২৯২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ২০ ওভারের মধ্যে দলীয় শতরানের আগেই ৭ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছিল তারা। সেখান থেকে মহাকাব্য রচনা করলেন অজিদের স্পিনিং অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। অসংখ্য রেকর্ড গড়ে ১৯ বল হাতে রেখে ৩ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে অজিরা। এবারের আসরের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকাল ম্যাক্সওয়েল। আফগানিস্তানকে হারিয়র এক ম্যাচ হাতে রেখে সেমিফাইনালও নিশ্চিত করলো দলটি।
মহাকাব্যিক এ ইনিংসের পথে এবারের আসরের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২০১ রানের ইনিংসটি খেলেছেন ম্যাক্সওয়েল। ওয়ানডেতে অষ্টম উইকেটের জুটিতে গড়েছেন বিশ্ব রেকর্ড। খেলেছেন নিজের ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটিও। ২০২ রানের ম্যাক্সওয়েল-কামিন্স জুটি অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসেও অষ্টম উইকেটে সর্বোচ্চ। এছাড়া দ্রুততম সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় অবস্থানে ৩৫ বর্ষী এ অলরাউন্ডার। শীর্ষে ভারতের ঈশান কিষাণ। ১২৬ বলে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন ভারতীয় এই ব্যাটার।
৮ ম্যাচ খেলে ১২ পয়েন্ট নিয়ে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা টেবিলের তিনে থেকে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে। সমান সংখ্যক ম্যাচ খেলে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ছয়ে রয়েছে আফগানরা। ম্যাচসেরা হয়েছেন ম্যাক্সওয়েল।
২৯২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই আফগান পেসের তোপের মুখে পড়েন দুই বাঁহাতি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও ট্রাভিস হেড। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ২ বল খেলে কোনো রান যোগ না করেই নাভিন উল হকের বলে সাজঘরে ফিরে যান মারকুটে হেড। তিনে নামা মিচেল মার্শও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি, ১১ বলে ২৪ রানের ইনিংস খেলে ষষ্ঠ ওভারে নাভিনের বলে আউট হন। তার আগে ওয়ার্নারের সাথে ৩৯ রানের জুটি গড়েন।
নবম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন পেস অলরাউন্ডার আজমতউল্লাহ ওমরজাই। ওই ওভারে ফেরান ওপেনার ওয়ার্নার (১৮) ও উইকেটকিপার জশ ইংলিশকে (০)। এরপর ইনিংস মেরামতের কাজে লাগেন মার্নাস লাবুশেন ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। পঞ্চম উইকেটের এ জুটি ৩৫ বলে ২০ রান করে রানআউটে কাটা পড়েন লাবুশেন, করেন ২৮ বলে ১৪ রান। ১৯তম ওভারে ৯১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে বসে অজিরা।
মিচেল স্টার্ক-মার্কাস স্টয়নিসদের আসা-যাওয়ার মাঝে অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের সাথে বড় জুটি গড়েন চোট থেকে ফেরা ম্যাক্সওয়েল। অষ্টম উইকেটে এ দুই ব্যাটারের অনবদ্য জুটি ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। চাপের মুখে ব্যাট করতে থাকা ম্যাক্সওয়েল ৩৩তম ওভারে এ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় ও ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেন। সেঞ্চুরি করতে ৭৬ বল খেলেন যার মধ্যে ১০ টি চার ও ৩টি ছক্কার মার রয়েছে। ৩৪তম ওভারে এ জুটিতে শতরান পূর্ণ হয়।
অষ্টম উইকেটে রেকর্ড পার্টনারশিপ গড়েন ম্যাক্সওয়েল ও কামিন্স। ওয়ানডেতে এর আগের রেকর্ডটি ছিল সাউথ আফ্রিকার জাস্টিন কেম্প ও এজে হলের। ২০০৬ সালে কেপটাউনে ১৩৮ রানের জুটি গড়েছিলেন এ দুই ব্যাটার। ৪২তম ওভারে ওই পার্টনারশিপকে ছাড়িয়ে যান এ দুই অজি ব্যাটার। শেষপর্যন্ত ২০২ রানে অবিচ্ছিন্ন থাকে এ জুটি।
২০১ রানের ইনিংস খেলতে ম্যাক্সওয়েল খেলেছেন ১২৮ বল। তার এ ইনিংসে চারের মার রয়েছে ২১টি এবং ছক্কার মার রয়েছে ১০টি। দীর্ঘ এ পথে তাকে যোগ্য সঙ্গ দেয়া কামিন্স করেছেন ১২ রান। এর জন্য অবশ্য তিনি খেলেছেন ৬৮টি বল।
আফগানিস্তানের পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন পেসার নাভিন, ওমরজাই এবং স্পিনার রশিদ খান।
এরআগে, ওপেনার ইব্রাহিম জাদরানের প্রথম বিশ্বকাপ সেঞ্চুরিতে আফগানিস্তান ২৯২ রানের লক্ষ্য দেয় অস্ট্রেলিয়াকে। ১৪৩ বলে ১২৯ রানে অপরাজিত থাকেন জাদরান, করেন পুরো ৫০ ওভার ব্যাট। শেষদিকে জাদরানকে যোগ্য সঙ্গ দেয়ার সাথে ঝড়ো ইনিংস খেলেন রশিদ খান। ডানহাতি ব্যাটার ১৮ বলে ৩৫ রানের মূল্যবান ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন।
মঙ্গলবার মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন আফগান অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহিদী। দেখেশুনে ধীরস্থির শুরু করেন দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ এবং ইব্রাহিম জাদরান। অষ্টম ওভারে এসে প্রথম সাফল্য পায় অস্ট্রেলিয়া, ২৫ বলে ২১ রান করা গুরবাজের উইকেট তুলে নেন জশ হ্যাজেলউড। উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৩৮রান।
তিনে নামা রহমত শাহের সাথে জুটি গড়েন জাদরান। ১০০ বল খেলা এ জুটিতে আসে ৮৩ রান। ৪৪ বল খেলে ৩০ রান করা রহমতকে ফেরান চোট থেকে ফেরা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। এসময় নিজের অর্ধশতক তুলে নেন জাদরান। চতুর্থ উইকেট জুটিতে অধিনায়ক শহিদীর সাথে জুটি গড়েন জাদরান। এ জুটিতে আসে ৫২ রান, ২৬ রান করে মিচেল স্টার্কের বলে বোল্ড হন শহিদী। পরে মোহাম্মদ নবীকে নিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন জাদরান।
অস্ট্রেলিয়ার পেসার জশ হ্যাজেলউড ৯ ওভারে ৩৯ রানে ২ উইকেট নেন। স্টার্ক, ম্যাক্সওয়েল ও অ্যাডাম জাম্পা একটি করে উইকেট নেন।