ঢালিউডের সুঠাম দেহের অভিনেতাদের একজন এবিএম সুমন। শুক্রবার মুক্তি পেল তার অভিনীত বহুল প্রতীক্ষিত সিনেমা ‘এমআর নাইন: ডু অর ডাই’। সিনেমায় বাংলাদেশের সুপরিচিত স্পাই মাসুদ রানা চরিত্রটি রূপদান করে তুমুল প্রশংসিত হচ্ছেন এই নায়ক! সিনেমাটি দেখে দর্শক বলছেন, তার কল্পনার জগতের মাসুদ রানার সাথে সিনেমার পর্দায় দেখা এবিএম সুমন বেশ ভালোই মানিয়ে গেছে!
অনেকে বলতে শুরু করেছেন, সুমনের ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট হতে যাচ্ছে মাসুদ রানা চরিত্রটি। যদিও চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, শুধু মাসুদ রানা ই নয়; ক্যারিয়ারে এ পর্যায়ে আসতে আরও কিছু চরিত্র ছিলো সুমনের ভিত্তি! এরমধ্যে অনেকে মনে করছেন, রুদ্র দ্য গ্যাংস্টার, ঢাকা অ্যাটাক এর সোয়াট সদ্য এবং বিউটি সার্কাসের রংলাল চরিত্রের কথাও! মাসুদ রানা হয়ে উঠতে এই চরিত্রগুলোর প্রাথমিক অবদান রয়েছে।
তবে আগের সব চরিত্র ছাপিয়ে ‘মাসুদ রানা’য় দুর্দান্তভাবে উপস্থিত হয়েছেন সুমন। বইয়ের পাতা থেকে সিনেমার পর্দায় ‘মাসুদ রানা’ হয়ে আসার পথ যদিও সহজ ছিলো না। তার জন্য বহু কাঠখড় পোহাতে হয়েছে সুমনকে। কেননা ‘মাসুদ রানা’ বাঙালি পাঠকের প্রিয় একটি চরিত্র! এটা জানাই ছিলো যে, প্রত্যেক দর্শক তার কল্পনার মাসুদ রানার সাথে পর্দার মাসুদ রানাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখবেন! এই চ্যালেঞ্জ নিয়েই নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন সুমন।
বহুদিনের পরিশ্রম আর চেষ্টার ফল পেতে শুরু করেছেন সুমন। শুক্রবার সিনেমাটি দেখে দর্শক যখন স্টার সিনেপ্লেক্স থেকে বের হচ্ছিলেন, তখন বেশীর ভাগ দর্শকই সুমনের অভিনয়ের প্রশংসা করলেন! পুরো সিনেমা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও মাসুদ রানা চরিত্রে সুমনের অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন দর্শক!
সিনেমাটি শুক্রবার ইংরেজি ভার্সনে মুক্তি পেয়েছে। বিশেষত আধুনিক প্রেক্ষাগৃহগুলোতেই চলছে, যেখানের বেশীরভাগ দর্শক নগরকেন্দ্রীক। প্রযোজনা সংস্থা জাজ মাল্টিমিডিয়া থেকে জানানো হয়েছে, আগামি শুক্রবার দেশের প্রেক্ষাগৃহে বাংলা ভার্সনটিও মুক্তি দিতে যাচ্ছেন তারা, সিঙ্গেল স্ক্রিনেও দেখা যাবে। তখন পাওয়া জানা দেশের সাধারণ দর্শক কাছে মাসুদ রানা হিসেবে এবিএম সুমন কতোটা উতরে গেলেন!
শুক্রবার রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সে দুপুর থেকেই দর্শক প্রতিক্রিয়া জানতে উপস্থিত ছিলো ‘এমআর নাইন’ টিম। আনিসুর রহমান মিলন তখন দাবি করেন, সিনেমাটি আমরা দর্শকের সাথে দেখতে চেয়েও টিকিট পাইনি। মাসুদ রানা নিয়ে সবার এমন আগ্রহ সত্যিই আশাজাগানিয়া। এসময় গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে কথা বলেন নির্মাতা আসিফ আকবরও।
প্রথম দিনে দর্শকের রেসপন্স দেখে মুগ্ধ হওয়ার কথা জানান এই নির্মাতা। তবে প্রযোজক আবদুল আজিজ বলছিলেন, প্রথম দিনে সব সিনেমাই হাউজফুল হয়; সিনেমার ভাল মন্দ নির্ভর করে সপ্তাহের পরবর্তী দিনগুলোতে দর্শকের উপস্থিতির উপর। ‘মাসুদ রানা’ নিয়ে দর্শকের যে আগ্রহ দেখছি, আশা করছি সপ্তাহের বাকি দিনগুলোও হাউজফুল যাবে!
এদিকে সিনেমাটি নিয়ে শুক্রবার দুপুর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন গ্রুপে ইতিবাচক রিভিউ দেখা যাচ্ছে। বেশীর ভাগ লেখাতেই এবিএম সুমনের দারুণ অভিনয়ের প্রশংসা! আর প্রশংসা করবেই না কেন, মাসুদ রানা হিসেবে এবিএম সুমনকে যে পছন্দ করেছেন স্বয়ং মাসুদ রানার স্রষ্টা কথাসাহিত্যিক কাজী আনোয়ার হোসেন!
তার লেখা ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ‘ধ্বংস পাহাড়’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত যৌথ প্রযোজনার এই ছবিটিতে জাজ ছাড়াও বিনিয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ফিল্ম পোস্ট, চেজিং বাটারফ্লাইস পিকচারস ও আল ব্রাভো ফিল্মস। ছবির নির্মাতা আসিফের সঙ্গে যৌথভাবে চিত্রনাট্য লিখেছেন আব্দুল আজিজ ও নাজিম উদ দৌলা। ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন গ্র্যামিজয়ী ভারতীয় সংগীতশিল্পী রিকি কেজ।
প্রধান চরিত্রে এবিএম সুমন ছাড়াও অভিনয় করেছেন সাক্ষী প্রধান, শহীদুল আলম সাচ্চু,মাইকেল জেই হোয়াইট, নিকো ফস্টার, ম্যাট পাসমোর, কেলি গ্রেসন, ফ্রাঙ্ক গ্রিলো প্রমুখ।
শুধু বাংলাদেশেই নয়, সিনেমাটি একই দিনে মুক্তি পেয়েছে আমেরিকা ও কানাডায়। সিনেমাটি আন্তর্জাতিকভাবে পরিবেশনার দায়িত্বে আছে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো।