বাংলার ঐতিহ্যবাহী টোরাকোটা শিল্পের অনুপম শিল্পকীর্তি বিশ্বখ্যাত বাংলাদেশের দিনাজপুরে অবস্থিত সনাতন ধর্মালম্বীদের পবিত্র তীর্থস্থান কান্তজীউ মন্দির অঙ্গনের জমি দখল করে মসজিদ নির্মাণের চেষ্টায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের ১৭ বিশিষ্ট নাগরিক।
রোববার ২৪ মার্চ দেশের ১৭ বিশিষ্ট নাগরিকের সাক্ষরিত নাসির উদ্দীন ইউসুফ পাঠানো এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, মহারাজা প্রাণনাথ রায়ের উদ্যোগে ও অর্থায়নে নির্মিত মন্দিরের দেয়ালে উৎকীর্ণ টেরাকোটা শিল্প কর্ম শুধুমাত্র বাংলাদেশের জন্য নয়, মানব ইতিহাসের শিল্প ও রুচিবোধের সাক্ষ্য বহন করে। মন্দিরের গায়ে উৎকীর্ণ টেরাকোটায় শুধু রামায়নের ঘটনা ও চরিত্র নয়, মুসলিম সম্প্রদায়ের মোঘল সাম্রাজ্যের উল্লেখযোগ্য কীর্তি একই সাথে উৎকীর্ণ করা হয়েছিল।
কান্তজীউ মন্দিরে যে শিল্পীদের হাতে বিস্ময়কর চিত্রকলার সৃষ্টি হয়েছিল এবং যারা প্রকৌশলী ও শ্রমিক হিসেবে মন্দির নির্মাণ করেছিলেন তাদের সিংহভাগ মুসলিম সম্প্রদায়ের। মন্দিরের অনতি দূরে নয়াবাদে মন্দির নির্মাণ শ্রমিকদের নামাজের সুবিধার জন্য মহারাজা প্রাণনাথ রায়ের অর্থায়নে নয়াবাদ মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। অনিন্দ্য সুন্দর সেই মসজিদও একটি পুরাকীর্তি। কান্তজীর মন্দির নির্মাণকারী প্রকৌশলী ও শ্রমিকরাই এ মসজিদ নির্মাণ করেলছিলেন।
উল্লেখ্য, মন্দির ও মসজিদ নির্মাণ করেছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা। সম্প্রীতির এমন নিদর্শন পৃথিবীতে বিরল। এই সম্প্রতির উদাহরণ বিশ্ব ইতিহাসে আমাদের দেশকে মহান করেছিল। সেই মহত্বের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এ জাতি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে।
সভ্যতার এ অনুপম নিদর্শন বাংলাদেশের গৌরব। এ প্রন্ততাত্ত্বিক নিদর্শন মানব সভ্যতার স্মারক। এটি গৌরবের স্মারক। কোনভাবেই এটিকে হুমকির মুখে ফেলা যাবে না। আমরা দৃঢভাবে উচ্চারণ করতে চাই, এ ধরণের আত্মবিনাশী কাজ যেকোন মূল্যে সরকার ও প্রশাসনকে রুখতে হবে।
এছাড়া সম্প্রতি পবিত্র রমজান মাসে কতিপয় ধর্মান্ধ মৌলবাদী ব্যক্তি রমজানের পবিত্রতা রক্ষার নামে সনাতন ধর্মের মানুষের ওপর চড়াও হওয়া ও তাদের শারীরিকভাবে লঞ্ছিত করার ঘটনায় আমরা লজ্জিত ও ক্ষুব্ধ।
আমরা প্রশাসন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক শক্তিসমূহকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ ধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনা প্রতিহত করার আহ্বান জানাচ্ছি।
বিবৃতিদাতা ১৭ বিশিষ্ট নাগরিক হলেন-
১.হাসান ইমাম
২.অনুপম সেন
৩.সারওয়ার আলী
৪.রামেন্দু মজুমদার
৫.আবেদ খান
৬.ফেরদৌসী মজুমদার
৭.মামুনুর রশীদ
৮.মফিদুল হক
৯.নাসির উদ্দীন ইউসুফ
১০.মুনতাসীর মামুন
১১.শাহরিয়ার কবীর
১২.কেরামত মওলা
১৩.মিলনকান্তি দে
১৪.লাকী ইনাম
১৫.সারা যাকের
১৬.শিমূল ইউসুফ
১৭.গোলাম কুদ্দুছ