ঈদুল আজহার আগে ও পরে ১৫ দিনে (২৩ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত) দেশে মোট ৩০৩টি সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে। এতে নিহত হয়েছেন ৩২৪ জন। এছাড়াও আহত হয়েছেন অন্তত ৬৩১ জন। এদের মধ্যে নারী ৬১ এবং শিশু নিহত হয়েছে ৭২ জন।
শুক্রবার ১৪ জুলাই রোড সেফটি ফাউন্ডেশন থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, এই ১৫ দিনে মোট ১১৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা হয়। যেখানে নিহত হয় ১০৬ জন, যা মোট নিহতের ৩২ দশমিক ৭১ শতাংশ। আর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৮ দশমিক ৬১ শতাংশ।
এছাড়াও দুর্ঘটনায় ৬৯ জন পথচারী নিহত হয়েছেন বলে জানায় সংস্থাটি, যা মোট নিহতের ২১ দশমিক ২৯ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৪৭ জন, অর্থাৎ ১৪ দশমিক ৫০ শতাংশ।
এই সময়ের মধ্যে ১৪টি নৌ-দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত হন। এছাড়া ও আহত হয়েছেন ২৬ জন আহত। নিখোঁজ রয়েছে ১৩ জন। ২৭টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত এবং ১৬ জন আহত হয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়- মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১০৬ জন (৩২.৭১%), বাস যাত্রী ১০জন (৩.০৮%), ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি আরোহী ২৪ জন (৭.৪০%), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স আরোহী ২৫জন (৭.৭১%), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-ম্যাক্সি) ৭০জন (২১.৬০%), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-টমটম-মাহিন্দ্র) ১১ জন (৩.৩৯%) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা আরোহী ৯ জন (২.৭৭%) নিহত হয়েছে।
দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৩১টি (৪৩.২৩%) জাতীয় মহাসড়কে, ১১৫টি (৩৭.৯৫%) আঞ্চলিক সড়কে, ৩৭টি (১২.২১%) গ্রামীণ সড়কে এবং ২০টি (৬.৬০%) শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন
দুর্ঘটনাসমূহের ৫৭টি (১৮.৮১%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৪৯টি (৪৯.১৭%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৭২টি (২৩.৭৬%) পথচারীকে চাপা/ ধাক্কা দেওয়া, ২৫টি (৮.২৫%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করার কারণে ঘটেছে।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ধরন ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে আক্রান্ত হয়েছে ২০.৪৮%, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৬.৫০%, মোটরসাইকেল অন্য যানবাহন দ্বারা ধাক্কা/ চাপায় আক্রান্ত হয়েছে ৩৯.৭৫%, মোটরসাইকেল পথচারীকে ধাক্কা/ চাপা দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে ৮.৪৩% এবং সড়কের গর্ত ও স্পিড ব্রেকারের কারণে মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে ৪.৮১%।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত চালক ও আরোহীদের মধ্যে ৫২.৮৩ শতাংশের বয়স ১৪ থেকে ২০ বছর।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে- ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ ভ্যান-র্যাবের পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-লং ভেহিক্যাল, তেলবাহী ভাউচার ২২.৩৩%, যাত্রীবাহী বাস ১৬.৪১%, প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স-পাজেরো-জীপ ৭.৬১%, মোটরসাইকেল ২০.৬৪%, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-ম্যাক্সি) ১৯.৯৬%, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-ভটভটি-মাহিন্দ্র-টমটম-লাটাহাম্বা-স্টীয়ারিং গাড়ি) ৮.৭৯%, বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা ২.৭০% এবং অজ্ঞাত গাড়ি ১.৫২%।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৫৯১ টি। বাস ৯৭, ট্রাক ৫৮, কাভার্ডভ্যান ১৫, পিকআপ ভ্যান ৩৮, র্যাবের পিকআপ ১, ট্রাক্টর ৭, ট্রলি ৮, লরি ৩, তেলবাহী ভাউচার ১, লং ভেহিক্যাল ১, মাইক্রোবাস ১৮, প্রাইভেটকার ১৬, অ্যাম্বুলেন্স ৬, পাজেরো ৩, জীপ ২, মোটরসাইকেল ১২২, থ্রি-হুইলার ১১৮ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-ম্যাক্সি), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৫২ (নসিমন-ভটভটি-টমটম-মাহিন্দ্র-লাটাহাম্বা-স্টীয়ারিং গাড়ি), বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা ১৬ এবং অজ্ঞাত গাড়ি ৯টি।
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ
সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়- দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৪.৯৫%, সকালে ৩০.০৩%, দুপুরে ১৯.১৪%, বিকালে ২০.১৩%, সন্ধ্যায় ৬.২৭% এবং রাতে ১৯.৪৭%।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ৩০.৬৯ শতাংশ, আর প্রাণহানি ৩০.৫৫ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১২.২১ শতাংশ, আর প্রাণহানি ১৩.৮৮শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৬.৮৩ শতাংশ, আর প্রাণহানি ১৫.৪৩ শতাংশ, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ৯.৯০ শতাংশ, আর প্রাণহানি ১১.৭২ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৪.৬২ শতাংশ, আর প্রাণহানি ৪.৫৮ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৩.৯৬ শতাংশ, আর প্রাণহানি ৪.৯৩ শতাংশ।