গেল বছর বলিউডে মুক্তি পেয়েছে শতাধিক ছবি। এরমধ্যে তুমুল আলোচিত ছবির সংখ্যাও বিগত যে কোনো বছরের তুলনায় অধিক। বাজিমাত করেছেন শাহরুখ, সানী দেওল, রণবীরের মতো ইন্ডাস্ট্রির পোস্টারবয় মুখগুলোই। ব্যতিক্রম যে ঘটেনি, তা নয়।
তবে যে ব্যতিক্রম সবাইকে চমকে দিয়েছে, সেটি হলো অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া বিধু বিনোদ চোপড়া পরিচালিত ‘টুয়েলভথ ফেল’! মাত্র ২০ কোটি রুপি ব্যয়ে নির্মিত এই ছবি সীমিত সংখ্যক প্রেক্ষাগৃহে ভারতে মুক্তি পায় গত ২৭ অক্টোবর। কম স্ক্রিনে মুক্তি পেলেও ছবিটি নিয়ে মুক্তির পর থেকেই দর্শক উন্মাদনার খবর পাওয়া যাচ্ছিলো নিয়মিত। সেই সঙ্গে বক্স অফিস রিপোর্টও ছিলো অপ্রত্যাশিত!
ছবিতে তারকা মুখ না থাকলেও ছবিটি তার নিজ গুণেই যে দর্শক খোঁজে নিচ্ছে, তা বুঝতে বাকি থাকে না। মূলত ‘টুয়েলভথ ফেল’ এর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে উঠেন স্বয়ং দর্শকই! প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির সময় এমন আলোচনায় চলছিলো ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে! ছবিটি নিয়ে দর্শক থেকে সমালোচকদের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার কারণে বাংলাদেশি দর্শকের কাছে তৈরী হয় আগ্রহ! আর সেই আগ্রহের যেন চূড়ান্ত প্রতিফলন দেখা যায় গত ২৯ ডিসেম্বর ওটিটিতে মুক্তির পর!
এদিন ডিজনি হটস্টারে স্ট্রিমিং হয় গেল বছরের তুমুল আলোচিত ছবি ‘টুয়েলভথ ফেল’। ছবিটি ওটিটিতে মুক্তির তিন দিনেই করে বিরল রেকর্ড! ডিজনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ২০২৩ সালে ডিজনি হটস্টারে রিলিজ হওয়া সব ছবির ওয়াচটাইমকে অতিক্রম করে এক নম্বর তালিকায় নিজের জায়গা পোক্ত করেছে ‘টুয়েলভথ ফেল’, আর সেটি হয়েছে মাত্র তিন দিনে! এরআগে কোনো সিনেমার ক্ষেত্রে এমন দর্শক উন্মাদনা দেখা যায়নি!
ওটিটিতে রিলিজের পর ছবিটি ভারতীয়দের পাশাপাশি বাংলাদেশি দর্শকরাও লুফে নেয়। আর সব শ্রেণির দর্শকের এই সিনেমাটি লুফে নেয়ার অন্যতম কারণ, ছবির গল্প! মনোজ কুমার শর্মার বাস্তব জীবনের গল্প নিয়ে ভারতীয় লেখক অনুরাগ পাঠকের লেখা উপন্যাস অবলম্বনে তৈরী ‘টুয়েলভথ ফেল’। যেখানে দেখানো হয়েছে কীভাবে চরম দারিদ্রতা মোকাবেলা করে, বার বার ব্যর্থ হয়েও হার না মানা একজন সাধারণ ছেলে হয়ে উঠেন ভারতীয় পুলিশ সার্ভিস অফিসার (আইপিএস)! নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের আবেগকে খুব দারুণভাবে ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে। ছবিতে মূখ্য চরিত্র মনোজের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বিক্রান্ত ম্যাসি। এছাড়া আছেন মেধা শঙ্কর, সঞ্জয় বিষ্ণোই এবং প্রিয়াংশু চ্যাটার্জি।
তবে মজার বিষয় হচ্ছে, বিধু বিনোদ চোপড়া সিনেমা তৈরীর আগে বাস্তবের মনোজের সাথেও যোগাযোগ করেন। ‘টুয়েলভথ ফেল’ নির্মাণ প্রক্রিয়ার সাথেও বাস্তবের মনোজের যোগ ছিলো বলেই জানা যায়।
আইপিএস হয়ে উঠতে মনোজ কুমার শর্মার লড়াই সবাই দেখেছেন পর্দায়। সেই অফস্ক্রিনের মানুষটি সম্পর্কে জানা যায়, মনোজ ১৯৭৭ সালে মধ্যপ্রদেশের মোরেনা জেলায় অবস্থিত একটি ছোট গ্রাম বিলগাঁওতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা কৃষি বিভাগে কর্মরত ছিলেন। পড়াশোনার প্রতি মনোজের বিশেষ আগ্রহ ছিল না এবং কোনোক্রমে তিনি তার স্কুল শিক্ষা শেষ করেন। নবম এবং মাধ্যমিকে তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তারপরে কোনোভাবে তিনি একাদশ শ্রেণীতে পাশ করতে পেরেছিলেন। এরপর উচ্চ মাধ্যমিকে হিন্দি ছাড়া বাকি সব বিষয়ে ফেল করেন মনোজ।
মনোজের সেই ১২ ক্লাস ফেল করার পর একটি ঘটনাই বদলে যায় তার জীবন। সিনেমাতেও সেই প্রসঙ্গটি এসেছে। এরপরেই মূলত শুরু হয় মনোজের আসল লড়াই। যে লড়াইয়ে এক বন্ধুকে যেমন পাশে পান, তেমনি পেয়েছিলেন প্রেমিকা শ্রদ্ধাকে। নিজের লক্ষ্যে পৌঁছুতে তিন তিনবার ব্যর্থ হওয়ার পর চতুর্থবারে যে সফলতা আসে, তার পেছনে যাদের অবদান; তাদের ভুলে যাননি মনোজ। ছবির গল্প তাকে ঘিরে নির্মিত হলেও সেই মানুষগুলোর অবদানও খুব দারুণভাবে সিনেমা তুলে ধরেছেন বিধু বিনোদ চোপড়া!
আরেকটি মজার তথ্য হলো, ‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমায় ক্যামিও চরিত্রেও ছিলেন বাস্তবের মনোজ-শ্রদ্ধা! যদিও তাদেরকে ছবিতে তাদের আলাদা করে খেয়াল করার সুযোগ ছিলো না!
টুয়েলভথ ফেল পরিচালক: বিধু বিনোদ চোপড়া অভিনয়ে: বিক্রান্ত ম্যাসি, মেধা শঙ্কর, সঞ্জয় বিষ্ণোই এবং প্রিয়াংশু চ্যাটার্জি। বাজেট: ২০ কোটি রুপি প্রেক্ষাগৃহ থেকে আয়: ৬৬ কোটি রুপি ওটিটি সত্ব: ডিজনি হটস্টার, ২০ কোটি রুপি