চিকিৎসা সেবায় প্রতি বছর বিদেশে চলে যায় প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার। এই পরিমাণ অর্থ রোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্ল্যানেটারি হেলথ একাডেমিয়া (পিএইচএ)।
আজ রোববার ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ইউনাইটেড কনভেনশন সেন্টারে ‘পিএইচএ গ্লোবাল সামিট-২০২৪’ এর মূল পর্বের সমাপনী দিনে এসব কথা বলেন বক্তারা।
এই প্রথমবারের মত দেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে পিএইচএ গ্লোবাল সামিট ২০২৪। এ ধরনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুধু বাংলাদেশে নয়, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। নয় দিনের এই সম্মেলনে দুই হাজারের বেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও মেডিকেল শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। আজ এই সামিটের সপ্তম দিন এবং দুই দিনের মূল পর্বের সমাপনী দিন। মূল পর্বের সমাপনী পরবর্তী আরও দুই দিনে তিনটি সেশন অনুষ্ঠিত হবে।
‘পিএইচএ গ্লোবাল সামিট-২০২৪’ এর আহবায়ক ও পিএইচএ ট্রাস্টি ডা. বাশার এম আতিকুজ্জামান বলেছেন, চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে ৫ বিলিয়ন ডলারের মত দেশের বাইরে চলে যায়। আমাদের অন্যতম দায়িত্ব হলো এই অপচয়টা রোধ করা। টেকনোলজি ডেভলপ করা, ডাক্তারদের ট্রেইন করা, নতুন সার্ভিস লাইন শুরু করা। স্বাস্থ্য সেবার যে বিষয়গুলো দেশে হচ্ছে না, যেসব কারণে রোগীদের দেশের বাইরে যেতে হচ্ছে, সেগুলো যাতে দেশে করা যায় আমরা সেই দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা চাচ্ছি নির্দিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তৈরি করতে, যাতে তারা দেশের মানুষের জন্য কাজে আসতে পারেন।
ডা. বাশার এম আতিকুজ্জামান বলেন, আমাদের (পিএইচএ) কাজ হলো নলেজ এবং টেকনোলজি ট্রান্সফার করা, একজন আরেকজনের কাছ থেকে শেখা, এবং বিশ্বায়নের যুগে একজন আরেকজনকে সাহায্য করা। এই সামিটের প্রাপ্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি মনে করি আমাদের যে লক্ষ্য তার চেয়ে বেশি মাত্রায় এই সামিট সফল হয়েছে। আমাদের লক্ষ ছিলো এক হাজার ডাক্তারকে যুক্ত করা । সেখানে দুই হাজার ডাক্তার যুক্ত হয়েছেন। আমি মনে করি এটা একটা বিশাল অর্জন। আমরা একটা কালচারাল চেঞ্জ আনতে চাচ্ছি। আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু আমাদের স্বপ্ন অনেক বড়। সেই স্বপ্নের জন্য কাজ করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য হলো নলেজ গ্যাপটা কমানো, যাতে আমাদের শিক্ষার্থীরা স্বপ্ন দেখতে পারে। সময় লাগবে। কিন্তু আশা করি আমরা বিজয়ী হব।
প্ল্যানেটারি হেলথ একাডেমিয়া (পিএইচএ) এর চেয়ারপারসন ও ট্রাস্টি ডা. তাসবিরুল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের সম্মেলন বাংলাদেশ কেন দক্ষিণ এশিয়াতেও হয়নি। আমাদের এই কনফারেন্সের আগে ঢাকার বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ১৬ টা কোর্স করিয়েছি। আমার ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে ২৩ ফ্রেব্রয়ারি পর্যন্ত এসব কোর্স করিয়েছি। ২৬ এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি আবার সামিট পরবর্তী দুই দিনের কোর্স করানো হবে। আপনারা দেখবেন আজ একরুমে কথা বলছেন অনকোলজিস্ট, একরুমে কার্ডিওলোজিস্ট, একরুমে সার্জারি, একরুমে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গাইডেন্স নিয়ে কথা বলছে। এরকম একটা কনফারেন্স বিশ্বে হয়েছে কিনা আমি দেখব।’
তিনি বলেন, ‘আমার লন্ডন কোর রিভিও কোর্স করিয়েছি। যেটি বাংলাদেশ কেন দক্ষিণ এশিয়াতেও হয়নি। সেই কোর্স আমরা নিয়ে এসেছি ঢাকায়। ভারত, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা থেকে এখানে কোর্স করতে এসেছে । এই তিন দেশে কোর্সটি লাইভ টেলিকাস্ট করা হয়েছে। রেজিস্ট্রেশন করেও যারা আসতে পারেননি না তারা ভার্চুয়ালি কোর্সটি করেছেন। এই কোর্সটি বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় এচিভমেন্ট। যারা এসেছিলেন তারা বাংলাদেশে আতিথেয়তায় মুগ্ধ। আমরা প্রতিবছরই এরকম কনফারেন্সের আয়োজন করবো।
পিএইচএ ট্রাস্টি ডা. নাসের খান বলেন, আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক নামকরা প্রফেসর যুক্ত আছেন। তাদের পরামর্শ নিয়েই আমরা প্রতিটা পদক্ষেপ নেই। পিএইচএ ট্রাস্টি ডা. শাকিল ফরিদ বলেন, দেশের সবগুলো সোসাইটি, কলেজ অব ফিজিসিয়ানস- এ ধরনের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আমরা কাজ করছি। তা না হলে আমরা সাকসেসফুল হতে পারতাম না। এই সামিট শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই উপকারী। পিএইচএ ট্রাস্টি ওমর শরীফ বলেন, সকল স্বাস্থ্য সেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় আমরা পিএইচএকে সাউথ এশিয়াতে সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
উল্লেখ্য, এই সম্মেলনে ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন, ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশন, আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিওলজি, রয়েল কলেজ অফ অবস্টেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্ট, রয়েল কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস লন্ডন, রয়েল কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস এডিনবার্গ এর প্রেসিডেন্টবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আগামীকাল ২৬ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনের অষ্টম দিনে বারডেম জেনারেল হাসপাতালে বেসিক ব্রঙ্কোস্কোপি কোর্স এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্রেস্ট বায়োপসি ওয়ার্কসপ অনুষ্ঠিত হবে । এছাড়া ২৭ ফেব্রুয়ারি সামিটের শেষ দিনেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্রেস্ট বায়োপসি ওয়ার্কসপ অনুষ্ঠিত হবে।