নবনিযুক্ত বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশে আমরা স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে চাই। সরবরাহ ব্যবস্থা শক্তিশালী করার মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বাংলাদেশে কোন সিন্ডিকেট থাকবে না। কেউ কারসাজির মাধ্যমে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আজ রোববার (১৪ জানুয়ারি) সচিবালয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে প্রথম কার্যদিবসে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষসহ মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সহজলভ্য করাই আমাদের লক্ষ্য যাতে পণ্যের যৌক্তিক মূল্য থাকে এবং তা সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। তিনি বলেন, উৎপাদনকারি থেকে ভোক্তা এবং আমদানিকারক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পণ্য পৌঁছাতে যেন কোনো হস্তক্ষেপ না থাকে। যৌক্তিক মূল্যে পণ্যটি বিক্রির বিষয়ে তদারকি বাড়ানো হবে।
তিনি বলেন, সরকার পণ্য উৎপাদন করে না, আমদানিও করে না। উৎপাদনকারি ও ভোক্তার মধ্যে সমন্বয় করে মাত্র। উৎপাদনকারিদের হাত থেকে পণ্যটি ভোক্তার হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত রাস্তাটা যেন স্মুথ হয়, সরকার সেই লক্ষ্যে কাজ করবে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে অর্থ, কৃষি, শিল্প, খাদ্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী টিম গঠন করা হবে। এই টিম পণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি উন্নতির মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সার্বক্ষণিক কাজ করবে। আহসানুল ইসলাম বলেন, কৃষিতে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। চাল, শাক-সবজি, মাছ, ডিম, মুরগি কোনো কিছুতে আমাদের ঘাটতি নেই। কিন্তু বাজার ব্যবস্থাপনার বড় বিষয় হচ্ছে উৎপাদক বা আমদানিকারক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে সরবরাহের সময় কমিয়ে আনা। সরবরাহ যদি ভালো থাকে তাহলে কেউ বাজারে কারসাজি করার সুযোগ পাবেন না এবং কেউ উচ্চ মূল্যে বিক্রি করারও সুযোগ পাবেন না।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমরা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে চাই। এদেশে যারা ব্যবসা করেন সবাই দেশপ্রেমিক। আমরা বিশ্বাস করি, তারা মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন। আমাদের দায়িত্ব থাকবে তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসা। বিশেষ করে যারা তেল, চিনি, লবণ বা এ ধরনের নিত্যপণ্য নিয়ে ব্যবসা করেন তারা যেন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে কাজ করেন এটা আমরা নিশ্চিত করব।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, তৈরি পোশাকের ওপর আমরা অনেক নির্ভরশীল। প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন পোশাকের মতো পাট, চামড়া ও আইটি খাতে সুযোগ সবিধা দিতে। এখানে মূল্য সংযোজন অনেক বেশি। রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের মাধ্যমে আরও অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে যা আমাদের অর্থনীতির জন্য স্বস্তিদায়ক হবে। তিনি আরও বলেন, আমি সিন্ডিকেট শব্দের সঙ্গে অভ্যস্ত না। দেশে কোনো সিন্ডিকেট থাকতে পারবে না। ব্যবসায়ীদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে কাজ করতে হবে। আমরা তাদের বলবো স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার সঙ্গে ব্যবসা করলে আমরা তাদের সহযোগিতা করবো।
তিনি জানান, টিসিবির কর্মসূচির আওতায় যে এক কোটি পরিবার রয়েছে তাদের তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। যেগুলো যাচাই-বাছাই হয়ে গেছে সেগুলোর কার্ড ইস্যু করা হচ্ছে। আশা করছি, জুনের মধ্যে সবাই কার্ড পেয়ে যাবেন। আগামী রমজানে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে না এই আশা ব্যক্ত করে আহসানুল ইসলাম বলেন, সব ধরনের নিত্যপণ্যের মজুত ও সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। আশা করি এবার রমজানকে লক্ষ্য করে কোন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে না। তিনি জানান, রমজানে টিসিবির ভর্তুকিমূল্য পণ্যের তালিকায় আরও দু’টি পণ্য যুক্ত হবে। বর্তমানে তিনটি পণ্য টিসিবি ভর্তুকি মূল্যে বিক্রয় করছে।
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম কার্যদিবস ১৪ জানুয়ারির বাজারমূল্যকে সূচক হিসেবে ধরে পরবর্তীতে দ্রব্যমূল্যের দাম-বৃদ্ধিকে তিনি সাফল্য-ব্যর্থতা হিসেবে দেখতে চান। সাংবাদিকদের চোখ-কান খোলা রাখার আহবান জানিয়ে আহসানুল ইসলাম বলেন, সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে আপনারা সহযোগিতা করুন। কোথাও কারসাজি-অনিয়ম হলে আমাদের জানাবেন। সরকার সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।