ডানহাতি পেসার শেপো মোরেকির বলে এক্সট্রা কভার ও মিড অফের মাঝামাঝি জায়গা দিয়ে বাউন্ডারি মারলেন কেন উইলিয়ামসন। তাতেই রচিত হল নতুন ইতিহাস। প্রথমবারের মতো সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল নিউজিল্যান্ড। হ্যামিল্টন টেস্টে ৭ উইকেটের জয়ে দুই টেস্ট সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে উইলিয়ামসনের দল।
কিউইরা তাদের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলে ১৯৩০ সালে। দুই বছর পর ১৯৩২ সালে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে প্রথমবার মুখোমুখি হয়েছিল। তাদের সঙ্গে টেস্ট সিরিজ জিততে না পারার আক্ষেপ ব্ল্যাক ক্যাপসদের ছিল। দীর্ঘ ৯২ বছর অপেক্ষার পর অবশেষে সেই খরা ঘুচেছে। আনকোরা দল নিয়ে টেস্ট সিরিজ খেলতে গিয়েছিল সাউথ আফ্রিকা। তবুও নিউজিল্যান্ডের কপালে ঠিকই আঁকা হল ইতিহাস গড়ার গৌরবের তিলক।
প্রোটিয়ারা প্রথম ইনিংসে তাদের ২৪২ রানের জবাবে ব্ল্যাক ক্যাপসরা ২১১ রানে গুটিয়ে যায়। সফরকারী দল ৩১ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩৫ রানে অলআউট হয়। ২৬৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পা রাখে নিউজিল্যান্ড।
হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে স্বাগতিকরা ২৬৯ রান তুলে সর্বোচ্চ রান তাড়ায় জয়ের নতুন রেকর্ডও সৃষ্টি করেছে। ২০০০ সালে এই ভেন্যুতে অস্ট্রেলিয়ার ২১০ রানের লক্ষ্য তাড়ায় জয়ের আগের রেকর্ডটি ছিল।
এ জয়ের ফলে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলে কিউইরা উঠে এসেছে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে। চার খেলায় ৩ জয় ও এক হারে তাদের গড় পয়েন্ট শতকরা ৭৫ শতাংশ। দুইয়ে নেমে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ার ১০ ম্যাচে ৬ জয়, ৩ ড্র ও এক হারে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের পয়েন্ট শতকরা ৫৫ শতাংশ।
টেবিলের তৃতীয় স্থানে থাকা টিম ইন্ডিয়া তিন নম্বরে রয়েছে। ছয় খেলায় ২ জয়, এক ড্র ও ২ হারে তাদের গড় পয়েন্ট ৫২.৭৭ শতাংশ। ২০২৩-২৫ চক্রে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের এক জয় ও এক হারে বাংলাদেশ ৫০ শতাংশ গড় পয়েন্ট নিয়ে আগের চতুর্থ স্থানেই আছে।
পাঁচ ম্যাচে ২ জয় ও ৩ হারে শতকরা ৩৬.৬৬ শতাংশ গড় পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে পাকিস্তান। ছয় নম্বরে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের গড় পয়েন্ট ৩৩.৩৩ শতাংশ। সপ্তম স্থানে থাকা ইংল্যান্ডের শতকরা ২৯.১৬ গড় পয়েন্ট। আট নম্বরে নেমে যাওয়া সাউথ আফ্রিকার এক জয় ও তিন পরাজয়ে গড় পয়েন্ট শতকরা ২৫ শতাংশ। দুই ম্যাচের সবকটিতে পরাজিত হওয়ায় পয়েন্টের দেখা না পাওয়ায় টেবিলের তলানিতে আছে শ্রীলঙ্কা।
শুক্রবার এক উইকেটে ৪০ রান নিয়ে নিউজিল্যান্ড চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করে। দিনের শুরুর দিকে ডেন পিডটের বলে জুবায়ের হামজার তালুবন্দি হয়ে ফেরেন ৩০ রান করা টম ল্যাথাম।
তৃতীয় উইকেটে রাচীন রবীন্দ্রকে নিয়ে ৬৪ রান যোগ করেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। অফস্পিনার পিডটের শিকারে পরিণত হয়ে রাচীন ২০ রানে সাজঘরে ফিরলে জুটি ভাঙে।
উইল ইয়াংকে নিয়ে দাপটের সঙ্গে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান উইলিয়ামসন। তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৩২তম টেস্ট সেঞ্চুরি। শেষ সাত টেস্টে টানা ৭টি সেঞ্চুরি হাঁকালেন অভিজ্ঞ এ ক্রিকেটার। ইয়াং ওয়ান ফিফটির দেখা। চতুর্থ উইকেটে উইলিয়ামসন-ইয়াং ১৫২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে নিউজিল্যান্ডের ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয় নিশ্চিত করেন।
২৬০ বলে ১২ চার ও ২ ছক্কায় ১৩৩ রানের অপরাজিত ক্লাসিক ইনিংস খেলেন কেন উইলিয়ামসন। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেয়া উইল ইয়াং ১৩৪ বলে ৬০ রানে ক্রিজে ছিলেন।
সাউথ আফ্রিকার পক্ষে ডেন পিডট প্রতিপক্ষের তিন উইকেটের সবকোটি দখল করেন। বাকি বোলাররা সাফল্য না পাওয়ায় সফরকারীরা এড়াতে পারেনি হোয়াইটওয়াশ।
হ্যামিল্টন টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৯৩ রান খরচায় ৯ উইকেট তুলে নিয়ে অভিষেক টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে সেরা বোলিং ফিগারের মালিক হন ও’রোর্ক। ম্যাচ সেরার পুরস্কারটা তরুণ এ খেলোয়াড়ের হাতেই তুলে দেয়া হয়।