কয়লা ও গ্যাসসহ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করো এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ বিশ্ব নিশ্চিত করার দাবিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রতিবাদ কর্মসূচি। বালিতে মাথা গুঁজে অভিনব এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন পরিবেশবাদী ও যুব সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) চট্টগ্রামের হালিশহর নয়াবাজার চৌচালা বিচ সাগর পাড়ে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। বেসরকারী উন্নয়ন সংগঠন আইএসডিই বাংলাদেশ, ক্যাব যুব গ্রুপ, বিডাব্লুজিইডি (বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ ফর ইকোলোজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ক্লীন (কোষ্টাল লাইভলিহুড এন্ড এনভার্মেন্টাল একশন নেটওয়ার্ক) যৌথ আয়োজনে নানা দাবি বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রতিবছর পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান, বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর প্রধান, বিজ্ঞানী, জলবায়ু-অধিকারকর্মী, সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ‘জলবায়ু সনদে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রীয় পক্ষসমূহের সম্মেলন’ বা ‘কপ’ সম্মেলনে মিলিত হন। কিন্তু সম্মেলনের সিদ্ধান্ত কতটুকু কার্যকর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, সে প্রশ্ন অমিমাংশিত থেকেই যাচ্ছে।
বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থের কারণে কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। আবার, আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকায় অধিকাংশ সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ বছরও জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন কর্মকাঠামো সনদ এর উদ্যোগে আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে ‘কপ-২৮’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ কারণেই জলবায়ু কর্মীগণ দাবি তোলেন, ‘বকবক করো না, কাজ করো’ কিংবা ‘ঐচ্ছিক সমঝোতা নয়, আইনগত চুক্তি চাই’, “আমাদের কথা কেউ শুনে না?”
এই বিষয়কে সামনে রেখে অভিনব প্রতিবাদী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবাদ সমাবেশে আরও দাবি করা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে শিল্পোন্নত দেশগুলোর কার্বন নির্গমন ২০০৫ সালের তুলনায় কমপক্ষে ৩০ শতাংশ কমাতে হবে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্য নির্গমন নিশ্চিত করতে হবে।
আরও দাবি করা হয়, ‘নেট জিরো’ নয়, প্রকৃত’ ‘শূন্য নির্গমন’ চাই, উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশ নির্বিশেষে ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্পখাতে কয়লার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে কার্বন ধারণ ও সংরক্ষণ বা সিসিএস প্রযুক্তি ব্যবহারের দোহাই দেয়া যাবে না, জীবাশ্ম গ্যাস (এলএনজিসহ) ও পেট্রোলিয়ামে অর্থায়ন ও প্রযুক্তি সরবরাহ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
রূপান্তরকালীন জ্বালানির নামে এলএনজি’র সম্প্রসারণ বন্ধ করতে হবে, স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিপদাপন্ন জনসাধারণের জলবায়ুঅভিযোজনের জন্য সরাসরি অর্থায়ন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে হবে, এলএনডি তহবিলে ঋণ কিংবা বেসরকারি বিনিয়োগ নয়, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
এলএনডি তহবিলে বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্তি নিষিদ্ধ করতে হবে, বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দ্রুত ও ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তরের জন্য শিল্পোন্নত দেশগুলো থেকে প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে জাতীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে এবং সহজ অর্থায়নের মধ্য দিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলতে হবে, শিল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে জিসিএফ-এ প্রতি বছর ১০ হাজার কোটি ডলার দিতে হবে যাতে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জলবায়ু-ঝুঁকি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত অর্থায়ন নিশ্চিত হবে, জিসিএফ থেকে চরম বিপদাপন্ন স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের অভিযোজনে অধিকতর গুরুত্বারোপ করতে হবে।
এছাড়া এসব দেশে জ্বালানি খাতে ন্যায্য রূপান্তরে অর্থায়ন করতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাধ্যতামূলক বাস্তচ্যুত জনগোষ্ঠীকে ‘জলবায়ু উদ্বাস্ত’ ঘোষণা করে স্বাধীন ও সম্মানজনক অভিবাসনের অধিকার দিতে হবে, ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ মিথেন হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কৃষিখাতকে এ লক্ষ্যমাত্রার বাইরে রাখতে হবে। এবং শিল্প, পরিষেবা ও বাণিজ্যসহ সকল খাতে সবুজ রূপান্তরের জন্য স্পষ্ট ও বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
প্রতিবাদ কর্মসুচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন আইএসডিই বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ও ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, জেলা সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদের যুগ্ন সম্পাদক মোহাম্মদ জানে আলম, ক্যাব হালিশহর থানা সভাপতি এমদাদুল করিম সৈকত, মানবাধিকার নেতা ওসমান জাহাঙ্গীর, ক্যাব যুব গ্রুপের সভাপতি আবু হানিফ নোমান, ক্যাব যুব গ্রুপের যুগ্ন সম্পাদক আমজাদুল হক আয়াজ, প্রচার সম্পাদক এমদাদুল ইসলাম, মহারাজ চৌধুরী প্রমুখ।