স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, দেশের প্রায় ১০ ভাগ মানুষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক। থ্যালাসেমিয়া নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর রক্ত পরীক্ষা করা জরুরি।
বৃহস্পতিবার ২৮ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের এ-ব্লক মিলনায়তনে পেডিয়াট্রিক হেমাটোলজি এন্ড অনকোলজি বিভাগ ও মুভমেন্ট ফর থ্যালাসেমিয়া ইরাডিকেশন ইন বাংলাদেশ (এমটিইবি) যৌথভাবে আয়োজিত ‘থ্যালাসেমিয়া অ্যান ইমার্জিং ন্যাশনাল হেলথ ইস্যু: ওয়ে টু মিনিফাই’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন: থ্যালাসেমিয়া রোগীর চিকিৎসায় বোনমেরু ট্রান্সপ্লান্ট করার জন্য পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে সকল ধরণের সহযোগিতা করবে। ঘরে ঘরে থ্যালাসেমিয়া নির্মূলে সচেতনতা জাগ্রত হোক, থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ আন্দোলন সফল হোক।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পুনবার্সন ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে প্রয়োজনে আইন করতে হবে। দেশের স্বাভাবিক সময়ের স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি দুর্যোগ পূর্ব, দুর্যোগকালীন এবং দুর্যোগ পরবর্তী সময়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পুনবার্সন ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছে।
সভাপতির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, থ্যালাসেমিয়া একটি রক্তরোগ। বিয়ের আগের পাত্রপাত্রীর রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে তারা থ্যালাসেমিয়ার বাহক কিনা তা জানা সম্ভব। রক্তের সাথে সাথে চোখেরও পরীক্ষা করা উচিত। পাত্রপাত্রী যদি উভয়ই চোখের মাইনাস পাওয়ারের হয় তবে তাদের সন্তানের চোখেও মাইনাস পাওয়ারের হবে। থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে ভর্তির সময় এবং বিয়ের সময় কাজী অফিসে বর-কনের রক্ত পরীক্ষার উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
পৃথিবীর কয়েকটি থ্যালাসেমিয়া মুক্ত দেশের কথা উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, যে জাতি বিশ্বব্যাংকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বাংলাদেশের প্রমত্ত পদ্মা নদীর উপর স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারে সেই জাতি অবশ্যই থ্যালাসেমিয়া মুক্ত দেশ গড়তে পারবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে অবশ্যই থ্যালাসেমিয়া মুক্ত করতে পারব।
ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন: দেশের প্রথম সেন্টার বেইসড সুপার স্পেশালাইজড হাসাপাতালের শুভ উদ্বোধন আগামী ২৮ আগস্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নির্মিত এ সুপার স্পেশালাইজড হাসাপাতাল উদ্বোধন করা হবে। পদ্মা সেতুর অর্জনের মত স্বাস্থ্যখাতে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালও দেশের জন্য একটি বিরাট অর্জন।
পেডিয়াট্রিক হেমাটোলজি অ্যান্ড অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও এমটিইবি’র সভাপতি অধ্যাপক ডা. এটিএম আতিকুর রহমান জানান, থ্যালাসেমিয়া একটি বংশানুক্রমিক রোগ। দেশের জনগণের প্রায় ৬-১২ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন ধরনের থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। এছাড়াও প্রতিবছর প্রায় সাত হাজার নতুন শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগের জীনসহ জন্মগ্রহণ করে থাকেন। থ্যালাসেমিয়া রোগীরা সাধারণত দুই ধরণের হয়ে থাকে। একটি থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী অন্যটি থ্যালাসেমিয়ার বাহক। যারা থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী তাদেরকে প্রতি মাসেই এক দুই বার রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয় এবং তারা সারাজীবন এ রোগ বহন করে বেড়ান। এদের অনেকেই বিশ থেকে ত্রিশ বছর বয়সের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জটিলতায় মৃত্যুবরণ করেন। বোনম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন করে এদেরকে চিকিৎসা করা হলে এদের সুস্থ্য করার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু এই দেশে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন জটিল ও ব্যয়বহুল এবং এটা অপ্রতুল।
তিনি বলেন, যারা থ্যালাসেমিয়ার বাহক তারা এই রোগ বহন করেন এবং আরেকজন বাহককে বিবাহ করলে তাদের সন্তানদের এই রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি কিন্তু একজন থ্যালাসেমিয়া বাহক যদি একজন নরমাল ব্যক্তিকে বিবাহ করেন তবে তাদের সন্তানদের থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা নেই। কাজেই সমাজের সর্বস্তরে এই রোগের ব্যাপকতা এবং একজন বাহক যাতে অন্য একজন বাহককে বিবাহ না করেন, একজন নরমাল ব্যক্তিকে বিবাহ করেন তা নিশ্চিত করা জরুরি।
অনুষ্ঠানে থ্যালাসেমিয়া গাইড বুক ও স্যুভেনির,‘‘রক্তিম সাহারার আত্মকথা” প্রকাশিত হয় এবং রোগীগণ তাদের করুন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।