শেষবারের মতো ড্রেসিং রুম থেকে বেরিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাট হাতে মাঠে প্রবেশ করছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের সকল দর্শক সিঁড়ি দিয়ে মাঠে নামার সময় দর্শকদের কেউ কেউ তাকে খানিকটা ছুঁয়ে যেন নিজেদের ভালোবাসা নিংড়ে দেন। অজি ওপেনার হাত বাড়িয়ে তা সাদরে গ্রহণ করেন। স্মরণীয় মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দি করতে ফটোগ্রাফাররা বাউন্ডারি লাইনের দড়ির কাছে তুলেছেন একের পর এক ছবি। সেখানেই ওপেনিংয়ে তার সঙ্গী উসমান খাজাকে জড়িয়ে ধরেন ওয়ার্নার।
সিডনির সবুজ মাঠে সাদা রঙে বড় অক্ষরে লেখা ছিল Thanks DAVE (ধন্যবাদ ডেভ)। উপরে হ্যাশট্যাগ দিয়ে লেখা ছিল তার টেস্ট ক্যাপ নম্বর ৪২৬। লেখার ডানপাশে তার হাত মুষ্টিবদ্ধ করে লাফিয়ে উদযাপনের ট্রেডমার্ক উদযাপনের ছবিটিও শোভা পাচ্ছিল। বাইশ গজে কাছে গিয়ে পেলেন পাকিস্তান দলের গার্ড অব অনার, দুই ফিল্ড আম্পায়ারও তাতে শামিল হন। গ্যালারিতে থাকা তার পরিবারের সদস্যরাও করতালি দিয়ে সময়টাকে স্মরণীয় রাখেন।
ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ইনিংসে ৫৭ রান করে সাজঘরে ফেরেন ওয়ার্নার। ৮ উইকেটের জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজ পাকিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেছে অস্ট্রেলিয়া। সবকিছু ছাপিয়ে ৩৭ বর্ষী বাঁহাতি ব্যাটারের রূপকথার মতো বিদায়টাই হয়ে রইল আলোচিত ঘটনা।
সিরিজের শেষ টেস্টে পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে ৩১৩ রানের জবাবে ২৯৯ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া। চতুর্থ দিনে সফরকারীরা দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১১৫ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর ২ উইকেট হারিয়ে ১৩০ রানের লক্ষ্যে অজিরা পৌঁছে যায়।
এ জয়ের ফলে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ২০২৩-২৫ চক্রের টেবিলের শীর্ষে উঠেছে অস্ট্রেলিয়া। ৮ ম্যাচে ৫ জয়, এক ড্র ও ২ হারে ৫৬.২৫ শতাংশ গড় পয়েন্ট নিয়ে একধাপ উপরে উঠেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ষষ্ঠ স্থানে থাকা পাকিস্তানের পাঁচ ম্যাচে ২ জয় ও ৩ হারে গড় পয়েন্ট ৩৬.৬৬ শতাংশ।
অজিদের জয়ে দুইয়ে নেমে যাওয়া ভারতের চার খেলায় দুই জয়, এক ড্র ও এক হারে গড় পয়েন্ট ৫৪.১৬ শতাংশ। সাউথ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড ও বাংলাদেশ দুই ম্যাচে এক জয় ও এক হারে ৫০ শতাংশ গড় পয়েন্টে যথাক্রমে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে আছে।
সাতে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আটে থাকা ইংল্যান্ডের গড় পয়েন্ট যথাক্রমে ১৬.৬৭ ও ১৫ শতাংশ। দুই ম্যাচের সবকটিতে পরাজিত হওয়ায় পয়েন্টের দেখা পায়নি টেবিলের তলানির শ্রীলঙ্কা।
১৩০ রানের লক্ষ্যে দলীয় রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফেরেন উসমান খাজা। সাজিদ খানের বলে তিনি লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন। এরপর সিডনির দর্শকরা উপভোগ করতে থাকে ওয়ার্নার ও লাবুশেনের জুটি। দ্বিতীয় উইকেটে তারা গড়েন ১১৯ রানের জুটি, দুজনেই হাঁকান ফিফটি।
ওয়ার্নার ৭৫ বলে ৭ চারে খেলেন ৫৭ রানের ইনিংস। সাজিদের বলে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে গেলে বল তার প্যাডে আঘাত হানে। লেগ বিফোরের আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলেও রিভিউতে সফল হয় পাকিস্তান। শেষ হয় ওয়ার্নারের রাজকীয় টেস্ট ক্যারিয়ার। মাঠে তৈরি হয় আবেগঘন মুহূর্ত। প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা এগিয়ে এসে তার সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিদায় জানান। আবারো ২৪ হাজার ২২০ জন দর্শকের হাততালিতে মুখরিত তখন গোটা গ্যালারি। দুই হাত প্রসারিত করে সবার অভিবাদন গ্রহণ করেন অভিজ্ঞ এ ক্রিকেটার। সিঁড়ি দিয়ে ড্রেসিং রুমে যাওয়ার আগে এক বাচ্চাকে নিজের হেলমেড আর গ্লাভস উপহার দিয়ে আবেগঘন মুহূর্তের জন্ম দেন।
স্টিভেন স্মিথকে নিয়ে বাকি কাজটা সহজেই শেষ করেছেন ৭৩ বলে ৯ চারে ৬২ রানে অপরাজিত থাকা লাবুশেন। ৮ উইকেটের জয়ে মাঠ ছাড়ে অস্ট্রেলিয়া।
এর আগে ৭ উইকেটে ৬৮ রান নিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করে পাকিস্তান। দলীয় স্কোর একশ পেরোনোর পর সাজঘরে ফেরেন ২৮ রানের ইনিংস খেলা মোহাম্মাদ রিজওয়ান। এরপর আমের জামাল ১৮ ও হাসান আলী এক রানে বিদায় নিলে অতিথিদের ইনিংস থামে।
অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে জশ হ্যাজেলউড ৪টি ও নাথান লায়ন ৩টি উইকেট পান।
প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে ৮২ রান ও বল হাতে ৬ উইকেট পাওয়ায় ম্যাচ সেরা হন আমের। ১৯ উইকেট পাওয়ায় সিরিজসেরা হন অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স।