প্রথম আলোর প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের দ্রুত ও নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। নিউ ইয়র্কভিত্তিক সংগঠনটি জানায়, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। তার কাজ সংক্রান্ত তদন্ত বন্ধ করতে হবে।
বুধবার ২৯ মার্চ সিপিজে’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
সিপিজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার রাত ২টা ১৫ মিনিটে ঢাকার তেজগাঁও থানায় একটি মামলার তথ্য পাওয়া যায়। স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ওই মামলা করেছেন। কর্তৃপক্ষ সেটি তদন্ত করার কথা বলেছে। বুধবার রাত পর্যন্ত শামসুজ্জামানকে আদালতে নেওয়া হয়নি।
নিউ ইয়র্কে সিপিজের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর কার্লোস মার্টিনেজ দে লা সেরনা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেপ্তার ও হয়রানি কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো, যাতে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে শামসকে মুক্তি দিতে হবে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। যারা সরকারের সমালোচনা করেন, তাদের কণ্ঠরোধে এই আইন বার বার ব্যবহার করা হচ্ছে।
সিপিজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক একাধিকবার বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অভিযোগ দায়েরের পর অবিলম্বে কোনো সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হবে না। কিন্তু বারবার বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে কারাদণ্ড এবং সাংবাদিকদেরকে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে।
শামসুজ্জামানের বিষয়ে জানতে সিপিজের পক্ষ থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া দেয়নি ডিএমপি। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা কিবরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনিও কোনো মন্তব্য করেননি।
এর আগে বুধবার ভোররাত চারটার দিকে সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের আমবাগান এলাকায় শামসুজ্জামানের বাসায় ১৪-১৫ ব্যক্তি নিজেদের সিআইডি সদস্য পরিচয় দিয়ে শামসুজ্জামানের থাকার কক্ষ তল্লাশি করে তার ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ, দুটি মুঠোফোন ও একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক নিয়ে যান। পরে শামসুজ্জামানকে নিয়ে যান তারা।
উল্লেখ্য, গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে একটি ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ করে। একইসাথে সংবাদটি দৈনিক প্রথম আলো তাদের ফেসবুক পেজেও শেয়ার করে। সংবাদটিতে দেখা যায়, একটি শিশু ফুল হাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফটকে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিবেদকের দাবি, সেই শিশুটির নাম জাকির হোসেন। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, শিশু জাকির হোসেন বলে- পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কি করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।
পরে ৭১ টিভি চ্যানেলে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, প্রথম আলো উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা পরিচয় ও মিথ্যা উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদটি পরিবেশন করেছে। যে শিশুটির কথা প্রথম আলোর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে তার সম্পর্কে ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে। নাম পরিচয় ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। পত্রিকায় বলা হয় শিশুটির নাম জাকির হোসেন, কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায় ঐ শিশুর নাম সবুজ আহমেদ। তার বাড়ি সাভার থানাধীন কুরগাঁও পাড়ায় তার বাবা একজন পেশায় রাজমিস্ত্রি, মা মুন্নী বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে মেজো সন্তান সবুজ। প্রথম আলোর তথ্যে বলা হয়েছে, সে দিনমজুর। কিন্তু সাতবছরের শিশু সবুজ আহমেদ প্রথম শ্রেণিতে পড়াশুনা করে এবং স্কুল শেষে মাঝে মাঝে ফুল বিক্রি করে।
ওই প্রতিবেদনের প্রতিবেদক ছিলেন শামসুজ্জামান। এই ঘটনার জের ধরেই তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন সৈয়দ মোঃ গোলাম কিবরিয়া নামের এক ব্যক্তি।