সোমবার সকাল থেকেই চীনের বেইজিং শহরের ট্রেন স্টেশনে এবং বিমানবন্দরগুলোতে দেখা গেছে ঘরমুখি মানুষের উপচে পড়া ভিড়। তবে এই ভিড় কোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে নয় বরং আতঙ্ককে কেন্দ্র করে। চীনে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্কের মুখোমুখি লুনার নববর্ষের ছুটিতে নিজ নিজ গ্রামে ফিরছেন শহরবাসী।
তিন বছর কঠোরভাবে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের মাথায় হঠাৎ গেল বছর ডিসেম্বরে চীন তাদের “জিরো কোভিড” নীতি পরিত্যাগ করে প্রায় ১৪০ কোটি জনসংখ্যাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে বলে ধারণা করছে বিশেষজ্ঞরা।
শনিবার কর্তৃপক্ষ জানায়, ৮ ডিসেম্বর থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মারা গেছেন। সময় মত সঠিক সংখ্যা না জানানোর জন্য চীনকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমালোচনার পড়তে হয়েছে। সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স একটি প্রতিবেদনে তথ্যটি নিশ্চিত করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন মৃতের যে সংখ্যা প্রকাশ করেছে সেখানে অনেকেই বাড়িতে পর্যাপ্ত চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন।
বিশেষজ্ঞরা আরও মনে করছেন, অবস্থার অপরিবর্তিত থাকলে চলতি বছর করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও ১০ লাখ মানুষ মারা যাবে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে লুনার নববর্ষ উদযাপনকে কেন্দ্র করে ঘরমুখি মানুষের ঢল গ্রামীণ অঞ্চলগুলোতে হাসপাতাল এবং চিকিৎসা ব্যবস্থায় খাতটির পরিমাণ বাড়াতে পারে।
একটি আঞ্চলিক সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে শানসি প্রদেশের ডাক্তার বলেন, আমাদের গ্রামে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রথম প্রবাহ শেষ হয়েছে। তবে আসন্ন লুনার উৎসবকে সামনে রেখে করোনার দ্বিতীয় প্রবাহ ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। বিশেষ করে গ্রামে যারা বয়স্ক মানুষ আছেন তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
এমন অবস্থায় বেইজিং এর ট্রেন স্টেশনগুলোতে মানুষের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
চীনের সাংহাই শহর থেকে রাতের রেল যোগাযোগ চালু করা হয়েছে জনতার চাহিদা পূরণে।
শনিবার ম্যাকাও জুয়ার কেন্দ্রস্থলে আগমন ৫৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, যা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ।
হংকং কর্তৃপক্ষ বলেছে যে, এটি ১৮ জানুয়ারি থেকে ২১ জানুয়ারি এর মধ্যে ৫০ হাজার জন থেকে প্রতিদিন ৬৫ হাজার জন লোককে নির্দিষ্ট স্থল সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ পয়েন্ট দিয়ে মূল ভূখণ্ডে নিয়ে যেতে পারবে।
এই সপ্তাহে বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক তথ্যের মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে যে চীনের নতুন বাড়ির দাম ডিসেম্বরে আবার কমেছে। কারণ কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব চাহিদাকে ব্যাহত করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, খুচরা বিক্রয় এবং সপ্তাহের শেষের দিকে শিল্প উত্পাদনের অন্যান্য ডেটা হতাশাজনক হবে বলে নিশ্চিত, তবে বাজারগুলি সম্ভবত অতীতের দিকে তাকাবে যে চীনের পুনরায় খোলার ফলে কীভাবে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি বাড়তে পারে। সংক্রমণের শিখর মার্চের পর থেকে একটি “টেকসই” অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে অনুঘটক করবে, বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে দ্বি-সংখ্যা বৃদ্ধির প্রত্যাশিত।
সংবাদ মাধ্যম রয়টার্সের একটি জরিপে দেখা গেছে,২০২৪ সাল আসার আগে চীনের পূর্ণ-বছরের প্রবৃদ্ধি ২০২৩ সালে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে।