উগান্ডার স্কুলে জঙ্গি হামলায় বেঁচে যাওয়া ছাত্র জুলিয়াস ইসিঙ্গোমা বলেছেন, ইসলামি বিদ্রোহীদের করা হামলায় মৃতদের রক্ত মুখে, কানে এবং মাথায় মেখে শুয়ে ছিলাম, যাতে হামলাকারীরা ভাবে যে আমি মারা গিয়েছি।
বিবিসি জানায়, জুলিয়াস বেঁচে যাওয়া ছয় জনের একজন- যারা কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা হামলা থেকে নিজেদের বাঁচতে সক্ষম হয়েছিলেন।
জুলিয়াস জানায়, তারা স্থানীয় সময় রাত প্রায় ১০টার দিকে হামলা চালায়। ছেলেদের ছাত্রাবাসে আসলে বিপদ বুঝতে পেরে শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিক গেটে তালা লাগিয়ে দেয়। যখন হামলাকারীরা দরজা খুলতে ব্যর্থ হয় তখন তারা ছাত্রাবাসের ভিতরে একটি বোমা নিক্ষেপ করে।
জঙ্গিরা ছাত্রাবাসে ঢুকেই গুলি করা শুরু করে। জুলিয়াস এসময় পেছনের দিকে দাঁড়িয়ে ছিল। জুলিয়াস বলেন, হামলাকারীরা ছাত্রদের গুলি করে এবং কুপিয়ে হত্যা করেছে। জুলিয়ান এক পর্যায়ে ছাদের সিলিংয়ে থাকা কিছু কাঠের তক্তা সরিয়ে সেখানে লুকিয়ে পরে।
তিনি বলেন, আমি অসহায়ভাবে সবাইকে আততায়ীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হতে দেখেছি। হত্যাযজ্ঞ চালানোর পর তারা আমাদের বিছানাতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়। চারদিক ধোঁয়ায় ছেয়ে গেলে আমি নিচে নেমে আসি। তখন কিছু শব্দ হলে জঙ্গিরা তা শুনতে পায় এবং কক্ষে ফিরে আসে।
তিনি জানান, তখন আমি আমার বন্ধুদের রক্তাক্ত মৃতদেহের পাশে শুয়েছিলাম এবং খুব দ্রুত চিন্তা করছিলাম। তারপর আমি আমার কানে, মুখে এবং আমার মাথায় তাদের রক্ত মাখালাম এবং যখন জঙ্গিরা ফিরে আসে, তারা আমার হাতের নাড়ি পরীক্ষা করে চলে যায়।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে জুলিয়াস দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, তিনি তার বন্ধুদের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি। তিনি ভবিষ্যতে এমন একজন সৈনিক হতে চান যিনি লড়াই করতে পারেন এবং তার বন্ধু এবং সহকর্মীদের জীবন বাঁচাতে পারেন।
বেঁচে যাওয়া আরেক শিক্ষার্থী গডউইন মুম্বেরে, জুলিয়াসের সাথে একই ছাত্রাবাসে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি বন্ধুদের সাথে মাটিতে পড়ে ছিলাম। হামলাকারীরা আমাকে দেখে ভেবেছিল আমি মারা গেছি।
কিন্তু সবাই মারা গেছে কিনা তা নিশ্চিত করতে তারা আবারও ছাত্রাবাসে ফিরে আসে। এই মুহূর্তে তারা আমার হাতে গুলি করে এবং ছাত্রাবাসে আগুন ধরিয়ে দেয়।
বেঁচে যাওয়াদের মধ্য সবাই বর্তমানে হাসপাতালে রয়েছে। তাদের মধ্যে একটি মেয়ে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন। হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করার কারণে তার মাথায় গুরুতর জখম হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতে এমপন্ডওয়ের শহরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জঙ্গি হামলায় প্রায় ৪০ জন মারা যায়। এরমধ্যে শিক্ষার্থী ছিল ৩৭ জন। ইসলামিক স্টেট গ্রুপের সাথে যুক্ত অ্যালাইড ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এডিএফ) এই হামলা চালায়। এটি ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো (ডিআরসি) ভিত্তিক একটি গ্রুপ।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি কঙ্গোর সাথে উগান্ডার সীমান্ত থেকে দুই ১ দশমিক ২৫ মাইল দূরে অবস্থিত। বহু বছরের ইতিহাসে উগান্ডার কোনও স্কুলে এই ধরণের হামলার ঘটনা এই প্রথম। এডিএফ বিদ্রোহীরা গত দুই দশক ধরে ডিআরসি বা কঙ্গোর ভেতর থেকে কাজ করছে।