Site icon চ্যানেল আই অনলাইন

হৃদরোগ বাড়ার কারণ তুলে ধরলেন মালয়েশিয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে হৃদরোগের প্রকোপ বৃদ্ধির জন্য খাদ্যাভাস এবং জীবনযাপন পদ্ধতি সরাসরি প্রভাব ফেলছে বলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউটের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কুমারা গুরুপারান গানেসা।

রাজধানীর বনানীতে সিএম ইন্টারন্যাশনাল ইমিগ্রেশন সার্ভিস সেন্টারে দিনব্যাপী হৃদরোগ সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধনে এসে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথোপকথনে তিনি বলেন: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অতিরিক্ত কোলেস্টোরল যুক্ত খাবার এবং ধূমপান এই কয়েকটি কারণে বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে হৃদরোগের প্রকোপ বেশি।

অস্বাস্থ্যকর-অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এই রোগের আরেকটি কারণ জানিয়ে ডা. কুমারা বলেন: বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের মানুষ কাচ্চি বিরিয়ানির মতো তৈলাক্ত খাবার পছন্দ করে। শুধু বাংলাদেশ নয় মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনাইয়ের মতো দেশগুলোতেও খাদ্যাভাস প্রায় একই রকম।

‘এসব অঞ্চলের সংস্কৃতিগত মিল থাকায় খাদ্যাভাস-জীবনধারাতেও মিল আছে। দেশগুলোর মানুষ ভাতের প্রতি অতি নির্ভরশীল। গরুর মাংসের মতো রেড মিট (লাল মাংস) খাওয়ার পরিমাণ এই অঞ্চলের মানুষ কমাচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন: এরকম খাদ্যাভাস ও জীবনযাপনে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে শরীর চর্চা দরকার। কিন্তু বাস্তবতা বলছে বেশির ভাগ মানুষই অবহেলাবশত তা করে না এবং ব্যক্তিগত-পেশাগত চাপ তো আছেই।

বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে কম বয়সী হৃদরোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে ধূমপানের বদঅভ্যাসকে দায়ী করেছেন ডা. কুমারা।

এসব খাদ্যাভাস এবং জীবনযাপন করা ব্যক্তিরা হৃদরোগের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে আছে জানিয়ে তিনি বলেন: এক্ষেত্রে যতো দ্রুত সম্ভব হৃদরোগের চিকিৎসা করানো উচিৎ। দেরি হয়ে গেলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়ার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। আমার মতে বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ এটি।

হৃদরোগের ঝুঁকি মোকাবেলায় সর্বপ্রথমে জনসচেতনতায় জোর দিয়ে এই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন: স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন কী সেসম্পর্কে সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে। খাবারে তেল ব্যবহার কমাতেই হবে। এক্ষেত্রে পরিমিত সয়াবিন, পাম অয়েল, অলিভ অয়েল ব্যবহার করা ভালো। একবার ব্যবহৃত তেল দিয়ে আবার আর কিছু রান্না করা, ভাজা একেবারেই বন্ধ করতে হবে।

‘যেকোন ভাজা-পোড়া খাবারই আমরা নিষেধ করি। কাচ্চি বিরিয়ানি, খাসি-গরুর মাংসের লোভ কমাতে হবে।  রেড মিট তুলনামূলক অস্বাস্থ্যকর। মাংস খেলে মুরগির মাংসই বেছে নিতে হবে।  সবচেয়ে ভালো হচ্ছে মাছ খাওয়া। তরুণদের ধূমপান ছাড়তে হবে। এখানে এসে দেখলাম মাত্র ২২ বছর বয়সী তরুণ হৃদরোগে আক্রান্ত কারণ সে ধূমপায়ী।’

বাংলাদেশি হৃদরোগীদের উন্নত চিকিৎসার ঠিকানা হতে আগ্রহী মালয়েশিয়া
দিনব্যাপী এই কর্মসূচিতে এসে মালেয়েশিয়ার ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউটের (আইজেএন) আঞ্চলিক বিপণন ও মেডিকেল পর্যটন বিভাগের প্রধান আকিম আফেন্দি আহমেদ হার্টের বাইপাস ও রিং চিকিৎসায় মালেয়েশিয়ার সরকারি হাসপাতালে তুলনামুলক কম খরচের প্যাকেজ সুবিধার কথা তুলে ধরেন।

তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: মালয়েশিয়ায় সব হাসপাতালকে কঠোরভাবে সরকারি বিধিবিধান মেনে চলতে হয়। হাসপাতাল চাইলেই রোগীর কাছ থেকে অযৌক্তিক খরচ দাবি করতে পারে না। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডে বেসরকারি হাসপাতালগুলো তাদের ইচ্ছামত টাকা দাবি করতে পারে। কিন্তু মালয়েশিয়ায় সেটা করা যায় না।

‘দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে আমরা সরকারের আওতাধীন হাসপাতাল। আমাদের এজন্য দায়বদ্ধতা এবং জবাবদিহিতা আছে। আমাদের ব্যবসা শুধু টাকার জন্য নয় বরং সুলভে মানসম্পন্ন সঠিক সেবা দিয়ে আস্থা অর্জন করা।’

বর্তমানে প্রযুক্তির এই সময়ে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডের হাসপাতাল, চিকিৎসকরা ইন্টারনেটে রোগী দেখলেও আপাতত মালয়েশিয়া এই পদ্ধতিতে যাচ্ছে না।

এর কারণ হিসেবে আকিম বলেন: এখন প্রযুক্তির মাধ্যমে সরাসরি চিকিৎসক-রোগীর যোগাযোগ হচ্ছে। কিন্তু মালয়েশিয়া সরকার এটা এখনই করছে না কারণ এক্ষেত্রে যোগাযোগ ত্রুটি, চিকিৎসক-রোগীর ভুল বুঝাবুঝির ঝুঁকি রয়েছে।

এদেশের কোনো রোগী পরামর্শ এবং চিকিৎসার জন্য মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে।  এজন্য ঢাকার বনানী ১৩-সি সড়কের ৫২ নম্বর বাড়িতে ইন্টারন্যাশনাল ইমিগ্রেশন সার্ভিস সেন্টারে যোগাযোগ করার কথা জানান আইজেএন-এর আঞ্চলিক বিপণন ও মেডিকেল পর্যটন বিভাগের প্রধান।

Exit mobile version