আর কত হত্যার খবর শুনবো। লেখক ছাড়িয়ে প্রকাশক হত্যা শুরু হলো। এরপর হয়তো শুরু হবে পাঠক হত্যা। কেনো নাস্তিকতার বই পাঠ করবে তারা? চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে শেষ করে দাও তাদের। ওরা বলে বেড়াচ্ছে ইসলাম বুঝি শান্তির ধর্ম নয়, যুদ্ধের ধর্ম।
আইএসের এই হত্যাতত্ত্বের আদলে বাংলাদেশে সংযোজিত হলো ইসলাম চাপাতির ধর্ম! ধর্মান্ধরা চাপাতি হাতে যাকে তাকে কোপাবে এটাই বুঝি তাদের ধর্মের রীতি! এখন আর কারও প্রাণ নেয়াতে আজরাঈল কিংবা যমদূতের প্রয়োজন নেই। তারাই বুঝি সে দায়িত্ব পালন করবে।
ধর্মের এই অপব্যাখ্যার কে হবে ব্যাখ্যাদার? হরকাতুল জেহাদ, হিযবুত তাহরীর, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম প্রভৃতি নামে বেনামে আর কত সন্ত্রাসী সংগঠনের নাম শুনবো আমরা? সুশীল, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মানুষ গুলোই তাদের আক্রমণের লক্ষ্য বস্তু। আক্রান্ত হয়েছিলেন দাউদ হায়দার, কবি শামসুর রাহমান, আহমদ শরীফ, হুমায়ুন আজাদসহ আরও অনেকে। হত্যার হুমকি প্রাপ্ত হয়েছেন ও আজও হয়ে চলেছেন আরও কত কত জন। কথিত ধর্মদ্রোহিতা ও ধর্মান্ধ জঙ্গিত্ববাদের দ্বন্দ্বে ঝরছে কত প্রাণ।
মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কে তায়েফের ময়দানে কাফেররা মেরে রক্তাক্ত করেছিল। কিন্তু নবী তার অনুচরদের পাল্টা আঘাতের অনুমতি দেননি। অথচ তার অনুসারী দাবিদাররা সামান্য সমালোচনাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে জল্লাদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। আল্লাহর প্রিয় আশরাফুল মখলুকাতের রক্তে পৈশাচিক উল্লাস করে চলছে তারা। এখনও আমাদের দেশে ষাঁড়ের লড়াইয়ের প্রচলন রয়েছে। ষাঁড়দের গুঁতিয়ে মারমুখী করার রেওয়াজও প্রচলিত আছে। চাপাতিবাজ ধর্মান্ধরা হচ্ছে একেকজন ধর্মান্ধ ষাঁড়। উন্মত্ত ষাঁড়কে গুঁতো দিলে আক্রান্ত হওয়ারই সমূহ সম্ভাবনা। ধর্মান্ধ ষাঁড়দের গুঁতিয়ে কতিপয় ব্লগার যে আক্রমনের পরিবেশ ও পরিস্থিতি সৃষ্টি করে চলেছে সেটাও অনস্বীকার্য নয়।
সাহিত্য ও শিল্পের সৃজনশীলতা, উপমা, উৎপ্রেক্ষা বাদ দিয়ে কতিপয় অপরিপক্ব ব্লগার ধর্মান্ধ ষাঁড়দের গুঁতিয়ে একেক জন পাকা গুঁতারু হয়ে ওঠার চেষ্টা করে চলছে। উন্মত্ত ধর্মান্ধতা ও অপরিপক্ব ধর্মদ্রোহিতা দুটোই সমাজে অশান্তি আনয়ন করছে। ইসলাম শান্তির নয়, যুদ্ধের ধর্ম আইএসের এই কু-তত্ত্বটি বেশ প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশে। প্রগতিবাদী হতে হলে ধর্মের বিরোধিতা করতে হবে এটা যেমন ঠিক নয়; ধার্মিক হতে হলে প্রগতিবাদীদের বিনাশ করতে হবে এটাও ঠিক নয়। এই দুই বেঠিকের প্রায়োগিক ফায়সালা যত দ্রুত হবে ততই মঙ্গল।
ইসলাম যুদ্ধের ধর্ম তত্ত্বের চেয়েও ভয়াবহ নির্মম বাংলাদেশে চালু হওয়া চাপাতি তত্ত্ব। যুদ্ধ সামনাসামনি হয়। কে কার সাথে যুদ্ধ করছে তা উভয় পক্ষই বুঝতে পারে। যুদ্ধে কেউ হারবে, কেউ জিতবে, কেউ মরবে এসব খুবই স্বাভাবিক।
বাংলাদেশে যা ঘটছে তা চোরাগোপ্তা হামলা। যুদ্ধে পশ্চাদপসরন করলেই আক্রমণ যুদ্ধরীতি সম্মত হয় না। চাপাতি বাজরা চোরের মতো ঢুকে আক্রমণের লক্ষ্য ব্যক্তিকে একলা পেয়ে খুনী হয়ে ওঠে। এটা কোনো যুদ্ধরীতি সমর্থিত, সুস্থ, সভ্য ও শালীন সমাজের রীতি হতে পারে না।
উন্মত্ত ধর্মান্ধ ষাঁড়দের যদি প্রকাশ্য লড়াইয়ে নামিয়ে দেয়া যেতো গুঁতারু ব্লগারদের বিরুদ্ধে। সম্মুখ সমরে বোঝা যেতো কাদের সমর্থন ও শক্তি বেশী। দেখা যেতো কে হারে, কে জেতে কিংবা কে মরে। এরকমটি দেখার সুযোগ থাকলে তা আইএসের যুদ্ধ তত্ত্বের আদলে সংঘটিত হতো।
সম্মুখ সমরে যা হবার তা হতো। কিন্তু বাস্তবে তা হবার নয়। চাপাতি বাজরা চোরাগোপ্তা হামলার ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাকবে। চোরের মতো আরও আরও মায়েদের কোল খালি করে যাবে তারা। এসব আমরা আর কত দেখব। আর কত হত্যার বিচার চাইব। বিচার মানেই কারাদণ্ড, ফাঁসি অথবা মুক্তি।
আমরা আর হত্যাকারীদের বিচার চাই না, চাই সমূলে বিনাশ।