বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের এক চতুর্থাংশ মানুষ হাইপারটেনসিভ। হাইপারটেনশন যাতে না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে।
রোববার ৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ব্লক মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল সাব কমিটি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন: অপারেশন করার আগে ব্লাড প্রেসার বেশি থাকলে অপারেশন করা যায় না। যে রোগীকে ট্রিটমেন্ট দিয়ে যাচ্ছেন, সে রোগীকে কত পর্যন্ত ব্লাড প্রেসার রাখা লাগবে তা অবশ্যই চিকিৎসককে জানতে হবে। যারা মোটা তাদের প্রেসার একরকম, স্মোকারদের প্রেসার একরকম হবে। হাইপারটেনশন হলে হার্ট অ্যাটাক হবে, কার্ডিও মাইয়োপ্যাথি হবে, নিউরোলজিক্যাল ডিসওডার হয়ে স্ট্রোক হবে, চোখে রেটিনোপ্যাথি হবে, নেত্রোপ্যাথি হবে।
তিনি আরও বলেন, যারা বয়স্ক তাদের অবশ্যই নিয়মিত ব্লাড প্রেসার মাপতে হবে। যাদের বয়স তিন থেকে দশ বছর তাদের ব্লাড প্রেসার মাপতে হবে। যারা মোটা তাদের নিয়মিত প্রেসার চেক আপ করতে হবে। যারা সুগার খান তারা মাঝে মাঝে প্রেসার চেক আপ করতে হবে। কাঁচা লবণ খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে।
সেমিনারে বলা হয়, শুধু বাংলাদেশ নয় সারাবিশ্বের একটি বড় বার্ডেন হাইপারটেনশনসহ সকল রোগের চিকিৎসা শুরু হয় রোগ নির্ণয়ের প্যারাম্যাটার বা পরিমাপ দিয়ে। এজন্য পরিমাপটা যথাযথ হতে হয়। ব্লাড প্রেসার মাপার পূর্ব শর্ত হলো, সঠিক মাপের কাপ ব্যবহার করা। বয়স ভিত্তিক চেকাপ ফলো করা উচিত। ব্লাড প্রেসার অবশ্যই দু’হাতের বাহুতে মাপতে হবে। যদি দুটি হাতের প্রেসারের তারতম্য থাকে তবে অবশ্যই যেটির প্রেসার বেশি সেটি সঠিক পরিমাপ হিসেবে নিতে হবে। যখন রোগীর প্রেসার মাপা হয় তখন রোগীকে অবশ্যই তার পিছনে ভরের সাপোর্ট নিয়ে বসতে হবো, পা আড়াআড়ি করে বসা যাবে না। ব্লাড প্রেসার মাপার আগে অবশ্য পাঁচ মিনিট আরামে চুপচাপ বসে থাকতে হবে। প্রেসার পরিমাপের জন্য সারা বিশ্বের বিভিন্ন গাইডলাইন আছে।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে যতগুলো প্রেসার মাপার যন্ত্র আসছে সেগুলো চাহিদা মাফিক মানদণ্ডের নয়। দিন দিন যত মেশিনপত্র বাইরে থেকে আসছে তত মান খারাপ হচ্ছে। তবে সময়ের পরিক্রমায় ডিজিটাল প্রেসার মেশিনের চাহিদা বাড়ছে এমন দিন আসবে যেদিন সকলেই ঘরে বসে ব্লাড প্রেসার মাপবেন। রোগীর জন্য নির্ধারিত প্রেসক্রাইভড ওষুধ খেতে হবে। এজন্য সকল জায়গায় সরকারি ওষুধ সরবরাহ বাধ্যতামূল করতে হবে। হাইপারটেনশন প্রতিরোধের জন্য ধুমপান বন্ধ করা, এলকোহল পান বন্ধ করা, নিয়মিত শরীর চর্চা করা উচিত। এছাড়া ওজন কমানো, হৃদরোগ প্রতিরোধে খাবার লবণ কম খাওয়া, প্রতিদিন সবজি বা ফল খেতে হবে, খাদ্যে স্বাস্থ্যসম্মত তেল ব্যবহার, লাল মাংস কম খাওয়া , সুগার কম খাওয়া, মাছ খাওয়া এবং ওমেগা ও ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার সপ্তাহে দুবার খেতে হবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, ইউজিসি অধ্যাপক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সজলকৃষ্ণ ব্যানার্জী। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল সাব কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সেন্ট্রাল সাব কমিটির সদস্য সচিব নিউরোলজি বিভাগের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সবুজ ও রেসপেরিটোরি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সম্প্রীতি ইসলাম।
সেমিনারে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক, কনসালটেন্ট, চিকিৎসক ও রেসিডেন্টরা উপস্থিত ছিলেন।