ইরানি পরিচালক মোহাম্মদ রসৌলফকে আট বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে, এমনটাই জানিয়েছেন তার আইনজীবী।
সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’-এ দেয়া এক পোস্টে নির্মাতার আইনজীবী বাবাক পাকনিয়া লিখেছেন, “ইরানের ইসলামী বিপ্লব আদালত রসৌলফকে আট বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। সেই সাথে চাবুক মারা, জরিমানা এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশও দেয়া হয়েছে।”
পাকনিয়া লিখেছেন, একটি আপিল আদালতে রায় নিশ্চিত করা হয়েছে এবং মামলাটি এখন প্রয়োগের জন্য পাঠানো হয়েছে।
আইনজীবী যোগ করেছেন, সাজা জারি করার মূল কারণ ছিল রসৌলফের প্রকাশ্য বিবৃতি এবং চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র তৈরি করা, যা আদালতের মতে, ‘দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি’।
সম্প্রতি ইরানি কর্তৃপক্ষ কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল থেকে নির্মাতার সর্বশেষ সিনেমা ‘দ্য সিড অফ দ্য সেক্রেড ফিগ’ সরিয়ে নেয়ার জন্য প্রবল চাপ সৃষ্টি করে। কানে ছবিটির প্রিমিয়ার হবে এবং প্রতিযোগিতা বিভাগে লড়বে। এই ছবির প্রযোজক এবং শিল্পীদেরও হয়রানি করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছিল এবং দেশ ত্যাগে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
‘দ্য সিড অব দ্য সেক্রেড ফিগ’ ছবির গল্প ইমান নামের এক ব্যক্তিকে ঘিরে। যিনি তেহরানের বিপ্লবী আদালতের একজন তদন্তকারী বিচারক। দেশব্যাপী রাজনৈতিক প্রতিবাদ তীব্র হওয়ার সাথে সাথে তার মনে জন্মায় অবিশ্বাস এবং সন্দেহ। এক সময় তার বন্দুক রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়। তিনি সন্দেহ করা শুরু করেন যে স্ত্রী নাজমেহ এবং তার কন্যা রেজভান এবং সানা এই ঘটনায় জড়িত। তিনি বাড়িতে কঠোর ব্যবস্থা আরোপ করেন, যার ফলে উত্তেজনা বেড়ে যায়। ধাপে ধাপে তাদের সামাজিক রীতিনীতি ও পারিবারিক জীবনের চিত্র বদলে যায়।
প্রায় বিশ বছর ধরে সেন্সরশিপ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে আসছেন রসৌলফ। নিজের পঞ্চম ছবি ‘আ ম্যান অব ইন্টিগ্রিটি’র জন্য ২০১৭ সালে নিষিদ্ধ হন মোহাম্মদ রসৌলফ। সিনেমা বানানো এবং দেশের বাইরে বের হওয়া, দুটোই বারণ তার জন্য। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নাকি সরকারবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এই অভিযোগে এক বছর জেলও খাটতে হয়েছিল এই নির্মাতাকে।
বিশ্বের বিভিন্ন দাপুটে চলচ্চিত্র উৎসবের কল্যাণে বরাবরই চর্চায় থাকে ইরানি সিনেমা! সরকার আরোপিত সীমাবদ্ধতাগুলো সিনেমার মাধ্যমে তুলে ধরায় আইনি ঝামেলায় পড়েছেন সিনেমাগুলোর নির্মাতা-কলাকুশলীরা।
আগের মতো সরকারের প্রচারের খাতিরে সিনেমা নির্মাণ করেন না নির্মাতারা। সংস্কৃতি ও ইসলামিক গাইডেন্স মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অনুমতির তোয়াক্কাও করেন না। ২০০০-এর দশকে, মোহাম্মদ রসৌলফের মতো বড় নির্মাতারা স্বাধীন ধারার সিনেমার দিকে ঝুঁকেছেন। উদীয়মান নির্মাতারা তাদের পদাঙ্কই অনুসরণ করেছেন এবং বিদেশী চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে অংশ নিয়ে সেগুলো প্রদর্শন করছেন। আর এমনটা রুখতেই নির্মাতা কিংবা শিল্পীদের উপর প্রায়শই শাস্তির খড়গ নেমে আসছে।
এ বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ার হবে রসৌলফের সিনেমা ‘দ্য সিড অব দ্য সেক্রেড ফিগ’ এর। উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে পাম দ’রের জন্য লড়বে ছবিটি।
সূত্র: ভ্যারাইটি