বিশ্বকাপে অসাধারণ, রোমাঞ্চকর ম্যাচ দেখল ভারত। ধর্মশালায় ৭৭১ রানের রোমাঞ্চে তাসমানপাড়ের শেষ হাসি হেসেছে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করে ৫ রানের হার দেখেছে নিউজিল্যান্ড। বৃথা গেছে রাচিন রবীন্দ্র ও জিমি নিশামের লড়াই।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ১৯ রান, বোলার মিচেল স্টার্ক। প্রথম বলে ট্রেন্ট বোল্ট এক রান নিয়ে স্ট্রাইক দেন নিশামকে। পরের বলে ওয়াইডসহ পাঁচ রান দেন স্টার্ক। পরের তিনটি বলে দুই করে মোট ছয় নিয়ে নিউজিল্যান্ডের শেষ দুই বলে লক্ষ্য দাঁড়ায় সাত রান। পঞ্চম বলে দুই রান নিতে গিয়ে রানআউট হন নিশাম, সেখানেই ম্যাচ হারে নিউজিল্যান্ড। শেষ বলে লোকি ফার্গুসন কোনও রান নিতে না পারলে ৫ রানের জয় পায় অস্ট্রেলিয়া।
অজিদের পাহাড়সম ৩৮৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দুই ওপেনার ডেভন কনওয়ে ও উইল ইয়াং ৬১ রানের কার্যকর জুটি গড়েন। এরপর প্রতিটি উইকেটই একটি কার্যকরী জুটি গড়ে উঠে যার নেতৃত্ব দেন বাঁহাতি রাচিন রবীন্দ্র। শেষদিকে জিমি নিশামের সাথে মিচেল স্যান্টনার, ম্যাট হেনরি এবং ট্রেন্ট বোল্টের সাথে ছোট ছোট জুটি হলেও শেষ রক্ষা হয়নি কিউইদের। ৫৮ রান করেন নিশাম।
আসরে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতকের দেখা পেয়েছেন বাঁহাতি ব্যাটার রাচিন রবীন্দ্র। ৮৯ বলে ১১৬ রানের ইনিংসে ৯টি চার এবং ৫টি ছক্কার মার রয়েছে। ৪১তম ওভারে অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের বলে ছক্কা হাকাতে গিয়ে লাবুশেনের হাতে ধরা পড়েন।
ইনফর্ম ব্যাটার ড্যারিল মিচেল ৫১ বলে ৫৪ রানের ইনিংস খেলেন। এরআগে তৃতীয় উইকেট জুটিতে মিচেল ও রাচিন দুজন মিলে ৯৬ রানের জুটি গড়েন। মিচেলের বিদায়ে অধিনায়ক টম ল্যাথামের সাথে ৫৪ এবং গ্লেন ফিলিপসের সাথে ৪৩ রানের আরেকটি জুটি গড়েন রাচিন।
অজিদের পক্ষে ১৮ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নিয়েছেন অ্যাডাম জাম্পা। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন পেসার জশ হ্যাজেলউড ও প্যাট কামিন্স।
শনিবার টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়া ৪৯.২ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ৩৮৮ রানে তোলে। ধর্মশালার মাঠে এটি ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বাধিক দলীয় সংগ্রহ। আগের রেকর্ডটি ছিল চলতি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের করা ৩৬৪, রেকর্ডটি আজ ভেঙেছে।
টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি টম ল্যাথামের। শুরুতেই উইকেট তুলে নিয়ে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলার পরিকল্পনা কাজে লাগাতে দেননি দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও ট্রাভিস হেড। অফফর্ম থেকে দারুণ প্রত্যাবর্তনে চলতি ওয়ানডে বিশ্বকাপে সম্ভাবনা জাগিয়েও টানা তিন সেঞ্চুরির দেখা পাননি ওয়ার্নার। তবে চোট থেকে ফিরেই ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শতক তুলেছেন হেড।
মাত্র ৪.১ ওভারে দলীয় ৫০ রান তোলে অজিরা, ৮.৫ ওভারে সেটি ১০০ রানের গণ্ডি ছাড়িয়ে যায়। ওয়ার্নার মাত্র ২৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন। হেড ছিলেন আরও আক্রমণাত্মক। কুশল মেন্ডিসের সঙ্গে যুগ্মভাবে চলতি বিশ্বকাপে ২৫ বলে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি তোলেন। ওয়ানডে বিশ্বকাপে অজিদের হয়ে যৌথভাবে দ্বিতীয় দ্রুততম ফিফটি পূরণ করেন হেড। ২০১৯ সালে ভারতের বিপক্ষে ২৫ বলে অর্ধশতক পান অ্যালেক্স ক্যারি। আফগানিস্তানের সঙ্গে ২১ বলে ফিফটি পেয়েছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
ওয়ানডেতে প্রথম ১০ ওভারে তৃতীয় সর্বোচ্চ দলীয় স্কোরটি পায় অস্ট্রেলিয়া। লিডসে ২০০৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ১০ ওভারে বিনা উইকেটে ১৩৩ রান তুলেছিল শ্রীলঙ্কা। ২০০৩ বিশ্বকাপে কানাডার সঙ্গে এক উইকেটে ১১৯ রান স্কোরবোর্ডে জমা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
রাচীন রবীন্দ্রের করা ১৭তম ওভারে দলীয় ১৫৫ রানেই ভাঙতে পারতো উদ্বোধনী জুটি। মিডউইকেটে থাকা গ্লেন ফিলিপস সহজ ক্যাচ মিস করায় ব্যক্তিগত ৭৫ রানে জীবন পান হেড। এর আগে মিচেল স্যান্টনারের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ৭০ রানে হেড বেঁচে যান। সুযোগ কাজে লাগিয়ে সেঞ্চুরি হাঁকাতে তিনি ভুল করেননি। ১৭৫ রানে ভাঙে অজিদের উদ্বোধনী জুটি। ৬৫ বলে ৫ চার ও ৬ ছক্কায় ৮১ রান দিয়ে ফিলিপসের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে আউট হন ওয়ার্নার। খানিক পরে ৫৯ বলে সেঞ্চুরির দেখা পান চোট থেকে ফেরা হেড। ফিলিপসের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৬৭ বলে ১০ চার ও ৭ ছক্কায় ১০৯ রানের ইনিংস খেলেন।
ব্যাটিংয়ে শুরুটা ভালো করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি স্টিভেন স্মিথ। মিড অফে ফিলিপসের বলে ট্রেন্ট বোল্টের হাতে সহজ ক্যাচ উপহার দিয়ে আসার আগে তিনি ১৭ বলে ২ চারে ১৮ রান তুলতে সক্ষম হন। স্মিথের বিদায়ের পরপরই সাজঘরে ফিরতে পারতেন মার্নাস লাবুশেন। ব্যক্তিগত এক রানের মাথায় বোল্টের বলে আপার কাট করেছিলেন অজি ব্যাটার। থার্ড ম্যানে ড্যারিল মিচেল বল তালুবন্দি করতে পারেননি। অল্প সময়ের ব্যবধানে জোড়া আঘাত হানেন মিচেল স্যান্টনার। বোল্ড হওয়ার আগে ৫১ বলে ২ চারে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন মিচেল মার্শ। ১৮ রানে ডিপ মিড উইকেটে রাচীনের হাতে ধরা পড়েন লাবুশেন।
নেমেই আগের ম্যাচে বিশ্বকাপের দ্রুততম সেঞ্চুরি পাওয়া গ্লেন ম্যাক্সওয়েল কিউইদের উপর তাণ্ডব চালান। জস ইংলিশের সঙ্গে ম্যাক্সওয়েল ষষ্ঠ উইকেটে দ্রুত ৫১ রান যোগ করেন। জেমি নিশামের বলে তালুবন্দি হওয়ার আগে এ অলরাউন্ডার ২৪ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৪১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন। বাদ যাননি অধিনায়ক প্যাট কামিন্সও, জস ইংলিশ তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে থাকেন। ৪৮তম ওভারে চারটি ছক্কায় দেন ২৭ রান। এ ওভারে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান কামিন্স।
৪৯তম ওভারে ইংলিশ, কামিন্স ও অ্যাডাম জাম্পার উইকেট তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার চারশোর পথ রুদ্ধ করেন ট্রেন্ট বোল্ট। মাত্র ১৪ বলে ২ চার ও ৪ ছক্কায় ৩৭ রান করেন কামিন্স। ২৮ বলে ৪টি চার ও এক ছক্কায় ৩৮ রানের ইনিংস খেলেন ইংলিশ। শেষ ব্যাটার হিসেবে রানের খাতা না খোলা মিচেল স্টার্ক আউট হলে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা অলআউট হয়।
কিউইদের পক্ষে ফিলিপস ৩৭ রান খরচায় দেন ৩ উইকেট। বোল্ট ৩ উইকেট পেলেও ৭৭ রান ব্যয় করেন। স্যান্টনার পান দুটি উইকেট।