হল সংস্কার, কলেজ বাস চালু ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সংস্কারসহ ১০ দফা দাবি নিয়ে বিক্ষোভ করেছে রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও বিক্ষোভ চলাকালীন রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ করে দেয় শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার ১৬ মে দুপুরে কলেজের মূল ফটকে বিক্ষোভ করেন তারা। এসময় উত্তপ্ত রোদ উপেক্ষা করে হল চাই, বাস চাই, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সংস্কার চাই, শ্রেণীকক্ষ সংকট নিরসন চাই এমন নানা স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরান ঢাকা।
ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের আন্দোলনরত শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস জীম বলেন, কলেজ প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে যাওয়ার পর তারা আমাদের গুরুত্ব দেয়নি। তারা আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। আমাদের কলেজে শুধু নেই আর নেই। পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ নেই, বাস নেই, পড়াশোনার পরিবেশ নেই, মেডিকেল সেন্টারে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেই। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই আমরা এসকল সমস্যা দেখে আসছি। প্রথম প্রথম কলেজ প্রশাসন আশ্বাস দিলেও আদতে তার কোন সমাধান হয়নি।
আন্দোলনরত তুষার মাহমুদ নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো টানা দুই ঘণ্টা আন্দোলন করার পরেও আমাদের কথা শুনতে কলেজ প্রশাসন আসেনি। এর আগে আমাদের দাবি নিয়ে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে গিয়েছি। আমাদের সাথে তারা কুকুরের মতো আচরণ করেছে। তাই আজকে আন্দোলনের অন্যতম একটা দাবি আমাদের কথা শুনতে হবে, আমাদের দাবি মানতে হবে, শিক্ষার্থীদের সাথে সুন্দর আচরণ করতে হবে।
এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, এখানে ভর্তি হওয়ার পর থেকে শুনতেছি সমস্যার সমাধান হবে হবে কিন্তু আর হলো না। যে অভিভাবক শিক্ষার্থীদের সমস্যার কথা না শুনে, বরং টিসি দেওয়ার হুমকি দেয় এমন অভিভাবক আমরা চাই না। তিন ঘণ্টা ধরে আমরা আন্দোলন করছি অথচ কেউ আমাদের এখনো এই আশ্বাস দেয়নি যে এত দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে। আমরা আজ রাজপথে নেমেছি। আবারও নামবো। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। এটা আমাদের অধিকার। শিক্ষার্থীরা জানে কিভাবে অধিকার আদায় করতে হয়।
এসময় শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করে কবি নজরুল সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি এম ওয়াসিম রানা বলেন, শিক্ষার্থীদের সকল দাবি যৌক্তিক। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে ছিল এবং থাকবে। শিক্ষার্থীদের সকল যৌক্তিক দাবি পূরণ ও বাস্তবায়নের জন্য আমরা কলেজ প্রশাসনের সাথে আলোচনা করবো।
এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামানোর জন্য সড়কে আসেন কবি নজরুল সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. খালেদা নাসরীন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমরা সড়কে ঝামেলা না করে কলেজের ভিতরে আসো। তোমাদের দাবি গুলো আমরা শুনবো এবং কিভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা করবো।
কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আমেনা বেগমের সাথে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করলে তিনি মোবাইলে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো:
১. বন্ধ হওয়া দু’টি বাস পুনরায় চালু করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য নূন্যতম পাঁচটি বাস দিতে হবে।
২. ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শীঘ্রই সংস্কার করতে হবে। অন্যথায় ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
৩. শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য আবাসন সুবিধা (হল) নিশ্চিত করতে হবে।
৪. শ্রেণীকক্ষ সংকট নিরসন করতে হবে।
৫. কলেজের শৌচাগারগুলো ব্যবহার উপযোগী করতে হবে।
৬. শ্রেণীকক্ষে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম করতে হবে।
৭. শিক্ষার্থীদের সাথে কলেজ প্রশাসন ও শিক্ষকদের সুন্দর আচারণ করতে হবে।
৮. আন্দোলন করলে শিক্ষার্থীর ক্লাস পরীক্ষায় দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া বন্ধ করতে হবে।
৯. কলেজের মাঠ ব্যবহারের উপযোগী করতে হবে।
১০. চিকিৎসাকেন্দ্রে পর্যাপ্ত মেডিসিন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকতে হবে।