একে মৌসুমের প্রথম এল ক্ল্যাসিকো, আবার বিলম্বিত। অপেক্ষারত ফুটবলপ্রেমীদের উত্তেজনার সঙ্গে যোগ হয় কাতালান স্বাধীনতাকামীদের উত্তাপ। প্রত্যাশার পারদ আকাশচুম্বী। মাঠে, মাঠের বাইরে, না জানি কী হয়! শেষে যা হল তেমন ফলের প্রত্যাশা নিশ্চয় করেনি ভক্তরা।
ঘরের মাঠে লিওনেল মেসিরা যেন খেললেন অতিথি হয়ে, তাদের উপর ছড়ি ঘোরাল চোটজর্জর রিয়াল মাদ্রিদ। আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণে ঠাসা খেলা। শেষে গোলশূন্য ড্র। যা কিনা ১৭ বছর পর প্রথম।
পূর্ণ শক্তির দলই বুধবার রাতে পেয়েছিলেন বার্সেলোনা কোচ আর্নেস্টো ভালভার্দে। উল্টো দিকে দলের একটা অংশকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে ন্যু ক্যাম্পে এসেছিলেন রিয়াল কোচ জিনেদিন জিদান। দলে নেই এডেন হ্যাজার্ড থেকে শুরু করে মার্সেলোর মতো অভিজ্ঞরা। শক্তি যেমনই হোক, রণকৌশলই যে আসল সেটাই প্রমাণ করেছেন জিজু। তাতেই মার খেয়ে গেছেন ভালভার্দে।
স্কোয়াডের কাহিল অবস্থা বুঝে ৪-৩-৩ ফর্মেশন থেকে বেরিয়ে এসে ৪-৪-২ ফরম্যাটে দল সাজিয়েছিলেন জিদান। সামনে রাখেন করিম বেনজেমা ও গ্যারেথ বেলকে। রক্ষণে সার্বক্ষণিক তিনজনকে রেখে মাঝমাঠের দখল দিলেন চার মিডফিল্ডারকে। এই চারজন বার্সার মাঝমাঠকে গোছানোর সুযোগই দেননি। তারসঙ্গে লেফটব্যাক থেকে ফার্লান মন্ডির দারুণ সঙ্গ মার্সেলোর অভাবটা বুঝতেই দিলো না। মাঝমাঠ থেকে আবার ইস্কোর উইঙ্গার বনে যাওয়ায় কখন ফর্মেশন ৪-৩-৩ হয়ে গেলও তা বুঝে ওঠাই দায়!
সেখানে শুরুতেই গলদ বার্সার স্কোয়াডে। অভিজ্ঞ সার্জিও বুস্কেটসকে কেন বসিয়ে রাখলেন ভালভার্দে সেটা তিনিই ভালো জানেন। প্রথম এল ক্ল্যাসিকো খেলতে নামা ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং দারুণ খেললেন বটে, কিন্তু বুস্কেটসের অভাবটা পূরণ করতে পারলেন না। মাঝমাঠ থেকে বল না পেয়ে বাধ্য হয়ে মেসিকেই বরং বারবার নেমে আসতে হয়েছে।
মাঝমাঠের দখলের সঙ্গে কার্যকরী কাউন্টার অ্যাটাক, বার্সাকে গোল হজম করাতে না পারাটাই ম্যাচে রিয়ালের একমাত্র ব্যর্থতা। রিয়াল যেভাবে খেলেছে, ধারাভাষ্যকাররা বলেই বসলেন ‘এ যেন ঘরের মাঠের রিয়াল!’ নিজ মাঠে বার্সা যেন দর্শক। গোলমুখে রিয়ালের ৬ শটের বিপরীতে মাত্র ৩ শট নিতে পারাটাই তার প্রমাণ।
সুযোগ যে একেবারেই পায়নি বার্সা এমনও নয়। ৬০ মিনিটের মাথায় পরপর মেসি ও সুয়ারেজ গোলমুখে ঠিকঠাক শট নিতে না পারাটা স্বাগতিকদের বেহাল অবস্থা প্রমাণ করেছে। মিনিট দশেক বাদে পোস্টের খুব কাছ থেকে সুয়ারেজের বল উড়িয়ে বাইরে পাঠানোটা বার্সার জ্বালা বাড়িয়েছে।
উল্টোদিকে ম্যাচের ফলটা যেতে পারতো রিয়ালের দিকেই। বেনজেমা দুবার জায়গামত বল পেয়েও তুলে দিয়েছেন বার্সা গোলরক্ষক টের স্টেগেনের হাতে। ৭২ মিনিটে বেল বলই ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন জালে। তবে মন্ডির অফসাইডের কারণে তিন পয়েন্ট পাওয়া হয়নি লস ব্লাঙ্কোসদের।
প্রথম এল ক্ল্যাসিকো ফলহীন হওয়ায় সমস্ত উত্তেজনা জমা হয়ে রইলো মৌসুমের দ্বিতীয় মহারণের জন্য। ১৭ ম্যাচে বার্সা-রিয়াল দুদলেরই পয়েন্ট এখনও সমান ৩৬, শুধু গোল ব্যবধানে এগিয়ে কাতালানরা।