেশগুলোতে প্রচলিত। ঘরে-বাইরে, মসজিদে-রাস্তায় দেখা যায় এই রেওয়াজটা। এর মাধ্যমে সামাজিক বন্ধন প্রগাঢ় হয়। একে অন্যের কাছে আসে। পরস্পর পরস্পরের সাথে মেশার সুযোগ পায়।
রমজান মাসের সামাজিক সৌন্দর্যের আরেকটি হলো, জামাত সহকারে তারাবির নামাজ আদায়। এশার সময় ঘনিয়ে এলে মুসল্লিরা ছুটেছুটে আসেন মসজিদের পানে। একসাথে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে তারাবির নামাজের মাধ্যমে যে দৃশ্য সেখানে রচিত হয় তা সত্যিই অপূর্ব। আপন-পর, দোস্ত-দুশমন সকলেই এক কাতারে একাকার। এই সামাজিক ঐক্যের ভিত কিন্তু রমজান মাসের বাইরে কোথাও নেই। এজন্য রমজান মাসকে বলা হয়, ভ্রাতৃত্বের মাস। মুসলমান মুসলমানের ভাই হাদিসে পাকের এ মর্মবাণীকে সামনে রেখে ভাইয়ে ভাইয়ে এক হয়ে যেতে নির্দেশ দেয় মাহে রমজান।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: ‘যে ব্যক্তি মন্দকথা এবং মন্দকাজ পরিত্যাগ করল না, আল্লাহর কাছে তার পানাহার থেকে বিরত থাকার কোনো প্রয়োজন নেই’ (সহীহ বুখারী)। এ হাদিস রমজান মাসে পাপমুক্ত থাকার আদেশ দেয়। অপরাধ, অনাচার থেকে বিরত থাকতে অভ্যস্ত হওয়ার মাধ্যমে সামাজিক পাপাচারের পথরুদ্ধ হয় এবং সামাজিক অস্থিরতা অনেকটাই কমে আসে।
যাকাত এবং সদকাতুল ফিতর। সামাজিক সুশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এ দুটি বিষয়ের ভূমিকাও কম নয়। যাকাতের মাধ্যমে ধনীর সম্পদের একাংশ গরীবের হাতে চলে আসে। যাতে সমাজের অসহায়-গরীব ব্যক্তিটি স্বাবলম্বী হবার সুযোগ পায়। পাশাপাশি সমাজের সম্পত্তিও অল্প কতেকের হাতে কুক্ষিগত হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। আর সদকাতুল ফিতর গরীব মানুষের মুখে ঈদের হাসি ফোটায়। ঈদের খুশি উদযাপনের প্রয়োজনীয় রসদ যার নেই, তার হাতে রসদ দেয়। তারপর সেও সমাজের বাকী দশজনের মতই আনন্দোৎসবে মেতে উঠতে পারে। সমাজের দরিদ্র-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবার শিক্ষা নিয়ে আসে রমজান মাস। আজ সেই মাসের শিক্ষা প্রায়োগিকভাবে চর্চার বড্ড প্রয়োজন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের রমজান মাসের শিক্ষা বাস্তবায়নের তাওফিক নসীব করুন। আমীন।