আমাদের মত কেউ যেন আর বিচারহীনতার কষ্ট না পায়, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সামনে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের ৫০ বছর পূর্তিতে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি সংবিধান প্রণয়নের উদ্যোগ নেন। ১৯৭০ সালে নির্বাচিত প্রাদেশিক সদস্য এবং জাতীয় পরিষদের সব সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে একটি কমিটি করে দেন সংবিধান প্রণয়নের জন্য। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মাত্র ৯ মাসের মধ্যে আমরা পাই সংবিধান। জাতির পিতা চেয়েছিলেন সংবিধানের ভিত্তিতে জনগণের মৌলিক অধিকার অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করে একটা উন্নত জীবন দান করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষের জন্য এতো ত্যাগ শিকার করলেন, অথচ তাকেই হত্যা করা হলো। এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকেই প্রকৃতপক্ষে হত্যা করা হয়। সেই হত্যাকারীদের বিচার যাতে না হয় সে জন্য মার্শাল ল’ দিয়ে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়। সে অর্ডিন্যান্স জারি করে খুনিদের বিচারের হাত থেকে শুধু রেহাই দিয়েছিল তাই নয়, বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। বাংলাদেশে শুরু হয় বিচারহীনতার সংস্কৃতি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমি বিচার চেয়েছিলাম কিন্তু পাইনি। আমার অধিকার ছিল না মামলা করার। কারণ ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। আমরা ২১ বছর পর সরকার গঠন করি। সরকার গঠন করার পরই আমরা সিদ্ধান্ত নিই, আমরা উদ্যোগ নিই। কিন্তু এই অধ্যাদেশ যাতে বাতিল না হয় বিরোধী দল সব সময় সক্রিয় ছিল। একপর্যায়ে সুপ্রিম কোর্ট এ অধ্যাদেশ বাতিল করার নির্দেশ দেয়। পার্লামেন্টে আমরা তা বাতিল করি। এরপরই আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কাজ শুরু করতে পারি। পরবর্তী সময়ে সে বিচার শেষ হয়।
রোববার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হক, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মুকেশ কুমার রাসিকভাই শাহ, আইন মন্ত্রী আনিসুল হক ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বক্তব্য রাখেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে স্মারক নোট ও ডাকটিকিট অবমুক্ত করেন। এছাড়া সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক প্রকাশিত স্মারক প্রকাশনা ‘৫০ বছরের পথচলায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট’-এর মোড়ক উন্মোচন এবং “প্রধান বিচারপতি পদক” প্রদান করেন।
আজকের অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি, সাবেক বিচারপতি, আইনজীবী, মন্ত্রীপরিষদের সদস্য, অ্যাটর্নি জেনারেল ও আমন্ত্রিত দেশি-বিদেশি অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।