চীন এই বছরের গ্রীষ্মে চরম তাপ এবং বিধ্বংসী বন্যা উভয়ই দেখেছে। এবারের বন্যা চীনে এমনসব অঞ্চলে আঘাত করেছে যেখানে এমন আবহাওয়ার কথা আগে কখনও শোনা যায়নি। বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করে চীনকে সতর্ক করে বলছে, সামনে আরও খারাপ পরিস্থিতি আসতে পারে।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে।
৩৮ বছর বয়সী এক চীনা নাগরিক ঝাং জুনহুয়া বলেন, আমি আমার পুরো জীবনে কখনও এখানে বন্যা দেখিনি। ধানে ভরা খেতগুলো আর কোনো কাজের না। বন্যার পানিতে সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। আমার পরিবার এবং আত্মীয়রা নিরাপদ আছেন। বন্যা থেকে বাঁচতে আমাদের উঁচু জমিতে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে আমাদের গ্রামে এমন অনেক বাসিন্দা আছেন যাদের এখন আর কিছু নেই।
উত্তর-পূর্ব চীনের হেইলংজিয়াং প্রদেশে ধ্বংসযজ্ঞ পুরো দেশের খাদ্য সরবরাহের উপর বড় প্রভাব ফেলেছে। চলতি মাসে চীনের বিখ্যাত উচাং ধানের ফসলের ৪০ শতাংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। যে জায়গাগুলো দেখতে সবুজ ছিল তা এখন বাদামী এবং মৃত।
৫৬ বছর বয়সী এক কৃষক ঝাও লিজুয়ান বলেন, যে ক্ষেতে আমরা আমাদের ফসল রোপণ করেছি সেগুলি সবই ডুবে গেছে। আমরা এই বছর আর রোপণ করতে পারব না। এই ক্ষতি অপূরণীয়। আমাদের এখানে হাজার হাজার একর ধানের ক্ষেত রয়েছে। যখন আমি এখানে পানি আসতে দেখেছিলাম, তখন আমি কেঁদেছিলাম। এতে সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে।
চীনে সাম্প্রতিক বন্যায় অন্তত ৮১ জন নিহত হয়েছে। তবে অর্থনৈতিক যন্ত্রণা আরও বেড়েছে। এমন একটি দেশ যা ইতিমধ্যে তিন বছরের কঠোর করোনভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার পরে পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই করছে সেখানে বন্যা পরিস্থিতি অর্থনীতির অবনতি নিয়ে এসেছে।
গত এক দশকের কিছু ব্যবধানে চীনে বন্যার সংখ্যা দশগুণ বেড়েছে। ২০১১ সালের গ্রীষ্মে চীনে মাসে ছয় থেকে আটটি বন্যা ছিল। গত বছর, জুলাই মাসে ১৩০ টির বেশি এবং আগস্টে ৮২টি বন্যা রেকর্ড করা হয়েছিল।
গ্রিনপিস ইস্ট এশিয়ার ডা. ঝাও লি বলেন, বন্যার সংখ্যা বৃদ্ধির আংশিক ব্যাখ্যা করা যেতে পারে, চীনে বন্যার তথ্য পর্যবেক্ষণ করে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এই পরিস্তিতির স্পষ্টভাবে একটি প্রধান ফ্যাক্টর। উষ্ণ তাপমাত্রা বাষ্পীভবনের হারকে বাড়িয়ে তুলতে পারে, যার ফলে বায়ুমণ্ডলে আরও আর্দ্রতা থেকে যায়। এই বর্ধিত আর্দ্রতার পরিমাণ আরও তীব্র বৃষ্টিপাত এবং হারিকেন , ঘূর্ণিঝড়সহ আরও ঘন ঘন এবং গুরুতর ঝড়ের দিকে পরিচালিত করে।
গত দুই বছর আগে জাতিসংঘের জলবায়ু প্যানেল ম্যাপিং ব্যবহার করে গ্রিনপিসের একটি গবেষণায় দেখা গেছে,বেইজিং এবং সাংহাইয়ের আশেপাশের প্রদেশগুলোতে এই শতাব্দীতে আরও বেশি তাপপ্রবাহ এবং চরম বৃষ্টিপাত বাড়বে।
চীন সরকারের নিজস্ব আবহাওয়া প্রশাসনের কর্মকর্তারা রিপোর্ট করেছেন,১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি থেকে চরম উচ্চ তাপমাত্রা এবং চরম বৃষ্টিপাত নিশ্চিতভাবে বেড়েছে। খরা বা আকস্মিক বন্যার চীনে আবহাওয়ার পরিবর্তনের ভয়াবহতা নির্দেশ করছে।