চোখে দেখার আড়ালেও লুকায়িত থাকতে পারে আরেক সত্য যা কখনও কখনও মানুষের প্রাণের চেয়েও হয়ে উঠে মূল্যবান। নাট্যকার এস এম সোলায়মান ‘কোর্ট মার্শাল’ নাটকে এ সত্যকেই তুলে ধরেছেন।
শনিবার ৯ ডিসেম্বর রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সেলিম আল-দীন মুক্তমঞ্চে নাটকটির ২৫৩তম মঞ্চায়ন প্রদর্শন হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়ন সংসদ কর্তৃক আয়োজিত ৩ দিনব্যাপী কাউন্সিলের শেষ অধিবেশনে নাটকটি মঞ্চায়ন করে থিয়েটার আর্ট ইউনিট।
মুক্তিযুদ্ধোত্তর দেশে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ শক্তির দ্বন্দ্বই কোর্ট মার্শাল নাটকে প্রতিফলিত হয়েছে। ট্র্যাজিক পরিণতির এই নাটকে দেখা যায় বীরাঙ্গনার সন্তান সিপাহী আকবর দেশকে ভালোবাসেন। কিন্তু তার সহকর্মী মেজর এফ এ খান স্বাধীনতাবিরোধী। এফ এ খান সহ্য করতে পারেন না দেশপ্রেমী আকবরকে। তাকে চাকরের মতো কাজ করানোসহ নানাভাবে মানসিক নিপীড়ন করতেন। এমনকি আকবরের মা বীরাঙ্গনাকে নিয়ে কটুক্তি করেন। একপর্যায়ে নিপীড়ন থেকে বাঁচতে এফ এ খানকে খুন করতে উদ্যত হন আকবর। তবে ভুলবশত তিনি মেজর সাব্বিরকে হত্যা করেন। এ হত্যাচেষ্টার দায়ে আকবরের ফাঁসির আদেশ দেয় সামরিক আদালত। কেন এবং কীভাবে এই হত্যা এবং কী তার পরিণতি, সেটি নিয়েই ছিল এ নাটক।
এছাড়া, সবধরনের সামাজিক বিভেদের রেখা নিশ্চিহ্ন করে সত্যিকারের পক্ষপাতমুক্ত ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে শাসকশ্রেণির প্রতি আবেদন রেখেছে নাটকটি। কোন মিথ্যা অভিযোগে নিরপরাধ মানুষকে যেন প্রাণ দিতে না হয় এবং প্রকৃত সত্য মানুষের সামনে তুলে ধরাই এ নাটকের প্রতিপাদ্য। এই নাটকে সামাজিক শ্রেণিদ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক উত্তরাধিকার, সামন্ত প্রবৃত্তির উৎপীড়নের পাশাপাশি সত্য আবিস্কারে সংগ্রাম উঠে এসেছে। সমাজে মানুষকে মানুষ হিসেবে বাঁচতে দিতে হবে। তবেই মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। প্রয়োজনে একজন সৈনিক তার অধিকারের জন্য বিদ্রোহ করবে। কারণ বিদ্রোহের অধিকার মানুষের জন্মগত।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে আর্ট ইউনিটের শিল্পীরা অভিনয় করেন। নাটকটি দেখতে প্রায় সহস্রাধিক দর্শনার্থী জমায়েত হন। ১৯৯৩ সালের ৪ মার্চ মহিলা সমিতি মঞ্চে প্রথম মঞ্চস্থ হয় ‘কোর্ট মার্শাল’। এরপর গত ৩ দশক ধরে দেশ বিদেশে দর্শকদের মন কুড়িয়েছে।
২৫৩তম মঞ্চায়ন প্রসঙ্গে থিয়েটার আর্ট ইউনিটের সমন্বয়ক এবং বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল চন্দন রেজা চ্যানেল আইকে বলেন, বর্তমানে ধনীদের কাছে গরীবেরা জিম্মি। বড়লোকেরা অর্থের বিনিময়ে মুক্তি পায়। দরিদ্র সুবিচার পায় না। চোখে যা দেখি তা সবসময় সত্য নয়। একটা হত্যার মতো অপরাধের পেছনের কাহিনি আমাদেরকে বের করতে হবে৷ এধরনের অপরাধ যেন না হয় তার ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে অপরাধ কমে আসবে।