প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের নিঃশর্ত মুক্তিসহ তিন দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (জাবিসাস) সাধারণ সম্পাদক আলকামা আজাদ এর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে ৩ দফা দাবি পেশ করেন সংগঠনটির সভাপতি বেলাল হোসেন।
তাদের দাবি, অবিলম্বে শামসুজ্জামানকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে, হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং নিবর্তনমূলক আইন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (ডিএসএ) বাতিল করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানবন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি জহির ফয়সাল বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবসের দিনে যখন একজন দিনমজুর বললো- আমার ভাত, মাছ আর মাংসের স্বাধীনতা লাগবো। আর এই সত্য কথাটি নিয়ে যখন সাংবাদিক রিপোর্ট করে তখন তাকে রাতের আঁধারে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এটিই প্রমাণ করে যে এদেশে শুধু ভাত, মাছের স্বাধীনতা নয়। এদেশে কথা বলারও স্বাধীনতা নেই। স্বাধীনতার ৫২ বছরে এসেও যদি আমরা স্বাধীনতা না পাই, তবে কবে স্বাধীনতা পাবো?’
জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সাধারণ সম্পাদক তাপসী দে প্রাপ্তি বলেন, ‘সাদা পোশাকে গ্রেফতার হওয়ার রাজনীতি এদেশে প্রথম নয়। গণমাধ্যমে সত্য কথা বলার কারণে, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করার কারণে বিভিন্ন সময় সাংবাদিকদের হেনস্তা হতে হয়েছে; ওই সূত্রে সাংবাদিক শামস এখন কারাগারে। যুগের পর যুগ ধরে এদেশে সাংবাদিক হত্যা- নির্যাতন স্বাভাবিক ঘটনায় রূপ নিয়েছে। সাগর-রুনি হত্যার বিচার আজও পেলাম না আমরা। এদেশে বসবাসে জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই, আমরা কেউ স্বাধীন অনুভব করছি না। আমরা স্বাধীনতা চাই।’
মানববন্ধনে সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের সভাপতি রাকিব আহমেদ বলেন, ‘ভুল শুধু প্রথম আলোর না, সকল দেশের সংবাদ মাধ্যমেরই হয়ে যায়। সাংবাদিকতার নীতি নৈতিকতায় বলে- ভুল হয়ে গেলে স্বীকার করে নিতে হবে। প্রথম আলো কিন্তু আধা ঘণ্টার মধ্যেই তাদের ভুল স্বীকার করে নিয়েছিল। তাহলে কেন তার বিরুদ্ধে মামলা হলো, তাকে রাতের আঁধারে আটক করা হলো, এরপর আদালত তার জামিন নাকচ করে তাকে জেল হাজতে পাঠালো। সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে মুক্তি দেওয়া হোক।’
মানববন্ধনের সমাপনী বক্তব্যে জাবিসাসের সভাপতি মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘আপনারা গত দুই দিনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর যে তামাশা লক্ষ্য করলেন তা নিতান্তই ফ্যাসিবাদী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। সেই একই মানসিকতা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বানাতে ক্ষমতা কাঠামোকে উৎসাহিত করেছে। যেটি এখন সাংবাদিকতার যম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এর ফলশ্রুতিতেই আজ শামস ভাই কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠের মধ্যে।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, ফার্মেসী বিভাগের অধ্যাপক সোহেল রানা, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন, ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমর্ত্য রায়, জাবিসাসের সদস্য মেহেদী মামুন, নাসির উদ্দিন সিকদার প্রমুখ।
মানবন্ধনে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার মন্ডল, সহকারী অধ্যাপক মৃধা মো. শিবলী নোমান, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী প্রমুখ।