বয়সভিত্তিক পর্যায়ে বাংলাদেশের জার্সিতে বহুবার গোলের দেখা পেয়েছেন তহুরা খাতুন। ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুরের ফুটবলার মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে আলো কাড়েছিলেন। দুই বছর আগে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছেন। ঘরের মাঠের আসরে তার পা থেকে এসেছিল দুই গোল।
সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ঠেলে ততদিনে তারকা বনে যাওয়া তহুরা এবার জাতীয় দলের জার্সিতেও আলো ছড়ালেন। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষেবাংলাদেশের ৩-০ ব্যবধানের জয়ে তিনি জোড়া গোল করেছেন। অথচ এক সময় ফুটবলই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে নিজেই এ কথা জানালেন।
সহকারী কোচ লিটুর প্রতি কৃতজ্ঞতা টিম টাইগ্রেসের ফরোয়ার্ড বলেন, ‘আসলে আমি একটা সময় লিটু স্যারকে বলেছিলাম খেলা ছেড়ে দেবো। শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলাম, মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। স্যার আমাকে খেলা ছাড়তে দেননি। আরও উদ্দীপ্ত করেছেন। বলেছিল আরে তুই পারবি। তাই স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা।’
জাতীয় দলে তহুরা বদলি হিসেবেই খেলেন। সাম্প্রতিক সময়ে স্বপ্না ও কৃষ্ণাদের পারফরম্যান্স তাকে শুরুর একাদশে মাঠে নামানোর সুযোগ সেভাবে মেলেনি। ফুটবল থেকে অবসরে গেছেন সিরাত জাহান স্বপ্না। পায়ের চোটের কারণে লম্বা সময়ের জন্য অভিজ্ঞ কৃষ্ণা রানি সরকারকে মাঠের বাইরে থাকতে হবে। অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের সঙ্গে ফরোয়ার্ড লাইনের অভাবটা দারুণভাবেই পূরণ করে যেন ক্যারিয়ারের পুনর্জন্ম দিলেন তহুরা।
ছোটবেলা থেকেই তহুরা যখন বল নিয়ে ছোটাছুটি শুরু করতেন, লোকে ‘মেসি মেসি’ বলে চিৎকারে সমর্থন জানাতো। বাংলাদেশের লিটল মেসি শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে শুক্রবার ম্যাচের ১৬ মিনিটে করেন প্রথম গোল। বিরতির পর ৬০ মিনিটে আবারো তিনি বল জালে জড়ান।
প্রথম গোলটিতে মূলত মারিয়া মান্দারই ছিল বড় অবদান। সাবিন খাতুনেরর পাসে মারিয়া চমৎকার দক্ষতায় অতিথি দলের তিন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে যান। তার সামনে থাকা তহুরাকে ছেড়ে দেন বল। ডান পায়ের টোকায় বল জালে জড়াতে তহুরা মোটেও ভুল করেননি। কমলাপুরের দর্শকরা উপভোগ করেন কলসিন্দুরের দুই ফুটবলারের ডুয়েল ম্যাজিক। বিষয়টি নিয়ে রসিকতা করে তহুরা বলেন,‘মারিয়াকে আমি মাঠেই বলেছি, তোর গোল আমি নিয়েছি।’
জোড়া গোল পাওয়ার পর তহুরার সামনে ছিল হ্যাটট্রিক পাওয়ার সুযোগ। তবে ৮৬ মিনিটে তার জায়গায় মাঠে নামেন মাতসুশিমা সুমাইয়া। কোচ সাইফুল বারী টিটুকে সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। স্বাগতিক দলের কোচ বললেন সাফ কথা, ‘আধুনিক ফুটবলে এমন আলোচনা এখন হয় না। এটা আশির দশকে ছিল। দুই গোল করার পরও তার হ্যাটট্রিক করার সুযোগ ছিল। সেই সময় পারেনি।’